কম বাজেটে ভালো ল্যাপটপ কেনার গাইডলাইন

কোনো ল্যাপটপ কেনা আপনার জন্য দুরুহ কাজ হয়ে দেখা দিতে পারে। আপনার সাধ্যের মধ্যে একটি মানসম্মত ল্যাপটপ ক্রয় করার কায়দা কৌশলে আপনাকে দক্ষ করে তোলাই এই নির্দেশিকাটির উদ্দেশ্য।

latetop

আপনার প্রয়োজনটি বিবেচনা করুন
আপনি যখন একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকার মধ্যে একটি ল্যাপটপ কিনতে যাবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই কিছু ব্যাপারে ছাড় দিতে হবে। আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমনসব বৈশিষ্ট্যযুক্ত ল্যাপটপ খুঁজুন। ল্যাপটপের কোন কোন বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার প্রয়োজন নেই সে এব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজনসমূহ চিহ্নিত করার একটি ভাল উপায় হলো ল্যাপটপ কেনার কারণগুলোর তালিকা একখন্ড কাগজে অথবা আপনার ডাইরিতে লিখে ফেলা। তাহলে কোন বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি তা আপনি নির্দিষ্ট করতে পারবেন। যেসব বৈশিষ্ট্য আপনার জন্য অগুরুত্বপূর্ণ আপনি সেগুলিকেও চিহ্নিত করতে এবং সেগুলো বাদও দিতে পারবেন।

পণ্যটি সম্পর্কে জানুন
যদিও ল্যাপটপকে একটি জটিল যন্ত্র বলেই মনে হয়, তারপরও কোনো আধুনিক ল্যাপটপের যেসব মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকে তা বুঝতে পারাটা খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। আপনি নতুন এবং ব্যবহৃত ল্যাপটপ সম্পর্কে জানতে অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারেন। ঘেঁটে দেখার সময় যেকোনো অনন্য বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ্য রাখুন।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনি ল্যাপটপের উপলভ্য মডেলগুলো এবং সেগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন।

সীমিত ব্যয়ে ল্যাপটপ খুঁজে পেতে সঠিক স্থান নির্ধারণ
মজার ব্যাপার হলো, সীমিত ব্যয়ের ল্যাপটপ খোঁজা কোনো মাল্টিলেভেল ভিডিও গেম খেলার মতই। প্রত্যেকবার এক একটি লেভেল বা ধাপ অতিক্রম করলেই আপনি পুরস্কার পেয়ে থাকেন। একইভাবে, আপনি যখন একটি ল্যাপটপ কিনবেন, তখন তার জন্য এমন কিছু উৎস ও জায়গা রয়েছে যেখানে আপনাকে অবশ্যই খুঁজে দেখতে হবে। যদি আপনি কোনো খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করেন তবে দাম সম্পর্কে আপনি বিভ্রান্তিকর ধারণা পাবেন। পরবর্তী ধাপ হলো স্থানীয় কোনো পাইকারী বিক্রেতা। দু’একজন খুচরা বিক্রেতার সাথে দেখা করুন এবং বিক্রয়যোগ্য ল্যাপটপগুলির দামের তুলনা করুন। আপনি দেখবেন যে, পাইকারী বিক্রেতার কাছে অনেক বেশি কম মূল্য পাবেন যা আসলে আপনার খুচরা বিক্রেতা পর্যায়টি সম্পন্ন করার পুরস্কার। তাই বলে এক্ষুণি যেন কোনো কিছু কিনতে ছুটবেন না। সীমিত ব্যয়ের মধ্যে ল্যাপটপ কেনার এটা আরম্ভ মাত্র, আরও কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করা বাকি আছে।

বেশিরভাগ মানুষ পাইকারী বিক্রেতা পর্যন্তই তাদের অনুসন্ধান সীমাবদ্ধ রাখেন। প্রকৃতপক্ষে, পাইকারী বিক্রেতাদের গন্ডির বাইরের তথ্যগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা “নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত” রাখা হয়। আপনি যদি ব্যবসার সেইসব গোপন বিষয় জেনে যান তবে তো আপনিই আসলে স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের নিকট ল্যাপটপ বেচা শুরু করে দেবেন কারণ সেক্ষেত্রে আপনি পাইকারী মূল্যের চেয়েও কমদামে ল্যাপটপ ক্রয় করতে থাকবেন, যা হচ্ছে সেই দাম যেটা বেশিরভাগ খুচরা বিক্রেতারা ল্যাপটপ ক্রয় করার সময় দিয়ে থাকে।
আপনি যতক্ষণ না এই ক্ষেত্রটিতে বিচরণ করছেন, যেখানে পাইকারী দামের চেয়েও কম মূল্যে ল্যাপটপ পাওয়া যায়, ততক্ষণ আপনি কেনাকাটার সত্যিকারের কৌশলটি শিখতে পারবেন না। কেবলমাত্র এমন অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই আপনার পক্ষে ক্রয়ের সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করার মত বিজ্ঞ ক্রেতা হয়ে উঠা সম্ভব।
আপনি যদি আরও ভাল দামে পাওয়ার জন্য মনস্থির করে থাকেন, তবে আপনাকে অবশ্যই ক্রয় ও বিক্রয়ের পদ্ধতিগত ব্যাপারটি জানার মাধ্যমেই তা করতে হবে।

