ব্লগ ডিজাইনের টিপস – যা আপনার ক্লাইন্ট পেতে সহায়ক হবে

index522

আপনি কি করবেন যখন আপনার একজন ভবিষ্যৎ ক্লাইন্ট আপনাকে মিটিংয়ে আমন্ত্রন জানাবেন? আপনি কি অপ্রস্তুতভাবে যাবেন? মাথার চুল, কাপড় এলোমেলো, মুখে সিগারেট লাগিয়ে? আমি বলবো, “না”। আপনি এভাবে কখনই যাবেন না। কারণ আপনি অবশ্যই চাইবেন আপনার ভবিষ্যৎ ক্লাইন্টের সাথে একটি ভাল প্লেসে মিট করতে। তার সাথে স্মার্টলি এবং ব্যবসায়িক ভাবভঙ্গিতেই আলোচনা করতে।

ঠিক একইভাবে যখন একজন ভবিষ্যৎ ক্লাইন্ট আপনার ব্লগে ভিসিট করে, এটা অনেকটা মনে হতে পারে মিটিংয়ের জন্য আপনি তাদেরকে আপনার অফিসে আমন্ত্রন জানিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল, আপনি ব্লগটি কি প্রফেশনাল ভাবে ডিজাইন করা? আপনি ব্লগটি কি ব্যবসায়ের জন্য প্রস্তুত?

যদি প্রস্তুত না হয়ে থাকে তবে, আপনি অনেক ক্লাইন্ট হারাচ্ছেন প্রতিদিনই! এমন অনেক ক্লাইন্ট আছেন যারা আপনাকে কাজ দিবেন বলেই সার্চ করছেন কিন্তু আপনার ব্লগের অবস্থা দেখেই তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করছে না। কারণ, আপনার ব্লগটিই আপনার অফিসের মত। আপনি অফিসই যদি রুচি সম্পন্ন করতে না পারেন তবে কাজ কতটা ভাল দিতে পারবেন সেটাই ক্লাইন্টের সন্দেহ! ঠিক এই একটি কারণের আপনার এবং আপনার ফ্রীলান্সার অন্য বন্ধুটির ক্লাইন্ট পাওয়া এবং না পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য।

কিন্তু আপনার কি করা উচিৎ বুঝে উঠতে পারছেন না? এই পোস্টির মাধ্যমে আমি ৮টি ব্যাসিক ব্লগ লেআউট ডিজাইন টিপস যা ক্লাইন্ট পেতে প্রতিটি ফ্রীলান্সারদের ব্লগে ইমপ্লিমেন্ট করা উচিৎঃ

হেডার গ্রাফিকস

আপনার ব্লগের হেডারটি আপনার ব্লগের সদরদরজা বলা চলে। এটি অবশ্যই স্পষ্ট এবং সাজানো হতে হবে। হেডারটি নিয়েই আপনাকে বুঝিয়ে দিতে হবে ব্লগে কোন বিষয়ে আলোচনা হয় এবং আপনি কোন বিষয়ে এক্সপার্ট। অনেক ভিসিটরই আপনার ব্লগে তাদের মতামত বা আপনার কনটেন্ট পড়বে কিনা তা আপনার ব্লগের উপরিভাগ দেখেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিন্ধান্ত নেয়। তাই মনে রাখতে হবে, আপানার ব্লগের হেডার আপনার ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার জন্য অনেক ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্ট! অবশ্যই… অবশ্যই মনে রাখবেন, ইন্টারনেট জগতটি সম্পূর্ণ অব্যক্তিক একটি নেটওয়ার্ক। কাউকে দেখে বুঝার উপায় নাই যে সে আসলেই কোন বাস্তবিক কোন মানব/মানবী কিনা! তাই আপনি যে আসলেই একজন সত্যিকারের মানুষ সেটি আপনার ফ্রীলান্সিং দক্ষতা দিয়ে প্রমাণ দিতে হবে

একটি মাত্র সাইডবার

অনেক ব্লগেই একাধিক (দুটি, এমনকি তিনটি) সাইডবার দেখা যায়। মনে রাখবেন, আপনার সাইডবারে শুধুমাত্র ইম্পরট্যান্ট জিনিসগুলোই রাখা হবে- যা দেখে আপনার ক্লাইন্ট আপনাকে হায়ার করবে। একাধিক সাইডবার থাকলে আপনার ব্লগের মেইন কনটেন্ট কোনটি সেটিই আপনার ভবিষ্যৎ ক্লাইন্ট খুঁজে পাবে না। ফলে, আপনিও তার সাথে কন্ট্রাকে যেতে পারছেন না!

