ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য তিনটি ধাপ সম্পর্কে জেনে নিন

index523

একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য মূলত তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে নিজের পছন্দসই একটি ডোমেইন নাম কেনা, এরপর তথ্যগুলো অনলাইনে আপলোড করে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য হোস্টিং কেনা এবং সর্বশেষ ব্রাউজার পড়তে পারে এমন ভাষায় কনটেন্টগুলোকে তুলে ধরা।’ জানালেন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান এবিএইচ ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী আবু হুরাইরা ফয়সাল। তিনি জানান, ওয়েবসাইট এখন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যাক্তির জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে দ্রুত সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে তথ্য পৌছে দেয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম এখন এটি। আর তাইতো প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ছোট প্রতিষ্ঠানেরও ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অনেক আগেই ওয়েবসাইট প্রথা শুরু হলেও আমাদের দেশ এ দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। তবে ইতিমধ্যে ছোট প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরির উদ্যোগও আমাদের দেশে শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডোমেইন নাম নির্বাচন

একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির ওয়েবসাইট তৈরিতে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো ডোমেইন নাম নির্বাচন করা। ‘ধরুণ আপনার অফিসে কারো আসা দরকার। এক্ষেত্রে উনাকে অবশ্যই আপনার অফিসের ঠিকানা জানতে হবে। নতুবা উনি আসতে পারবেন না। ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামও এই অফিসের ঠিকানার মতোই। কেউ যদি আপনার অফিসের তথ্যাবলি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে চায় তবে তাকে আপনার অফিসের ওয়েবসাইটটির ঠিকানা ধরে আসতে হবে। আর ওয়েবসাইটের এ ঠিকানাটিই মূলত আপনার ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ডোমেইন নাম। সাধারণত এটি প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে কিনে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।’ জানালেন ডোমেইন এবং হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইনক্রেডিবল ল্যাবের প্রধান নির্বাহী ইমতিয়াজ মাহমুদ। যেমন প্রিয়’র ওয়েবসাইটের ঠিকানা: priyo.com – এ নামটিই মূলত একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম। ডোমেইন নামের মধ্যেও বেশকিছু ভাগ রয়েছে। যেমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডোমেইন নাম সাধারণত ডটকম দিয়ে শেষ হয়(যেমন microsoft.com)। আবার সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট সাধারণত ডট ওআরজি (যেমন: un.org) দিয়ে শেষ হয়। তবে ইন্টারনেটে ডটকম ডোমেইন ই সবচেয়ে জনপ্রিয়।

ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, তবে ডোমেইন কেনার সময় ব্যবহারকারীর পছন্দই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডোমেইন নাম ছোট এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা উচিৎ। এতে করে ভিজিটররা প্রতিষ্ঠানের নাম মনে করেই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবে।

ওয়েব হোস্টিং

ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম কেনার পরেই যে বিষয়টি আসে সেটি হলো ওয়েব হোস্টিং। ওয়েব হোস্টিং মূলত অনলাইনে ব্যবহারকারীর কনটেন্ট আপলোড করার সার্ভার। এ সার্ভারেই ওয়েবসাইটের মালিককে বিভিন্ন তথ্য আপলোড করতে হয় এবং এখান থেকেই ভিজিটররা সেসব তথ্য দেখতে পারেন। ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামকে যদি একটি অফিসের ঠিকানা হিসাবে ধরা হয় তবে হোস্টিং হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের অফিস বিল্ডিং, রুম, আসবাব পত্র সহ অন্যান্য জিনিসপত্র। এক্ষেত্রে একজন ওয়েবসাইটের মালিক যত মেগাবাইট ওয়েব হোস্টিং কিনবেন তিনি কেবল ততটুকই তথ্য আপলোড করতে পারবেন। এটি অনেকটাই এরকম- একজন ব্যবসায়ী যতবড় গোডাউন ভাড়া নিচ্ছেন ততটুকুই কেবল মালামাল রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। ওয়েব হোস্টিং বিভিন্ন কোয়ালিটির হয়ে থাকে। আবু হুরাইরা ফয়সাল জানান, হোস্টিং সেবা প্রোভাইডারের ‘সার্ভার কোর’এবং অন্যান্য কনফিগারেশন-এর উপর নির্ভর করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের হোস্টিং কতটুকু মান সম্পন্ন।

