সান বার্ন,সান ট্যান,সান স্ক্রীন এবং SPF এর খুঁটিনাটি জেনে নিন”

গ্রীষ্মের তুমুল দাবদাহেও যেন সূয্যিমামা এতটুকুও ক্লান্ত হয়নি। তাই রোদের দাপটও কমেনি একটুও। আর যত বেশি রোদ,আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা তত বেশি হুমকির সম্মুখীন। রোদের আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকের বিপুল ক্ষিতি সাধন করে থাকে। ত্বকের কালো ভাব তো আছেই সেই সাথে সান বার্ন ও সান ট্যানেরও কবলে পড়তে হয়। অনেকের মধ্যেই একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে সান বার্ন ও সান ট্যান একই। কিন্তু আসলে দুটি সম্পূর্ণ দুই জিনিস। চলুন জেনে নেওয়া যাক তাদের পরিচয়-

ট্যানিং একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি-আপনার দেহে প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে মেলানিন,যা আপনার ত্বককে কালো করে দেয়। ট্যান হচ্ছে ত্বকের প্রাকৃতিক পিগমেন্টেশন;যা আস্তে আস্তে দেহের ভিতর বিস্তার লাভ করে এবং এটা হচ্ছে সান বার্নের ক্ষয়- ক্ষতি থেকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা।

অন্যদিকে সান বার্ন হচ্ছে একরকম ক্ষতি; এর ফলে ত্বকে লাল রঙের যে ক্ষতভাব দেখা যায় তা হচ্ছে মূলত রক্ত প্রবাহের আধিক্য,যা দেহের মাধ্যমে প্রেরিত হয়ে ত্বকের উপরিভাগে চলে আসে আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্যে ।

কিভাবে সূর্য রশ্মি ট্যান সৃষ্টি করে থাকে?

অনেকেরই মনে হয়তো এ প্রশ্ন ঘুরছে যে কেমন করে এই ট্যানিংটা হয়ে থাকে।এবার চলুন তাই জেনে নেই।

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই রোদে যাওয়া মাত্রই ট্যানিং শুরু হয়। আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি দেহের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে ত্বক তা শুষে নেয় এবং দেহের DNA ভেঙ্গে দিতে থাকে। ফলে দেহের সুরক্ষার্থে সেখান থেকে মেলানিন তৈরি হতে থাকে আর ত্বকের রং কালো থেকে আরো কালো হয়ে যায়। যত বেশি রোদে থাকা হয় তত বেশি মেলানিনি তৈরি হয় তথা সান ট্যান হয়। সান স্ক্রীন,ছাতা ,স্কার্ফ এবং বড় টুপি ব্যবহারের মাধ্যমে এর তীব্রতা কমানো সম্ভব।

আলট্রা-ভায়োলেট (UV) রশ্মির প্রকারভেদ :
আমাদের পৃথিবীতে এ রশ্মি তিন ভাবে প্রবেশ করে। ইনফ্রারেড (তাপ),দৃশ্যমান আলো এবং আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির মধ্যমে। তন্মধ্যে আলট্রা-ভায়োলেট (UV) রশ্মি তিন প্রকারের-

UVA (৩১৫-৪০০ nm) এটা কালো আলো নামেও পরিচিত,যা খুব দ্রুত ট্যানিং এ সাহায্য করে। অতি মাত্রায় এ রশ্মি শরীরে প্রবেশ করলে স্কীন ক্যান্সারের আশংকা থাকে।

UVB (২৮০-৩১৫ nm) এটি সান বার্নের কাজ করে থাকে। অতি মাত্রায় এ রশ্মি শরীরে প্রবেশ করলে ‘মেলানমা’ বা মেচতা হয়ে থাকে।

UVC (১০০-২৮০ nm) এ রশ্মি বায়ুর মাধ্যমে শুদ্ধ হয় এবং আমাদের কাছে পৌছুতে পারে না।

সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (SPF ):

এটি এমন এক ফ্যাক্টর যা অতিরিক্ত সূর্য রশ্মির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। যে দেশে রোদের তীব্রতা যত বেশি তত বেশি SPF এর সান ব্লক বা সান স্ক্রীন ব্যবহার করা উচিত। যেমন- কোন সান স্ক্রীন ক্রীম বা লোশনের গায়ে SPF-১৫ লেখা থাকার মানে হচ্ছে এটি আপনার নিজস্ব ত্বকের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি সুরক্ষা দেবে মানে এটি ব্যবহারের পর যদি আপনি ১৫০ মিনিটের মত বাইরে থাকেন তবে এটা আপনাকে রোদের প্রকোপ থেকে রক্ষা করবে। তাই আপনি যত বেশি সময় রোদে থাকবেন তত বেশি SPF এর সান স্ক্রীন বাছাই করবেন।

আপনার জন্য কত SPF দরকার তা জানতে এ সহজ সূত্রটি কাজে লাগাতে পারেন- SPF এর মানX১০= বাইরে অবস্থানের মিনিট।

উদাহরণ স্বরূপ আপনাকে ৪-৫ ঘণ্টা বাইরে অবস্থান করতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনি ২৪০-৩০০ মিনিটের মত বাইরে থাকবেন। তাই আপনাকে SPF-৩০ নির্ধারণ করলেই হচ্ছে(৩০X১০=৩০০), এভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনরায় ব্যবহার করতে পারেন,যত বেশি সময় থাকবেন তার উপর ভিত্তি করে।

কি কি থাকা চাই আপনার সান স্ক্রীনে ?

সান স্ক্রীন কেনার সময় কিছু ব্যপার অবশ্যই মাথায় রাখবেন। খেয়াল রাখবেন এটি যেন আপনাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত হয়। ভালো ব্র্যান্ডের সান স্ক্রীন ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়,নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। নিম্ন লিখিত শব্দ গুলো যেন অবশ্যই আপনার সান স্ক্রীনে থাকে সে ব্যপারে নিশ্চিত হোন-

-broad spectrum uva-uvb
-আপনার জন্য উপযোগী SPF
-তেল মুক্ত
-সুগন্ধী মুক্ত
-ওয়াটার ও সোয়েট প্রুফ
-ডার্মাটোলোজিকালি টেষ্টেড

ব্যবহার বিধি :

সান স্ক্রীনে SPF যাই থাকুক না কেন রোদে বের হওয়ার অন্তত ২০-৩০ মিনিট আগে এটি লাগিয়ে নেবেন। মনে রাখবেন কখনোই রোদে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে সান স্ক্রীন লাগাবেন না ,এতে ত্বক আরো বেশি পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই বাইরে যাওয়ার আধ ঘণ্টা আগেই এর কাজটি সেরে নিন। যাদেরকে অনেকক্ষণ ধরে রোদের মাঝে কাজ করতে হয় কিংবা বাড়ির বাইরে থাকতে হয় তাহলে ৩-৪ ঘণ্টা পর পর মুখ এবং রোদের সংস্পর্শে থাকে সে জায়গা গুলোতে পুনরায় সানস্ক্রীন লাগিয়ে নিন।

রোদ আপনার ত্বকের অনেক বড় শত্রু। এটি শুধু আপনার ত্বক কালোই করে না,ত্বকের নানা ধরণের রোগ ও সৃষ্টি করে। এমনকি ক্যান্সারের জন্য ও দায়ী এ রোদ বা আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি। তাই সঠিক জ্ঞান ও পরিচর্যাই পারে আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে।

Leave a Reply