আচার বানানোর উৎসব। শহরের ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও মায়েরা ঠিকই সময় করে নেন মজাদার আমের আচার বানানোর। সারাবছর সংরক্ষণ করেও খাওয়া হয় এই আচার। মজাদার আমের ১০ পদের আচার রেসিপি একসাথে –
মজাদার আমের ১০ পদের আচার রেসিপি:
১) আমের ঝাল আঁচার
প্রণালী:
আম খোসাসহ ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ১ টেবিল চামচ লবণ মাখিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি নিংড়ে নিতে হবে। অল্প হলুদ, লবণ মাখিয়ে এক দিন রোদে দিতে হবে। কড়াইতে তেল গরম হলে আস্ত পাঁচফোড়ন ছাড়তে হবে।
পাঁচফোড়ন ভাজা সুগন্ধ বের হলে রসুন বাটা, আদা কুচি দিয়ে ১ মিনিট নাড়তে হবে। মরিচ, হলুদ, লবণ ও সামান্য সিরকা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে আম দিয়ে নাড়তে হবে।
আম আধা সেদ্ধ হলে বাকি সিরকা, চিনি, সরিষা বাটা, কাঁচা মরিচ, রসুন কোয়া দিয়ে । আরও ১৫ মিনিট অল্প আঁচে নাড়তে হবে ভাজা পাঁচফোড়ন গুঁড়ো দিয়ে ২ মিনিট নেড়ে আচার চুলা থেকে নামাতে হবে। আচার ঠাণ্ডা হলে কাচের বয়ামে রেখে দিন।
উপকরণঃ
আম ১ কেজি, সিরকা ১ কাপ, সরিষার তেল দেড় কাপ, সরিষা বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, মরিচ বাটা ১ টেবিল।
চামচআদা কুচি ১ টেবিল চামচ, পাঁচফোড়ন গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, আস্ত পাঁচফোড়ন আধা চা চামচ, লবণ ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ টে চামচ, রসুন কোয়া ১৬টি, কাঁচামরিচ ১০টি, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ।
২) টক-ঝাল-মিষ্টি আমের আচার
উপকরণঃ
কাঁচা আম- ১ কেজি, সিরকা- আধা কাপ, সরিষার তেল- এক কাপ, রসুন বাটা- দুই চা-চামচ, আদা বাটা- দুই চা-চামচ, হলুদ গুড়া- দুই চা-চামচ, চিনি- তিন টেবিল-চামচ, লবণ- পরিমাণমতো।
মসলার জন্য:
মেথি গুঁড়া- এক চা-চামচ, জিরা গুঁড়া- দুই চা-চামচ, মৌরি গুঁড়া- এক চা-চামচ। রাঁধুনি গুঁড়া- দুই চা-চামচ, সরষে বাটা- তিন টেবিল-চামচ, শুকনা মরিচ গুঁড়া- দুই টেবিল-চামচ, কালো জিরা গুঁড়া- এক চা-চামচ।
প্রণালী:
খোসাসহ কাঁচা আম টুকরো করে লবণ দিয়ে মেখে একরাত রেখে দিতে হবে। পরের দিন ধুয়ে আদা, হলুদ, রসুন মাখিয়ে কিছুক্ষণ রোদে রাখুন।
এরপর সসপ্যানে আধা কাপ তেল দিয়ে আমগুলো নাড়া-চাড়া করতে থাকুন, গলে গেলে নামিয়ে ফেলুন।
অন্য একটি সসপ্যানে বাকি তেল দিয়ে চিনিটা গলিয়ে ফেলুন।
কম আঁচে চিনি গলে গেলে সব মসলা দিয়ে (মৌরি,মেথি গুঁড়া ছাড়া) আম কষিয়ে নিতে হবে। আম গলে গেলে মৌরি গুঁড়া, মেথি গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
৩) আম-রসুনের আচার
উপকরণ:
