একজন মানুষের মাথা কেটে জুড়ে দেওয়া হলো আরেক মানুষের শরীরে! এখন এ ব্যাপারটি শুনতে হরর মুভির কাহিনী মনে হলেও ২০১৭ সাল নাগাদ তা বাস্তব হয়ে উঠতে পারে।
এমন ঘটনা সর্বপ্রথম জানা যায় ৫০ এর দশকে। তখন সার্জন ভ্লাদিমির ডেমিকভ একটি কুকুরের মাথা ও সামনের পা গুলো প্রতিস্থাপন করেন আরেকটি কুকুরের শরীরে। এরপর আবার আরেকটি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তিনি দুই মাথাওয়ালা কুকুর তৈরির চেষ্টা করেন। বলাই বাহুল্য, এসব প্রতিস্থাপিত প্রাণীর কোনোটিই কয়েকদিনের বেশী বাঁচেনি। এরপর ১৯৭০ সালে ডক্টর রবার্ট হোয়াইট এক বানরের মাথা প্রতিস্থাপনে সফল হন। কিন্তু তিনি অস্ত্রোপচারের সময়ে স্পাইনাল কর্ড জোড়া লাগানোর কথা ভাবেননি। এ কারণে বানরটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে, সে নিজে থেকে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতেও সক্ষম ছিলো না। এর পরে এ ক্ষেত্রে আর তেমন গবেষণা হয়নি, কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন অনেক উন্নতি হয়েছে যার ফলে সফলভাবে মস্তক প্রতিস্থাপন করা সম্ভব অন্য প্রাণীতে এমনকি মানুষেও। এই মতামত সারজিও ক্যানাভেরো নামের এক ডাক্তারের।
তার মতে, মস্তক প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা যায় (যেমন শরীরের সাথে মাথা খাপ না খাওয়া) এসব সমস্যা বর্তমানে এড়িয়ে চলা সম্ভব। কিন্তু এ কাজটি করা সম্ভব বলেই যে তা করা হবে এমনটা নয়। এমন প্রতিস্থাপনের আগে বেশ কিছু নৈতিক জটিলতা পার হতে হবে। কিন্তু এর ফলে উপকার হতে পারে এমন সব মানুষের যাদের সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যান্সার অথবা দুর্ঘটনায় যাদের শরীর অচল হয়ে পড়েছে। এ কারণে ক্যানাভেরো একে বাস্তবায়নের জন্য একটি গবেষক দল গঠন এবং এই বছরের শেষের দিকে একটি প্রজেক্ট ঘোষণা করা হতে পারে।
কি করে মস্তক প্রতিস্থাপন করা সম্ভব? প্রথমে জীবিত ব্যক্তির মাথা এবং একজন মৃত ব্যক্তির শরীর শীতল করে আনতে হবে যাতে কোষগুলো জীবিত থাকে। এরপর গলা থেকে মাথাটি কেটে নেওয়া হবে এবং রক্তনালীগুলোকে একগুচ্ছ টিউবের সাথে জুড়ে দেওয়া হবে। স্পাইনাল কর্ড যত্ন করে কেটে ফেলার পর শরীরের সাথে মাথাকে জুড়ে দেওয়া হবে এবং স্পাইনাল কর্ড জোড়া দেবার কাজটিই সবচাইতে বেশী জটিল। স্পাইনাল কর্ড জোড়া দেবার জন্য ক্যানাভেরো পলিইথিলিন গ্লাইকল নামের এক ধরণের পদার্থ ব্যবহারের প্রস্তাব দেন যাতে চর্বিযুক্ত কোষপর্দা সংযুক্ত হতে পারে। সবশেষে ওই ব্যক্তির রক্তনালী এবং পেশীগুলো জুড়ে দিতে হবে এবং তাকে কোমায় রাখতে হবে মাসখানেকের মতো। এরপর ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে তিনি এই শরীর ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। যদিও সম্ভাবনা আছে যে শরীর ওই মাথাটিকে গ্রহণ নাও করতে পারে, ইমিউনোরিপ্রেসর জাতীয় ওষুধগুলো দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
বেশিরভাগ গবেষকেরা মনে করেন এই প্রক্রিয়াটি সফল হবার সম্ভাবনা খুবই কম। তাছাড়া শুধুমাত্র সৌন্দর্য বাড়াতেও অনেকে এমন সার্জারির শরণাপন্ন হতে পারেন। ফলে এমন প্রতিস্থাপন যদি বৈধ করাও হয় তবেও এর ওপর শক্ত বিধিনিষেধ জারি করাটা হবে জরুরি