সাইডবারের জন্য সবচেয়ে ভাল এবং আদর্শ স্থান হল ব্লগের ডানদিক। কারণ, আপনার ব্লগের পাঠকরা সবচেয়ে উপরে বাম দিকে থেকে আপনার ব্লগকে পড়তে শুরু করে এবং বাম দিক থেকে ডানে চলে আসে। তাই আপনার ব্লগের মেইন কনটেন্ট অবশ্যই নামদিকে রাখা উচিৎ। অনেকেই ব্লগে কোন সাইডবারই রাখেন না। এটি ঠিক নয় কারণ, পাঠককে তখন লম্বা লাইন ধরে ব্লগ পোস্ট পড়ে যেতে হবে যা অনেকের কাছেই বিরক্তকর! এজন্যই সংবাদপত্রের পোস্টগুলোর পাশেই একটি করে সাইডবার থাকে।

অতিরিক্ত উইজেট সরিয়ে ফেলুন

আপনার সাইডবারে সেটআপ হয়ে গেলে এবার আসুন সাইডবার উইজেট সেকশনে। অনেক ব্লগেই দেখা যায়, অপ্রয়োজনীয় অনেক উইজেট যেমন: টুইটার স্ট্রিম, সাম্প্রতিক মন্তব্য, অন্য ব্লগের ফিড, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি দিয়ে সাইডবার ভরপুর। এমনটি করা সম্পূর্ণ অপেশাদারিত্বের সামিল। এমনসব অপ্রয়োজনীয় উইজেটের জায়গায় আপনি “Follow me on Twitter!” “Download this free report!” “Check out all my Facebook fans!” এসব উইজেট স্থাপন করতে পারেন।

একজন ফ্রীলান্সার হিসেবে আপনি সবসময় আপনার লক্ষের দিকে খেয়াল রাখবেন। কারণ, আপনার ব্লগ পড়ে সেখানে থেকে কিছু ক্রয় করলে সরাসরি আপনাকেই কল দিবে। যদি এমনটি হয়, তবে কি দরকার অতিরিক্ত কিছু করে ব্লগের ইন্টারফেসের বারোটা বাজানোর?

পোস্টের শুরুতেই ইমেজের ব্যবহার

ব্লগ পোস্টে শুধুমাত্র টেক্সট দিয়েই সব কিছু আলোচনা করলে সেটা আপনার ব্লগের জন্য খুব বেশি ভাল দেখাবে না। আপনার ব্লগের পোস্টকে ভিজুয়্যালি আকর্ষণীয় করতে চাইলে প্রতিটি পোস্টে এটলিস্ট এটি করে ইমেজের ব্যবহার করতেই হবে। টেক্সট এবং ইমেজের সমন্বয়ে একটি ব্লগ পোস্ট পাঠকের কাছে মজার এবং ইম্পরট্যান্ট হয়ে উঠে। এছাড়া সব কিছুই লিখে বুঝানোর চাইতে ক্ষেত্র বিশেষে ইমেজের ব্যবহার আপনার টেক্সটের উপস্থিতিকে অনেকাংশে কমিয়ে দিবে। যা আপনাকে নিজেকেই অনেক কমফোর্ট দিবে।

সাদামাটা ন্যাভিগেশন

ডজন খানিক লিস্ট সম্বলিত যেকোনো ন্যাভিগেশন মেন্যুই অত্যান্ত জটিল হবে এবং তা পাঠককে তার প্রয়োজন নির্বাচন করছে দ্বিধাদণ্ডের মধ্যে ফেলে দিবে। আর সেই লিস্ট গুলো যদি থাকে ড্রপডাউন হিসেবে তবে আরও বিরক্তিকর। অনেকেই হয়তো বুঝাবেনই না আপনার সেই লিস্টগুলোর অধিনে আরও কিছু সাবপেজ আছে।

অনেক ব্লগে দেখা যায় দুটি বা তিনটি ন্যাভিগেশন মেন্যু থাকে, যা পাঠককে আরও দিধায় ফেলে দেয়। আপনার প্রথম কাজ হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট লিঙ্কগুলোকে মূল ন্যাভিগেশনে স্থাপন করা। কোন লিস্ট আইটেমের নাম বড় হলে সেগুলোকে ছোট করে দেখানো এবং যেগুলো কম ইম্পরট্যান্ট সেগুলোকে সাইডবারে রেফারেন্স বা রিসোর্স লিঙ্ক হিসেবে দেখানো।