ওয়েবসাইট ডিজাইন

ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম এবং হোস্টিং কেনার পর ওয়েবসাইট তৈরির পরবর্তী ধাপ হলো ওয়েবসাইটটি ডিজাইন করা। ব্যবহারকারীর রুচি অনুযায়ী সাধারণত ওয়েবসাইট ডিজাইন করে থাকেন ডিজাইনার-রা। আর যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড কালার আছে তারা সেসব রঙ্গেই রাঙ্গিয়ে থাকে ওয়েবসাইটগুলোকে। ওয়েবের লগো হিসাবে নিজেদের ব্র্যান্ড লগোই সাধারণত ব্যবহার করা হয় এসব ক্ষেত্রে। সব ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান সাধারণত এসব সাইট গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে থাকে। স্বাধীন (ফ্রিল্যান্স) ওয়েবসাইট ডেভেলপার ইউনুস হোসেন জানান, যারা কম বাজেটের মধ্যে ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তারা ওয়ার্ডপ্রেস এবং জুমলা সহ ওপেনসোর্স কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিএমএস ব্যবহার করতে পারেন। আর ওয়েবসাইট ডিজাইনের আগে অবশ্যই ডেভেলপারকে আপনার চাহিদাগুলো ভালোভাবে বলতে হবে। তাহলে ডেভেলপারই নিজ থেকে পছন্দ করে নিতে পারবে উপযুক্ত ওয়েবসাইট প্লাটফর্মটি।

সেবা দেয় যারা

ইন্টারনেটে ডোমেইন নাম নিয়ন্ত্রন করে ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইন নেমস এন্ড নাম্বারস বা আইসিএএনএন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন সাপেক্ষেই বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান ডোমেইন নাম নিবন্ধণ করতে পারে। এর মধ্যে গোড্যাডি, নেটওয়ার্ক সল্যুশন এবং নেমচিপ আমাদের দেশে সবচেয়ে আলোচিত। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যেকেউ অনলাইনে ডোমেইন কিনতে পারেন। ডোমেইন বিক্রি করার পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানগুলো হোস্টিং সেবাও প্রদান করে। তাই এদের কাছ থেকেই হোস্টিং নেয়া যেতে পারে। ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী এদের বিভিন্ন ধরণের হোস্টিং প্যাকেজ রয়েছে। তবে সরাসরি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনার চেয়ে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেই ডোমেইন হোস্টিং কেনার পরামর্শ অধিকাংশ ওয়েব ডেভেলপারের। তাদের মতে, কোন ধরণের সমস্যায় পড়লে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধান করার সুযোগ থাকেনা। একটি নির্দিষ্ট মাধ্যম দিয়েই কেবল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়, যা বেশ সময় সাপেক্ষ। অনেক সময় ওয়েবসাইটের মালিক এসব প্রতিষ্ঠানের সাপোর্ট টিমকে বোঝাতেই পারেন না ওয়েবসাইটটির প্রকৃত সমস্যা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেই বরং ভালো সেবা পাওয়া যায়। বাংলাদেশী অনেক প্রতিষ্ঠানই বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডোমেইন রিসেলার হিসাবে ডোমেইন নাম বিক্রি করে থাকে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এসব প্রতিষ্ঠানের হোস্টিং সেবাও রিসেলার হিসাবে বিক্রি করে। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই আবার যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে নিজস্ব সার্ভার রয়েছে। তবে যে প্রতিষ্ঠান থেকেই কিনুন না কেন, ইন্টারনেটে উক্ত প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা সংক্রান্ত তথ্য ও রিভিউ দেখে নিবেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন হোস্টিং ফোরামের পাশাপাশি এখন বাংলা ভাষায়ও হোস্টিং সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা করার ফোরাম রয়েছে। সেখানেও আলোচনা করে পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং কিনতে পারেন।

Leave a Reply