ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিছু পরামর্শ

ডায়াবেটিসে ভুগছেন? তা হলে ডায়াবেটলজিস্ট এবং নিউট্রিশিয়ানিস্টদের পরামর্শ মতো এই ১৫টি ডায়াবেটিক ডায়েট টিপস মেনে চলুন। কয়েক ধাপ পেরোলেই ডায়াবেটিক তকমা লাগবে কিংবা একেবারে বর্ডারলাইনে রয়েছেন। আবার এমনটাও হতে পারে, বাড়িতে অনেকেরই ডায়াবেটিস রয়েছে। সে ক্ষেত্রেও খাওয়া-দাওয়ায় কিছু নিয়ম মানতে পারলে রোগটিকে দূরে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

মুলচন্দ মেডসিটির সঙ্গে যুক্ত ডায়াবেটলজিস্ট সঞ্জীব ভামবানির মতে, একজন ডায়াবেটিকের ডায়েটে বেশি ফাইবার যুক্ত খাবার, ক্রিম ছাড়া দুধ, বাটারমিল্ক, মরশুমি ফল আর তাজা শাক-সবজি থাকা উচিত। তবে সবটাই খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে।

সঞ্জীব আরও জানিয়েছেন, উপমহাদেশের খাবারের তালিকায় কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট আর প্রোটিনের আনুপাতিক হার হওয়া উচিত ৬০:২০:২০। এই সমতা বজায় রেখে একজন ডায়াবেটিস রোগী রোজ ১,৫০০-১,৮০০ ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারেন। সঙ্গে দুটো মৌসুমি ফল আর তিন রকমের সবজি থাকতেই হবে।

শুকনো ফল শরীরের পক্ষে ভালো হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের খাবার ডায়াবেটিকদের পক্ষে ক্ষতিকর। কারণ, এর মধ্যে থাকা ফ্রুক্টোজ রক্তে শর্করার মাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারে। শুকনো ফলের পরিবর্তে তাজা ফল বেশি করে খান। তবে শুকনো ফলের মধ্যে বাদাম খাওয়া যেতেই পারে। কেমন ডায়েট হওয়া উচিত মানুষের ডায়াবেটিস রোগীদের?

১. ১০০ মিলি জলে এক চা-চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সেই জল রোজ সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

২. সকালে খালি পেটে নুন, গোলমরিচ মেশানো টমেটোর রস খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

৩. ৬টি আমন্ড সারা রাত জলে ভিজিয়ে পরের দিন খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

ইন্ডিয়ান ডায়াটেটিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং পরিচালক রেখা শর্মার পরামর্শ- বাড়ি বা রেস্তোরাঁ যেখানেই খান, ন্যূনতম কিছু নিয়ম মানলে উপকার আপনারই-

১. রোজ দানা শস্য, ওটস, ছোলার আটা, মিলেটের মতো হাই ফাইবার যুক্ত খাবার তালিকায় কেউ পাস্তা বা নুডলস খেতে চাইলে সঙ্গে যেন সবজি বা অঙ্কুরিত শস্য থাকে।

২. কার্বোহাইড্রেট আর প্রোটিন সম পরিমাণে থাকে। দুধ ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই দিনে দু’বার দুধ খান।

৩. ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি- যেমন, কড়াইশুঁটি, বিনস, ব্রকোলি বা পালং শাক নিয়মিত খেতে হবে। এর সঙ্গে ডাল এবং অঙ্কুরিত সবজি খেতে পারলে আরও ভালো।

৪. ডায়েটে ডাল যেন অবশ্যই থাকে। কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ অন্যান্য শস্যের তুলনায় ডাল রক্তে গ্লুকোজের উপর কম প্রভাব ফেলে। ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৫. গুড ফ্যাট যেমন, ওমেগা ৩ এবং মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের পক্ষে উপকারী। তিসি তেল, ক্যানোলা অয়েল, বাদামের তেল আর তেল যুক্ত মাছে এই ধরনের গুড ফ্যাট পাওয়া যায়। এগুলি ট্রান্স ফ্যাট-ফ্রি এবং এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণও কম থাকে।

৬. ফাইবার সমৃদ্ধ ফল যেমন পেঁপে, আপেল, ন্যাসপাতি, কমলালেবু আর পেয়ারা খাওয়া উচিত। আম, কলা আর আঙুরে চিনির মাত্রা অনেক বেশি। তাই অন্য ফলের তুলনায় কম খাওয়াই ভালো। ৫ মিল প্যাটার্নে খান। অর্থাৎ অল্প অল্প করে পাঁচ বার খেলে সমস্যার সমাধান হবে।

একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে খেলে কিন্তু সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে। তাই বারে বারে অল্প পরিমাণে খেলে হাই বা লো-ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মিলের মাঝে ধোকলা, ফল, হাই ফাইবার কুকিজ, বাটারমিল্ক, টকদই, উপমা, পোহা খাওয়া যেতেই পারে। ব্লাড সুগারের রোগীর খাবারের তালিকায় সব সময় অল্প কার্বোহাইড্রেট, বেশি ফাইবার, পরিমিত প্রোটিন, ভিটামিন আর মিনারেলস রাখতে হবে। ফ্যাটি ফুড এড়িয়ে চলাই ভালো। কী করবেন না মিষ্টি বর্জন করুন। একান্তই মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে চাইলে তা যেন কৃত্রিম সুইটনার দিয়ে বানানো হয়। বেশি করে পানীয় গ্রহণ করুন, তবে অতিরিক্ত মদ্যপান চলবে না। আমিষ খাওয়া উচিত? আমিষাশী হলে সামুদ্রিক মাছ আর চিকেন ডায়েটে রাখুন। রেড মিট না-খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। যাঁদের হাই কোলেস্টেরল আছে তাঁরাও রেড মিট ও ডিমের কুসুম খাবেন না। ডায়াবেটিকরা সব সময় পরিমিত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট আর প্রোটিন খাদ্য তালিকায় রাখবেন। কারণ, পরিকল্পনা মাফিক এবং ভারসাম্য বজায় রেখে খেলে আখেরে লাভ আপনারই

Leave a Reply