আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, সময়ের পাতায় অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে কোনো কিছু নেই! আমরা সময়কে যে অতীত বর্তমান বা ভবিষ্যত হিসেবে দেখি তা প্রকৃতপক্ষে একধরনের বিভ্রম বা ইলিউশন! বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের ভাষায়: “The distinction between the past, present and future is only a stubbornly persistent illusion.”
তাহলে, সময় আসলে কি? বিজ্ঞানী নিউটনের মতে সময় ‘ধ্রুব’ বা ‘অপরিবর্তনীয়’ ক্ষণ, অর্থাত এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কোনায় সময়ের পরিবর্তন হবে সমান তালে। আরেক ভাবে বলা যায়: আমাদের পৃথিবীতে একটি ঘড়ির কাঁটা যে গতিতে আবর্তিত হয়, ঘড়িটিকে পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অন্য আরেকটি দ্রুত গতিতে ঘুর্ণয়নশীল গ্রহে নিয়ে গেলেও ঘড়িটির কাঁটা একই গতিতে আবর্তিত হবে। নিউটনের তত্ব অনুসারে বাহ্যিক কোনো বল, গতি, বা অবস্থা সময় প্রবাহের হারকে (Flow of time) প্রভাবিত করে না। উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সময়কে এভাবেই ভাবা হত।
তবে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সময় সম্পর্কে এই ধারণার পরিবর্তন করেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। গাণিতিক তত্বের (Special theory of relativity) মাধ্যমে তিনি দেখান যে সময় মূলত আপেক্ষিক, এবং সময় বা কাল স্থানের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে তিনি প্রমান করেন যে, সময় ধ্রুব নয়; বরং গতি এবং অভিকর্ষ বল (Gravity) সময়কে প্রভাবিত করে। অতি দ্রুতগতির কোনো যানে একটি ঘড়িকে তুলে দিলে ওই ঘড়ির কাঁটা স্থির অবস্থায় থাকা একটি ঘড়ির কাঁটার চেয়ে ধীরে চলবে, অর্থাত গতিশীল ঘড়িটির সময় স্লথ (Slow) হয়ে যাবে। একই ভাবে একটা ঘড়িকে যদি পৃথিবীর চেয়ে ১০ গুন বা তার চেয়েও বড় কোনো গ্রহে রাখা হয় তাহলেও ওই ঘড়িটি পৃথিবীতে রাখা ঘড়িটি থেকে ধীরে চলবে। গতি বা অভিকর্ষ বল কর্তিক সময়ের এই আপেক্ষিক স্লথকরণ প্রক্রিকে বলে টাইম ডাইলেশন (Time dilation)।
এখন প্রশ্ন হলো: কেন এই টাইম ডাইলেশন হয়? আসলে প্রকৃতিতে টাইম ডাইলেশনের মূল কারণ হচ্ছে আলোর গতির ধ্রুবতা। এই মহাবিশ্বে যেকোনো অবস্থাতেই আলোর গতি অপরিবর্তনীয় বা ধ্রুব (প্রায় ৩০০,০০০ কি.মি./সেকেন্ড)। ধরাযাক, স্থির অবস্থায় টেবিলের উপর একটি টর্চলাইট জ্বলছে। টর্চলাইটটির আলোক বিম থেকে যে ফোটন কণা (আলোর কণা) নির্গত হচ্ছে তার গতি হবে ৩০০,০০০ কি.মি./সেকেন্ড; অর্থাত, আলোর একটি ফোটন কনা এক সেকেন্ডে অতিক্রম করছে ৩০০,০০০ কি.