খোসা ছাড়া কাঁচা আমের টুকরা- দুই কাপ, সরিষার তেল- এক কাপ, রসুন ছেঁচা- এক কাপ, মেথি- এক টেবিল-চামচ, মৌরি- এক টেবিল-চামচ, জিরা- এক টেবিল-চামচ, কালো জিরা- দুই চা-চামচ, সিরকা- আধা কাপ, হলুদ গুঁড়া- দুই চা-চামচ, শুকনা মরিচ- ১০-১২টি, চিনি- দুই টেবিল-চামচ, লবণ- পরিমাণমতো।
প্রণালী:
আমের টুকরো গুলোতে লবণ মাখিয়ে একরাত রেখে দিতে হবে। পরের দিন ধুয়ে কয়েক ঘণ্টা রোদে দিতে হবে।
রেসিপির সব মসলা মিহি করে বেটে নিতে হবে। এরপর চুলায় সসপ্যানে তেল দিয়ে বসাতে হবে। তেল গরম হলে রসুন দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়িয়ে, তারপর বাটা মসলা দিয়ে নাড়তে হবে। তারপর আম দিয়ে নাড়িয়ে নিতে হবে।
কিছুক্ষণ রান্না করার পর আম নরম হলে, চিনি দিয়ে নাড়িয়ে নামাতে হবে। এরপর আচার ঠাণ্ডা হলে বোতলে ভরে, বোতলের মুখ পর্যন্ত তেল দিয়ে ঢাকতে হবে। এরপর কয়েকদিন রোদে দিতে হবে।
৪) আম-পেঁয়াজের ঝুরি আচার
উপকরণ:
কাঁচা আমের ঝুরি- এক কাপ, পেঁয়াজ কুচি- এক কাপ, জিরা গুঁড়া- দুই চা-চামচ, কালো জিরা গুঁড়া- আধা চা-চামচ, সরষে গুঁড়া-এক টেবিল-চামচ, মরিচ গুঁড়া- দুই চা-চামচ, সরিষার তেল- আধা কাপ, লবণ- পরিমাণ মতো।
প্রণালী:
আমের ঝুরি এবং পেঁয়াজের কুচি আলাদাভাবে একদিন রোদে ভালোভাবে শুঁকিয়ে নিতে হবে। তারপরের দিন বাকি সব উপকরণগুলি দিয়ে, ভালোভাবে হাত দিয়ে মাখিয়ে বোতলে ভরে কয়েক দিন রোদে দিতে হবে।
৫) আমের নোনতা আচার
উপকরণ:
আমের টুকরো ৪ কাপ, লবণ ২ চামচ, কালোজিরার গুঁড়া ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৩টা, মৌরি গুঁড়া আধা চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, পাঁচফোড়ন ১ চা- চামচ, সরষের তেল ২ কাপ।
প্রণালী:
আমের খোসা ফেলে লম্বা টুকরো করে লবণ পানিতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পানি ঝরিয়ে এতে হলুদ ও প্রয়োজনমতো লবণ দিয়ে কড়া রোদে কয়েক ঘণ্টা রেখে মৌরি গুঁড়া ও কালোজিরার গুঁড়া দিয়ে আবার রোদে দিন।
শুকনা নরম আম বোতলে ঢুকিয়ে নিন।
গরম তেলে পাঁচফোড়ন ভেজে তেল ও পাঁচফোড়ন আমের বোতলে ঢেলে দিয়ে কয়েক দিন বোতলের মুখে পাতলা কাপড়ে বেঁধে রোদে দিন।
৬) খোসাসহ আমের আচার
উপকরণ:
আম ১০টা, সরষে বাটা ২ চামচ, পাঁচফোড়ন বাটা ১ চামচ, সিরকা আধা কাপ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ
স্বাদমতো, চিনি ১ কাপ, তেজপাতা ২টা, শুকনা মরিচ ৩টা, সরষের তেল ১ কাপ।
প্রণালী:
আম খোসাসহ টুকরো করে হলুদ ও লবণ মাখিয়ে ৮-১০ ঘণ্টা রোদে দিন। এবার হলুদ, মরিচ, সরষে, পাঁচফোড়ন ও অর্ধেক সিরকা আমের সঙ্গে মিশিয়ে আবার রোদে দিন।
শুকিয়ে এলে বাকি সিরকা, চিনি, তেজপাতা ও শুকনা মরিচ দিয়ে বোতলে ঢুকিয়ে রোদে দিন। তেল ভালোভাবে গরম করে ঠাণ্ডা হলে আচারের বোতলে ঢেলে কয়েক সপ্তাহ রোদে দিন।
৭) আমের মোরব্বা
উপকরণ:
আম ১০টা, চিনি ২ কাপ, পানি ১ কাপ, লবণ আধা চা-চামচ, এলাচ ৩টা, দারচিনি ২ টুকরো, তেজপাতা ২টা, চুন ১ চা-চামচ।
প্রণালী:
