কালিজিরার পুষ্টিগুন

133

প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ খাবারের সঙ্গে ‘কালিজিরা’ গ্রহণ করে আসছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন যে কালিজিরার সব গুণ লুকিয়ে আছে এর তেলে।

সাধারণত আমরা খাবারের সঙ্গে মসলা হিসেবে অথবা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে কালিজিরা খেয়ে থাকি। কিন্তু এভাবে আমাদের স্বাস্থ্য কালিজিরার আসল গুণাবলি থেকে বঞ্চিত হয়। তাই কালিজিরা নয়, বরং কালিজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য নানাভাবে উপকারী।

কালিজিরার তেলে ১০০টিরও বেশি উপযোগী উপাদান আছে। এতে আছে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। এতে আরও আছে আমিষ, শর্করা ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি।

কালিজিরার বৈজ্ঞানিক নাম নাইজেলা সাতিভা। নাইজেলা সাতিভাকে আরবি ভাষায় বলা হয় হাব্বাত-উল-বারাকা (আশীর্বাদপুষ্ট বীজ) এবং ইংরেজিতে বলা হয় লাভ ইন দ্য মিস্ট।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করায় কালিজিরার অবদান অসামান্য এবং সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল জীবনে এর প্রভাব পড়ে আরও নানাভাবে। এটি দেহকে এর নিজস্ব প্রাকৃতিক নিয়মে সুস্থ করে তোলায় সহযোগিতা করে।
এই অতুলনীয় ভেষজের গুণাগুণ প্রায় কিংবদন্তির মতো এবং সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোয় চিকিৎসায় এর গুরুত্ব আস্তে আস্তে পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। প্রায় তিন হাজার বছর ধরে চলে আসা গল্পগাথায় যে কালিজিরার মহৌষধি গুণের কথা বলা হয়েছে, ৫০ বছরে সেই ভাষ্য অর্জন করেছে বৈজ্ঞানিকভাবে সম্মতি ও সম্মান।

শরীরের রোগ প্রতিরোধে কালিজিরার মতো এত সহজে এত কার্যকর আর কোনো প্রাকৃতিক উপাদান আছে বলে জানা যায়নি। উন্নত দেশগুলোয় বিভিন্ন কারণ, যেমন চাষাবাদ পদ্ধতির কারণে মাটি তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি হারায়, তাই শস্যের গুণাগুণ ধ্বংস হয়ে যায়, আর মানুষ শিকার হয় সেলুলার ম্যালনিউট্রেশনের। রান্নার পদ্ধতির কারণে খাবারের খাদ্যগুণ অনেকাংশেই নষ্ট হয়। পাশাপাশি আছে পরিশোধিত খাবার গ্রহণ ও দূষিত পরিবেশের প্রভাব। এসব কারণের মিলিত ফলাফল খাবারের প্রয়োজনীয় রস ও পুষ্টির অভাব।

কালিজিরার তেলের উপকার:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ইনসুলিন রোধ হ্রাস (এভাবে ডায়াবেটিস কমিয়ে রাখা), কাশি ও হাঁপানির উপশম, ্নৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হৃজ্জনিত সমস্যার আশঙ্কা হ্রাস, চুল পড়া হ্রাস, ত্বকের সুস্বাস্থ্য, মায়ের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি, মাংসপেশির ব্যথা কমাতে কালিজিরার তেল উপযোগী। কালিজিরার তেল গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করতে হয় না।

শিশুদের ঠাণ্ডা লাগায়ঃ
ছোট শিশুদের চট করে ঠান্ডা লেগে যায়। ঠান্ডার কারণে বুকে কফ জমে যাওয়া বা শ্বাসকষ্ট শিশুদের খুব ভোগায়। শিশুদের ঠান্ডার সমস্যায় কালিজিরা ও সমপরিমাণ সরিষা মিহি করে বেটে নিয়ে শিশুর মাথার তালু ও বুকে প্রলেপ দিন। দ্রুত সমস্যা দূর হবে।

দাঁত ব্যথায়ঃ

দাঁতে ছিদ্র হলে বা মাঢ়ির কোনো সমস্যা হলে দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা হয়। এই ব্যথা দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন কালিজিরা। কালিজিরার তেল দিতে পারেন দাঁতের ছিদ্রতে বা মাঢ়িতে। অথবা সামান্য কিছু কালিজিরা থেঁতো করে নিয়ে দাঁতের ছিদ্রতে দিন বা মাঢ়িতে প্রলেপ দিন। দাঁতের ব্যথা কিছুক্ষণের মধ্যেই কমে যাবে।

পোকামাকড়ের উপদ্রবেঃ

কালিজিরায় রয়েছে এমন উপাদান, যা পোকামাকড়রা সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে পিঁপড়া তাড়াতে কালিজিরা অসাধারণ। সুতি পাতলা কাপড়ে কালিজিরার ছোট ছোট পোটলা বানিয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিন। পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হবে। বিশেষ করে আলমারি বা ওয়ারড্রোবে কাপড়ের ফাঁকে ফাঁকে কালিজিরার পোটলা রেখে দিলে পোকামাকড় ও ফাঙ্গাসের হাত থেকে কাপড় রক্ষা পাবে।

গায়ের ব্যথাঃ

গায়ের ব্যথায় খুব ভালো কাজে দেয় কালিজিরার তেল। তেল হালকা গরম করে নিন। ব্যথার জায়গায় আলতো হাতে লাগান। মালিশ করবেন না। ব্যথা বেশি হলে দিনে অন্তত দু বার এভাবে কালিজিরার তেল ব্যবহার করুন।

সর্দি ও ঠাণ্ডাজনিত মাথাব্যথায়ঃ
ঠাণ্ডা লেগে সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যায় অনেকেরই। এ কারণে অনেকে শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথাতেও ভোগেন। কালিজিরা এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে খুব সহজেই। না, খেতে হবে না! সামান্য কালিজিরা হাতের তালুতে নিয়ে আঙুল দিয়ে ডলে নিন। এরপর পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে ছোট্ট পুটলি তৈরি করুন। এরপর এক নাক বন্ধ করে অন্য নাকে টানতে থাকুন। বন্ধ নাক খুলে যাবে। একই কাজ করুন মাথাব্যথাতেও। সাইনোসাইটিসের ব্যথাও এ কাজ করলে কমে যাবে।

গ্যাসের সমস্যাঃ

গ্যাসের কারণে বুকে জ্বালাপোড়া, পেটে ব্যথা বা পেট ফুলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ কালিজিরা ভালো করে ফুটিয়ে নিন। পানি ছেঁকে নিয়ে কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন। আরাম পাবেন।

Leave a Reply