মি দূরত্ব। এখন, যদি টর্চটিকে ১০০ কি.মি/সেকেন্ড গতিতে আলোক বিম যেদিকে সেদিক বরাবর চালনা করা হয় তাহলে গাণিতিক নিয়ম অনুযায়ী ফোটন কনার (আলোর) গতি হবে টর্চের এবং ফোটন কনার গতির যোগফলের সমান, তথা ৩০০,১০০ কি.মি/সেকেন্ড। অর্থাত, এক্ষেত্রে টর্চটি যখন গতিশীল, আলোর ফোটন কনা তখন প্রকৃত পক্ষে এক সেকেন্ডে অতিক্রম করবে ৩০০,১০০ কি.মি! কিন্তু ফোটন কনা কোনো অবস্থাতেই এক সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কি.মি এর বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে না (এটা প্রকৃতির নিয়ম)। আর এই অসামঞ্জস্যতা দূর করতেই সময়কে স্লথ করার প্রয়োজন হয়ে পরে; কেননা আমরা জানি একটি বস্তুর গতি বা বেগ হচ্ছে এক সেকেন্ডে ওই বস্তুটির অতিক্রান্ত দূরত্ব (বেগ = দূরত্ব/সময়)। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আলোর গতি ৩০০,০০০ কি.মি/সেকেন্ড রাখতে ঘড়ির সময়কে স্লথ করে ১ সেকেন্ড = ১.০০০৩৩৩ সেকেন্ড করতে হবে (যেখানে প্রতি সেকেন্ডে টাইম ডাইলেশন = ০.০০০৩৩৩ সেকেন্ড)। সে ক্ষেত্রে, সমীকরণটি দাড়াবে এই রকম: বেগ = ৩০০,১০০০ কি.মি/১.০০০৩৩৩ সেকেন্ড = ৩০০,০০০ কি.মি./সেকেন্ড। এভাবেই সময় প্রবাহের হার কে স্লথ করে দিয়ে আলোর গতিকে ধ্রুব করে রাখে আমাদের প্রকৃতি (Law of Nature) – অন্তত গাণিতিক ভাবে এটাই সত্য! টর্চ লাইটটির গতি যত বাড়ানো হবে সময় তত স্লথ হতে থাকবে।
আইনস্টাইনের যুগান্তকারী স্পেশাল থিওরি অফ রিলেটিভিটির সূত্রপাত কিন্তু উপরোল্লেখিত অতি সাধারণ গাণিতিক চিন্তাভাবনা থেকেই! পরবর্তিতে আইনস্টাইন ত্বরণ বা গতির সাথে অভিকর্ষ বল বা গ্র্যাভিটির এক যোগসূত্র আবিস্কার করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি প্রবর্তন করেন বিখ্যাত ফিল্ড থিওরি ‘জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ তত্বের – যা আমাদেরকে মহাবিশ্বের গতি-প্রকৃতি এবং সৃষ্টি রহস্য বুঝতে সহয়তা করে।
এখন দেখা যাক, টাইম ডাইলেশন কি শুধুই একটি গাণিতিক সমাধান নাকি বাস্তবেও এমন ঘটে? টাইম ডাইলেশন বোঝার জন্য প্রথমেই একটা হাইপোথেটিক্যাল ঘটনার অবতারণা করা যাক। ধরাযাক, জাফর এবং জামিল কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসছে ২০১৫ নববর্ষ উজ্জাপন করতে। তাদের প্ল্যান তারা ঠিক ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টা ১ মিনিটে কেক কাটবে এবং শাহবাগে আয়োজিত আতশবাজির খেলা উপভোগ করে নতুন বছরকে বরণ করে নিবে। তারা দুজনে আলাদা ভাবে মোটরসাইকেলে যাত্রা শুরু করেছে রাত ১০ টায়। ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই ঘন্টা। তবে পথে ঘটে গেল এক আজব ঘটনা! একদল দুষ্ট এলিয়েন ভুল বশত: জাফরকে তুলে নিল তাদের স্পেসশিপে! স্পেসশিপটি চলছে আলোর গতির ৯৯% গতিতে (২৯৬,৭৯৪ কি.