চকলেটের জন্মকথা

ছেলে বুড়ো এমন কেই নাই যে চকলেট পছন্দ করে না। কিন্তু তোমরা কি জানো এই মজাদার চকলেট কেমন করে এলো? চকলেট আমরা সবাই খাই কিন্তু এর ইতিহাস অনেকেই জানিনা। বন্ধুরা চলো জেনে নেয়া যাক মজাদার চকলেটের আদ্যপান্ত।

চকলেট মধ্য আমেরিকার মায়া-অ্যাজটেক সভ্যতার অবদান। এটা যেমন অস্বীকার করতে পারবো না তেমনি এটি সাধারণ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার মূল অবদান ইউরোপীয় কিছু গবেষকের।

hhhhhhhhhhhhhhges

মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনে কাকাও গাছ জন্মায়। লাতিন ভাষায় এই গাছকে বলা হয় থিওব্রোমা কাকাও। এই কাকাও গাছের কোকো বীজ থেকেই তৈরি হয় চকলেটের মূল উপাদান।

মায়া এবং অ্যাজটেকরা কোকো বীজ আগুনে ঝলসিয়ে গুঁড়ো করে তা গরম পানিতে ফেলে তার সঙ্গে মরিচ, মাঠ-বাদাম, মশলা ও ভেষজ উদ্ভিদের শিকড়-পাতা মিশিয়ে যে পানীয় তৈরি করত তার নাম ছিল ‘শোকোলাটল’ (xocolatl)।

থিওব্রোমা কাকাও গাছের বীজ থেকেই তৈরি হত ‘শোকোলাটল’। তবে সাধারণ মানুষ কিন্তু শোকোলাটল পান করতো না । কেবল অভিজাত এবং যোদ্ধাদের শোকোলাটল পান করার অধিকার ছিল। যাহোক। ‘শোকোলাটল’ শব্দটি স্প্যানিশ ভাষার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় চলে আসে।

বিখ্যাত পরিব্রাজক কলম্বাস কোকো বীজ ইউরোপে নিয়ে আসেন। কিন্তু প্রখ্যাত স্প্যানিশ বিজেতা হারনান কোরটেসই ইউরোপে কোকো বীজ মানুষের মাঝে পরিচয় করে দেন।

একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। তা হলো অ্যাজটেক রাজা মনটেযুম্মা হারনান কোরটেসকে দেবতা ভেবেছিলেন এবং কোরটেসকে ভোজ সভায় শোকোলাটল দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। হারনানের শোকোলাটল পান করে ভালো লাগেনি। শোকোলাটল পান করে হারনান বলেছিলেন, ‘শুকরের পানীয়’!

১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে স্প্যানিশ বিজেতা হারনান কোরটেস জাহাজ ভরে কোকো বীজ নিয়ে মেক্সিকো থেকে স্পেন ফিরে আসেন। শোকোলাটল নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করলেন তিনি। শোকোলাটল পানীয় থেকে মরিচ বাদ দিয়ে চিনি ভ্যানিলা এবং সুগন্ধী মেশান এবং রাজা পঞ্চম চার্লসকে তা পরিবেশন করেন। রাজা পঞ্চম চার্লস নাকি নতুন উদ্ভাবিত  এই পানীয়টি পান করে অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন। তাতে স্প্যানিশ রাজ দরবারে রীতিমতো হই-হুল্লোড় পড়ে যায়।

স্পেনের অভিজাত মহলে চকলেট পানীয়টির কদর তখন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। সেই সময় স্প্যানিশ রাজকুমারী মারিয়া থেরেসার সঙ্গে ফরাসি রাজা চতুদর্শ লুই বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। হবু ফরাসি বরকে স্প্যানিশ রাজকুমারী মারিয়া থেরেসার একটি নকশাদার বাক্সে কোকো বীজ উপহার উপহার পাঠান। তাতে ফরাসি রাজপরিবার চকলেটের স্বাদ পেল।

সপ্তদশ শতকের মধ্যে ইউরোপ জুড়ে চকলেট পান করা ফ্যাশনে পরিণত হয়। ইউরোপের লোকে বিশ্বাস করতো চকলেটে একই সঙ্গে পুষ্টি, ঔষধি ও প্রশান্তিদায়ক গুণ রয়েছে। তবে তরলটি মূল্যবান বলেই কেবল ধনী অভিজাতের শ্রেণী তা পান করতে পারতো। অবশ্য ওই শতকেরই শেষের দিকে ব্যাপকহারে চকলেট উৎপাদন শুরু হয় এবং সেটি সাধারণ ক্রেতার কেনার ক্ষমতার মধ্যে চলে আসে। তবে পানীয় হিসেবে সলিড চকলেট বা বর্তমানে আমরা যেমন দেখি তা তখনও আবিষ্কৃত হয়নি।

উনিশ শতকে সলিড চকলেট আবিষ্কৃত হয়। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে একজন ওলন্দাজ (হল্যান্ডের অধিবাসী) রসায়নবিদ তরল কোকে থেকে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ প্রাকৃতিক ফ্যাট (অর্থাৎ কোকো মাখন) অপসারিত করবার প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। স্বল্প পরিমাণ ফ্যাটের কোকোর সঙ্গে ক্ষারীয় লবণ মিশালেন। এতে আগেকার তেতো স্বাদ দূর হলো। এটি ‘ডাচ কোকো’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

আধুনিক চকলেটের জনক হলেন জোসেফ ফ্রে। ইনি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে ডাচ কোকোর সঙ্গে অপসারিত কোকো মাখন মিশিয়ে প্রথম চকলেট পেস্ট তৈরি করেন।

ইউরোপের সাধারণ মানুষের কাছে চকলেট পৌঁছতে আর তেমন দেরি হয়নি। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্যাডভেরি’ নামে একটি ছোট কোম্পানি চকলেট ক্যান্ডির বক্স ইংল্যান্ডে বাজারজাত করতে থাকে। এর কয়েক বছর পরই মিল্ক চকলেট বাজারে নিয়ে আসে নেসলে।

এরপর চকলেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যায়। মার্কিনীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চকলেট শিল্পে বিনিয়োগকৃত বাৎসরিক পুঁজির পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার এবং একজন মার্কিনী প্রতি মাসে কমপক্ষে হাফপাউন্ড চকলেট খেয়ে ফেলে।

বর্তমানে ইউরোপ বা আমেরিকা নয় সাড়া বিশ্বে পৌঁছে গেছে চকলেট।

Leave a Reply