আরেক ‘পৃথিবীর’ সন্ধান

মার্কিন মহাকাশ সংস্থার (নাসা) একদল জ্যোতির্বিদ দাবি করছেন, পৃথিবীর মতো আরেকটি গ্রহের খোঁজ মিলেছে। এটি নিজ নক্ষত্রকে যতটুকু দূরে থেকে প্রদক্ষিণ করছে, তা আমাদের পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্বের প্রায় সমান। খবর রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসির।
নাসার ওই বিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগতের বাইরে পৃথিবী-সদৃশ গ্রহটির সন্ধান পাওয়ার কথা গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। নতুন চিহ্নিত ওই গ্রহের নাম ফোরফিফটিটুবি। এটি পৃথিবীর চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি বড়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকৃতি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যাচাই করে মনে হচ্ছে ওই গ্রহে পাথর, আগ্নেয়গিরি, মহাসাগর ও ‘সূর্যালোক’ থাকতে পারে। তবে সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর দ্বিগুণ এবং বছর হয় ৩৮৫ দিনে। গ্রহটির অবস্থান ১ হাজার ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে সিগনাস নক্ষত্রমণ্ডলে। এটি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে তা আমাদের সূর্যের সমান হলেও বেশি পুরোনো। এটির বয়স প্রায় ৬০০ কোটি বছর। কিন্তু আমাদের সূর্যটি ৪৬০ কোটি বছরের পুরোনো। নাসার কেপলার মহাকাশ দূরবীক্ষণযন্ত্রের (স্পেস টেলিস্কোপ) সাহায্যে ওই পৃথিবী-সদৃশ গ্রহ শনাক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন দ্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল সাময়িকীতে প্রকাশিত হবে।
জ্যোতির্বিদেরা মনে করেন, এ আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর বাইরে প্রাণীর বসবাসযোগ্য স্থানের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। নাসার বিজ্ঞানী জন জেনকিনস বলেন, এ পর্যন্ত পৃথিবীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া গেছে নতুন চিহ্নিত গ্রহটির। এটি নিজ নক্ষত্রের কাছাকাছি বসবাসযোগ্য অঞ্চলে ৬০০ কোটি বছর পার করেছে—এমন ইঙ্গিত অবশ্যই বেশ আগ্রহ জাগিয়ে তোলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘পৃথিবীর মতো’ গ্রহটি নিজস্ব নক্ষত্র থেকে যে দূরত্বে রয়েছে, তাতে সেখানকার পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা তরল পানি ধারণ করার উপযোগী হতে পারে। আর পরিবেশের এ ধরনের অবস্থায় প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। কেপলার টেলিস্কোপের যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে। এ প্রকল্পের বিজ্ঞানী জেফ কগলিন বলেন, পৃথিবী-সদৃশ এবং সম-আকৃতির সূর্যের পাশে প্রদক্ষিণরত একটি গ্রহের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি তাঁদের একটি বড় সাফল্য।
নতুন চিহ্নিত ওই গ্রহের নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে ১৫০ কোটি বছরের পুরোনো, আকারে ৪ শতাংশ বড় এবং উজ্জ্বলতাও ১০ শতাংশ বেশি। তবে ১ হাজার ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বলে সেখানে এই পৃথিবী থেকে শিগগিরই কোনো নভোযান পাঠানোর সম্ভাবনা কম। তবু বিজ্ঞানীরা গ্রহটি নিয়ে আরও গবেষণার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সুজান আইগ্রেইন বলেন, কেপলার-ফোরফিফটিটুবির যেসব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এটিই এ পর্যন্ত তাঁর জানামতে সবচেয়ে বেশি পৃথিবী-সদৃশ গ্রহ।
কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০টি গ্রহের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪ হাজার ৭০০টি মহাজাগতিক কাঠামোর খোঁজ পেয়েছে, যেগুলো গ্রহ হতেও পারে। এর মধ্যে ১১টি পৃথিবীর কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের এবং সেগুলোর নয়টি সৃর্য-সদৃশ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। কেপলার টেলিস্কোপ সরাসরি গ্রহগুলোকে দেখতে পায় না। কিন্তু সেগুলো থেকে নিঃসৃত আলোর ছোটখাটো পরিবর্তন পরিমাপ করে বিভিন্ন জটিল কম্পিউটার প্রোগ্রামে বিশ্লেষণ এবং বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শনাক্ত করার চেষ্টা করে।

Leave a Reply