মি./সেকেন্ড)। তবে জামিলের পথে কোনো সমস্যা না হওয়ায় সে ঠিক দুই ঘন্টা পর ঢাকা এসে পৌঁছে, এবং কথা মত ১২:০১ মিনিটে কেক কেটে নুতন বছরকে স্বাগতম জানায়। ওদিকে স্পেসশিপে এলিয়েনরা দুই ঘন্টা জেরা করার পর বুঝতে পারে যে তারা ভুল লোককে তুলে এনেছে! ভুল বুঝতে পেরে তারা অনুতপ্ত হয় এবং জাফরকে তার অনুরোধে শাহবাগে নামিয়ে দেয়। জাফরের হাত ঘড়িতে তখন ঠিক রাত ১২ টা বেজে ১ মিনিট। শাহবাগে নেমে জাফর যেন আকাশ থেকে পরে! কেননা তখন যে চারদিকে মধ্য দুপুরের রৌদ্র খা খা করছে! সে আবার তার ঘড়ির দিকে তাকায়। জাফরের ঘড়িতে আসলেই তখন রাত ১২:০১। জাফরের তাহলে কি কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে? এদিক ওদিক তাকাতেই জাফর দেখতে পায় জামিলকে। জামিলের ঘড়িতে তখন দুপুর ২ টা বেজে ১ মিনিট। দু’ জনের ঘড়ির সময়ের পার্থক্য হয়ে গেছে চৌদ্দ ঘন্টা!
জামিল চৌদ্দ ঘন্টা আগেই কেক কেটে ২০১৫ কে বরণ করে নিয়েছে; আর জাফর যখন নতুন বছরটিকে বরণ করার জন্য কেক কাটতে চাচ্ছে, তখন নতুন বছরটি পৃথিবীর সবার কাছে ১৪ ঘন্টার পুরনো হয়ে গেছে! জাফরের জীবন থেকে ২০১৫ এর পয়লা জানুয়ারীর অর্ধেকটা দিন হারিয়ে গেছে! তবে প্রশ্ন হচ্ছে: এ ক্ষেত্রে কার ঘড়িটি সময় ঠিক দিচ্ছে? জাফরের নাকি জামিলের ঘড়ি? আসলে জাফরের দিক থেকে বিচার করলে জাফরের ঘড়ি ঠিক সময় দিচ্ছে। আবার জামিলের দিক থেকে বিচার করলে জামিলের ঘড়ি যে সময় দিচ্ছে, তাও সঠিক। ঘটনা যা ঘটেছে, তা হলো জাফর আলোর গতির কাছা কাছি গতিতে দুই ঘন্টা ভ্রমন করাতে তার ঘড়ি জামিলের ঘড়ির চেয়ে ১৪ ঘন্টা স্লথ (Slow) হয়ে গেছে। জাফর যদি আর কখনো এই পৃথিবীতে ফিরে না আসতো সে এটা কখনোই জানত না যে জামিলের থেকে তার ঘড়ি ধীরে চলছে। অথবা জামিল ও কোনো দিন জানত না যে তার ঘড়ি জাফরের চেয়ে দ্রুত চলেছে। সময়ের আপেক্ষিকতার কারনেই এমনটি হচ্ছে। আর এই আপেক্ষিকতার পেছনে কাজ করছে ‘টাইম ডাইলেশন’ নামক প্রকৃতির এক অমোঘ নিয়ম! উপরের ঘটনাটি আইনস্টাইনের ‘টুইন প্যারাডক্স’ এর আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে। উত্সাহীগণ এই লিংক থেকে টাইম ডাইলেশন সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে পারেন।