আমের খোসা ফেলে দুই টুকরো করে নিন। এবার টুথপিক দিয়ে আমের টুকরো ভালোভাবে ছিদ্র করে নিন।
চুনের পানিতে আম ৭-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। আম তুলে পরিষ্কার পানিতে কয়েকবার ধুয়ে নিন। এবার চিনির সিরায় সব উপকরণ দিয়ে ফুটে উঠলে আম ছেড়ে দিন। অল্প আঁচে রাখুন। আম নরম হলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে বোতলে ঢুকিয়ে রাখুন।
৮) কাশ্মিরি আচার
উপকরণ:
আম ৫ কেজি, চিনি ৩ কেজি, ভিনিগার ১ বোতল (৬৫০ মি.লি.), শুকনামরিচ ২৪, ২৫টি, আদাকুচি ৬ টেবিল-চামচ, লবণ স্বাদ মতো।
প্রণালী:
আম ছিলে ধুয়ে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর কিউব করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। শুকনামরিচ কাঁচি দিয়ে চিকন করে কেটে দানা বাদ দিন। আদা চিকন করে কুচি করুন।
তারপর চুলায় হাঁড়িতে চিনি ও ভিনিগার দিয়ে সব বসান। যদি আচারে লাল লাল ভাব আনতে চান তবে চিনি কিছুটা কমিয়ে খেজুরের গুড় দিতে পারেন। এরপর শুকনা মরিচ, আদা ও লবণ দিতে হবে।
জ্বাল দিয়ে ঘন হয়ে আসলে, তাতে আমের টুকরা দিয়ে দিন। সিরা ঘন হয়ে আসলে চুলার আঁচ কিছুক্ষণ কমিয়ে রাখতে হবে। আম সিদ্ধ হয়ে গলে যাওয়ার আগেই নামিয়ে কাচের বোতলে ভরে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে বোতলের মুখ বন্ধ করে রেখে দিন।
৯) আচার ও চাটনি – কাঁচা আমের আচার
উপকরণ:
কাঁচাআম আধা কেজি, দেশিপেঁয়াজ-কুচি ৪ কেজি, কালোজিরা ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৮টি, তেঁতুল ১ টেবিল-চামচ, চিনি ৪ টেবিল-চামচ, রসুনের কোয়া ১০টি, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল পরিমাণমতো, কাঁচের বোতল আচার রাখার জন্য।
প্রণালী:
পেঁয়াজ ছুলে নিন। আমের ছোকলা ছিলে পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। এরপর পেঁয়াজ এবাং আম মিহিকুচি করে কাটুন।
একটা ডালায় আম আর পেঁয়াজের কুচি নিয়ে তাতে কালোজিরা, শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, তেঁতুল, চিনি, লবণ আর অল্প সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে তিন থেকে চার দিন রোদে শুকাতে হবে।
বাদামি রং এবং ঝরঝরে হলে কাঁচের জারে ভরে সরিষার তেল দিয়ে আবার রোদে দিতে হবে।
১০) আমসত্ত্ব
উপকরণ :
পাকা আম এক কেজি, চিনি দুই কাপ।
প্রণালী:
পাকা আম খোসা ছড়িয়ে একটু চটকে নিন। হালকা আঁচে একটু সিদ্ধ করে নিন। আম মিষ্টি না টক সে অনুযায়ী চিনি মিশিয়ে দিন।
একটি গোল থালায় তেল মাখিয়ে একপ্রস্থ আম লেপে দিয়ে রোদে দিন। শুকিয়ে গেলে আবার একপ্রস্থ দিন। এভাবে যতটুকু মোটা করতে চান সে অনুযায়ী আম দিন।
ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে কৌটায় ভরে রেখে দিন। রোদের ব্যবস্থা না থাকলে গ্যাসের চুলার নিচে রেখেও আমসত্ত্ব করা যাবে।