ক্রয়/বিক্রয় পদ্ধতিটি কী?
যে কোনো ক্রয় ও বিক্রয়ের মূলে রয়েছে প্রয়োজন। ক্রেতার পক্ষে, এই প্রয়োজনটি হলো কোনো পণ্য কিংবা সেবা পাওয়ার প্রয়োজন, এবং যখন এই প্রয়োজন, আলোচ্য ক্ষেত্রে একটি ল্যাপটপ, নগদ টাকার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে দেখা দেয়, তখন একজন ক্রেতা সেই পণ্য বা সেবাটি পেতে নগদ টাকা খরচ করতে চায়। একইভাবে, বিক্রেতাদের দরকার টাকা, যার বিনিময়ে তারা পণ্যটি ছেড়ে দিতে চায়। একজন ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে যতই বেশি সংখ্যায় মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে, তৃণমূল/প্রান্তীয় ক্রেতার কাছে পণ্যটির দাম ততই বেশি পড়বে। অতএব, আপনি যদি একজন খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে কেনেন তবে আপনাকে যে কোনো একটি মডেলের জন্য সর্বোচ্চ দাম দিতে হবে যেটা আপনি স্থানীয় একজন পাইকারী বিক্রেতার কাছে অনেকগুণ কম দামে পেতে পারতেন।

ল্যাপটপের উপর আরও সস্তা দরদাম করতে হলে আপনাকে মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েকজনকে অথবা বেশিরভাগকে দূর করে দিতে হবে। এর দ্বারা অবশ্য সবসময় সরাসরি বাজার থেকে ক্রয় করাকে বুঝায় না, বরং আপনার এলাকায় বা দেশে ল্যাপটপের বড় বড় সরবরাহকারীদের ব্যাপারে খোঁজখবর করাকে বুঝায়। আপনি যতই উৎসের কাছাকাছি যেতে পারবেন ততই আপনি আকর্ষণীয় দাম খুঁজে পাবেন। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি বড় কোনো সরবরাহকারীর কাছ থেকে খুব বেশি আকর্ষণীয় দরদামের সুবিধা পাবেন না। উদাহরণস্বরূপ, সরবরাহকারী ৫ টি অথবা ১০ টি ল্যাপটপের সর্বনিম্ন ক্রয়সীমানা বেঁধে দিতে পারেন।

অনলাইনে শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন: সরাসরি ক্রয়বিক্রয়
অনলাইনে শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন সীমিত সামর্থের ল্যাপটপ খোঁজার একটি বিশাল জায়গা শুধুমাত্র এই সাধারণ কারণেই যে, এই ওয়েবসাইটগুলো মধ্যস্বত্বভোগিদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই সরাসরি ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধা দেয়। মাঝে মাঝে, আপনি এমনসব বিক্রেতাকে খুঁজে পাবেন যারা টাকার মারাত্মক অভাবে আছে, আর তাদের কাছে যদি সেই পণ্য থাকে যা আপনি খুঁজছেন, তবে তারা হয়ত আপনাকে অনেক কম দামেই তা দিয়ে দিতে চাইবে।
সর্বনিম্ন দামে ল্যাপটপ কেনাবেচা করতে হলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।:
১. কোনো একটি নিরাপদ স্থানে বিক্রেতার সাথে দেখা করুন। কোনো একটি নিরাপদ স্থানে বিক্রেতার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিন।
২. ল্যাপটপটি যথাযথভাবে ক্রয়কৃত কি-না এবং তা কোনো চুরি করা জিনিস কি-না তা যাচাই করতে ল্যাপটপের চালানটি পরীক্ষা করুন।
৩. ল্যাপটপটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুঁটিয়ে দেখুন। ল্যাপটপটি এখনও ওয়ারেন্টির অধীন কি-না তা দেখে নিন। কেনো ব্যবহৃত ল্যাপটপের ক্ষেত্রে বৈধ ওয়ারেন্টি একটি বড় স্বস্তির বিষয় হতে পারে।

ল্যাপটপের সবচেয়ে ভালো দরদাম পেতে দরকাষাকষি করুন
পণ্যটি ভালভাবে দেখে নেয়া হলে এবং সবকিছু ঠিক আছে বলে মনে হলে আপনি কেনার কথা ভাবতে পারেন। একটি লিখিত চুক্তি করে নিন যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে তা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। লেনদেন শেষ করার আগ মূহুর্তেও বিক্রেতাকে চাপাচাপি করে সামান্য একটু হলেও দাম কমানোর জন্য দরকষাকষি করতে ভুলবেন না।

আপনি যদি ঠিকমত বাজার গবেষণা করতে পারেন তবে বিক্রেতাকে দাম কমানোর পক্ষে আনতে আপনার পক্ষে যথেষ্ট সহজ হবে। অল্প দাম দেয়ার পক্ষে আপনি গ্রহণযোগ্য যুক্তি দেখাতে পারবেন যেমন, ল্যাপটপের লুপ্ত বৈশিষ্ট্য অথবা চলতি বাজার দর। বিক্রেতা যদি পণ্যটি বিক্রয়ের ব্যাপারে সত্যিই আগ্রহী হয় এবং আলোচানার টেবিলে আপনি যদি প্রভাবিত করার মতো মতামত ব্যক্ত করতে পারেন, তবে ল্যাপটপটি সবচেয়ে কম দামে কেনার মাধ্যমে আপনি সবচেয়ে ভাগ্যবান হবেন।

Leave a Reply