‘টাইম ডাইলেশন’ ব্যাপারটি অত্যন্ত রোমাঞ্চকর হলেও আমরা কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনে তা সচরাচর অনুধাবন করতে পারি না। তার কারণ হচ্ছে, প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের চলার আপেক্ষিক গতি আলোর গতির তুলনায় নিতান্তই কম বা নেগ্লিজিবল। টাইম ডাইলেশনের জন্য দরকার আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে ভ্রমন করা – বর্তমানে আমাদের জন্য যা অসম্ভব। এযাবত আমাদের কাছে যে সবচয়ে শক্তিশালী রকেট আছে তার গতি সর্বোচ্চ ১.৯ কি.মি/সেকেন্ড (৬,৯০০ কি.মি/ঘন্টা), যা আলোর গতির প্রায় দেড় লক্ষ ভাগের এক ভাগ মাত্র! এ গতিতে কাওকে দশ বছর পৃথিবীর চারপাশে ঘুরিয়ে আনলে তার সময় পৃথিবীর সময় থেকে ১৪ মিনিট পিছিয়ে যাবে। দশ বছরে ১৪ মিনিট পিছিয়ে যাওয়া খুব একটা বড় কিছু নয়। কিন্তু ধরা যাক, জমজ নবজাত সহোদরের একজনকে পৃথিবীতে রাখা হলো আর আরেকজনকে একটা রকেটে করে আলোর গতির কাছাকাছা গতিতে দুই বছর মহাশূন্যে ঘুরিয়ে আবার পৃথিবীতে নিয়ে আসা হলো। এক্ষেত্রে মহাশূন্যে ঘুরে আশা শিশুটির বয়স হবে ২ বছর (অর্থাত যেটুকু সময় সে মহাশূন্যে ভ্রমন করেছে), আর পৃথিবীতে থাকা তার জমজ ভাইয়ের বয়স হবে ৩০ বছর! – এই ঘটনাটাই আইনস্টাইনের ‘টুইন প্যারাডক্স’ নামে পরিচিত। গতি আমাদের এইজিং (Aging) হ্রাস করে এবং রাখে চির তরুণ! – অবিশ্বাস্য, তাইনা?
টাইম ডাইলেশনের ঘটনাটি পরীক্ষা দ্বারা প্রমান করা হয়েছে অনেক বার। প্রথম পরীক্ষা করা হয় মিউ-মেজন (Mu-meson) এর উপর। মিউ-মেজন হচ্ছে এক ধরেনের অতি ক্ষুদ্র সাব-অ্যাটমিক পার্টিকেল যা মহাকর্ষীয় তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে অহরহ এবং আলোর বেগে ছুটে আসছে আমাদের পৃথিবীতে। মিউ-মেজন কনিকাটির স্থায়িত্ব খুবই কম। পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে এই মিউ-মেজন কনিকাটি যখন স্থির অবস্থায় থাকে তখন খুব দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু কনিকাটি যখন আলোর গতিতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে তখন তা ধ্বংস হয় দেরিতে। অর্থাত, কনিকাটির গতি এর অন্তর্নিহিত ঘড়ি ধীর করে দেয় আর যার ফলশ্রুতিতে কনিকাটির জীবনের স্থায়িত্ব (Life span) প্রলম্বিত হয়। পরীক্ষাটি বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করুন।
সময়ের পাতায় অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে কোনো কিছু নেই – এটা কিভাবে সম্ভব? হুম, বিজ্ঞানের ভাষায় এটাও সম্ভব! ‘বর্তমান’ বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো ঠিক এখন যা ঘটছে তাই; ‘অতীত’ হচ্ছে যা ঘটে গেছে অথবা আমরা যা দেখে ফেলেছি, আর ‘ভবিষ্যত’ হচ্ছে যা এখনো ঘটেনি অথবা যা আমরা এখনো দেখিনি। বর্তমান কালে অবস্থান করে আমরা আমাদের ‘অতীত’ অথবা ‘ভবিষ্যত’ দেখতে পারি না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের থেকে অনেক দূরে, অন্য কোনো গ্রহে, আমাদের আরেক বন্ধু কিন্তু ইচ্ছে করলেই আমাদের ‘অতীত’ এবং ‘ভবিষ্যত’ সবই দেখতে পারে!