অল্প কিছু অথবা বিজ্ঞাপনবিহীন ব্লগ

আপনি অনেক সময়ই আপনার ব্লগ থেকে সরাসরি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ পাবেন যদি আপনার ব্লগ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এটি একদিকে যেমন আপনার আয়ের উৎস অন্যদিকে আপনার ক্লাইন্টকেও আপনার ব্যাপারে অনেক ইম্পরট্যান্স তৈরি করে দিবে। তবে, একই সাথে অনেকগুলো বিজ্ঞাপন বসানো কখনও কখনও আপনার ব্লগের পাঠক এবং ক্লাইন্টকে বিরক্তিতে ফেলতে পারে।

বিজ্ঞাপন দেয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হতে পারে – সাবপেজ, সাইডবার এবং হোম পেজে কোন ধরণের বিজ্ঞাপন না রেখে পোস্ট পেজে বিজ্ঞাপন রাখতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হয়, বিজ্ঞাপন না রাখা। আপনার বিজ্ঞাপন থেকে যদি কোন আয় বা ইম্প্রেশন না থাকে তাহলে সেটি আপনার যতটা না ভাল ফলাফল দিবে তার চেয়ে খারাপটাই বেশি প্রভাব ফেলবে। তাই প্রয়োজন না থাকলে ব্লগকে বিজ্ঞাপন মুক্ত রাখুন।

বড় এবং পরিস্কার ফন্ট ব্যবহার করুন

যদি আপনার ব্লগে ১০ অথবা ১২ পিক্সেল সাইজের ফন্ট থাকে তবে সেটির সাইজকে বাড়িয়ে ১৪ পিক্সেলে উন্নিত করুন। তাহলে আপনার ব্লগের পাঠকরা ব্লগ পড়তে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে। ফন্ট স্টাইলের দিকেও নজর দিতে হবে সাইজের আগেই, এমন কোন স্টাইল ব্যাবহার করা ঠিক হবে না যা আপনার পাঠককে বুঝতে অসুবিধায় ফেলবে। বাংলা ফন্ট হিসেবে ব্লগে “SolaimanLipi” অথবা “Siyam Rupali” এবং ইংরেজি ফন্ট হিসেবে “Tahoma”, “Arial”, “Ubuntu”, “Verdana” ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। ইংরেজি সাইটে Open Sans খুব সুন্দর একটা ফন্ট, ব্যাবহার করতে পারেন।

ব্লগে “Hire Me!” পেজ সংযুক্ত করুন

যদি আপনি নিজের ব্লগের “Hire Me!” পেজ সংযুক্ত না করে থাকেন তবে কেউই জানবে না আপনি একজন প্রফেশনাল ফ্রীলান্সার। তাই আপনার ব্লগে অবশ্যই প্রোফেসনাল সাইন হিসেবে “Hire Me!” পেজ সংযুক্ত করুন, যাতে কেউ সরাসরি আপনাকে হায়ার করতে পারে।

কারণ হিসেবে আরও বলা যায়, আপনার যদি আলাদা ফ্রীলান্স ব্যাবসায়িক সাইট না থাকে তবে এই ব্লগই হবে আপনার এবং ক্লাইন্টের জন্য মিট করার একমাত্র কেন্দ্রস্থল। “Hire Me!” পেজে সাথে আপনার কাজের সিম্পল, এমন কোন বড় কোম্পানির সাইটের লিঙ্ক শেয়ার করুন যা আপনি নিজের ডিজাইন/প্রমোট করেছেন। এতে আপনার কাজের পরিধি সম্পর্কে অন্য ক্লাইন্ট স্পষ্ট ধারণা পাবেন।

আবার আপনার আলাদা ফ্রীলান্স সাইট থাকলে সেখানে আপনার পূর্ণ যোগাযোগ করা মত তথ্য রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও যেন তার আপনাকে খুঁজে পায় সেই প্রোফাইলগুলোও শেয়ার করুন। মনে রাখবেন, আপনার কমিউনিকেশন স্কিল যতবেশি দক্ষ এবং বিস্তৃত হবে, আপনার নেটওয়ার্ক তত বেশি শক্তিশালী হবে এবং আপনি লাইফটাইম কাজের জগতে প্রবেশ করবেন!

Leave a Reply