কেমন করে? চলুন একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
ধরাযাক, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখে আপনি বাংলাদেশের ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে চিন্তিত এবং নিরাশাগ্রস্থ! আপনি এই নিরাশার কথা আপনার এক এলিয়েন বন্ধুকে জানালেন, যে থাকে ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোনো এক গ্রহে! আপনার হতাশার কথা শুনে সে আপনার দিকে ঘন্টায় ৯.৫ মাইল বেগে সাইকেল চালিয়ে আসতে লাগলো! আপনার অভিমুখে আসার সময় আপনার এলিয়েন বন্ধু দেখতে পাবে আজ থেকে ১৪১ বছর পরে বাংলাদেশের ভবিষ্যত! সে দেখবে ২১৫৬ সালের বাংলাদেশ, যেখানে কোনো দুর্নীতি নেই, আছে শুধু সৎ মানুষ; দেশের ক্ষমতাভার সৎ এবং যোগ্য নেতাদের হাতে। দেশে পরিবেশ দূষণ নেই, নেই কোনো যানজট। দেশের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা চলছে দ্রুত গতির ইলেকট্রিক এবং ম্যাগনেটিক ট্রেন এর মাধ্যমে। বিদ্যুত তৈরী হচ্ছে পারমানবিক চুল্লিতে। রাস্তায় চলছে হাইড্রজেন ফুয়েল চালিত গাড়ি। আপনার দৌহিত্র মনোনীত হয়েছে ২১৫৬ সালের পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারের জন্য! আপনার বন্ধু উত্সাহী হয়ে হয়তবা আপনার ‘অতীত’ও দেখতে চাইল। আর তা দেখার জন্য আপনার এলিয়েন বন্ধু তখন আপনার বিপরীত দিকে সাইকেল চালাতে শুরু করলো। সে তখন দেখতে পাবে আপনার দাদা পরদাদা গণ কারা ছিলেন এবং কি করতেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি!
এই বর্ণনাটি অবাস্তব কোনো ফ্যান্টাসি মনে হলেও বৈজ্ঞানিক এবং গাণিতিক ভাবে সম্পূর্ণ শুদ্ধ (আরো বিস্তারিত বুঝতে পড়তে পারেন পদার্থবিদ ব্রায়ান গ্রীন এর একটি আর্টিকেল এই লিঙ্কে)। আপনার কাছে যা বর্তমান অতীত বা ভবিষ্যত, অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। আপনার যে দৌহিত্র ভবিষ্যতে জন্ম নিবে, আপনি তা না দেখলেও আপনার এলিনে বন্ধু কিন্তু তা ঠিকই দেখছে! একই ভাবে আপনি হয়ত আপনার পরদাদা কে দেখেননি, কিন্তু আপনার এলিয়েন বন্ধু তা দেখছে! আর এতসব ঘটছে, যখন আপনারা দুজনই একই ‘বর্তমান’ সময়ে অবস্থান করছে! পার্থক্য শুধু আপনারা একে অপর থেকে অনেক অনেক দূরে অবস্থান করছেন, আর একজন স্থির বসে আছেন এবং অন্যদিকে আরেকজন আপেক্ষিক ভাবে গতিশীল। তার মানে, সময়ের কালে বা পাতায় অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে কিছু নেই, সব ‘সময়’ বা ‘ক্ষণ’ এবং ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বিদ্যমান আছে সব সময়ই। আমরা শুধু এই ঘটনা গুলোর মধ্যে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। যাকে আমরা নতুন ঘটনা ভাবছি তা মোটেও নতুন নয়, ওটা আগেই ঘটে গেছে, আমরা শুধু তা অবলোকন করছি নতুন ভাবে। বাস্তবতাকে পেছনে ফেলে আমরা উচ্ছসিত হচ্ছি আমাদের ইলিউশনে (Illusion)। অবশ্য এতে যে আনন্দ আমরা পাচ্ছি তাতেই ধন্য হচ্ছে মানব জীবন। সময় কি এবং তা কিভাবে প্রবাহিত হয় এর উপর একটা সুন্দর ভিডিও লিংক দিলাম এখানে। আগ্রহীগণ দেখতে পারেন। সবার সময় সুন্দর কাটুক এই কামনায় আজ এই পর্যন্তই।