কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে শীতে পায়ের গোড়ালি ফাঁটা প্রতিরোধের করুন

শীতে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়। এ কারণে অনেকের গোড়ালিতে ফাটল দেখা দেয়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর করার কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।

লেবু, লবণ, গ্লিসারিন ও গোলাপ-পানির তৈরি মাস্ক

একটি বালতি বা গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে সামুদ্রিক লবণ, লেবুর রস, গ্লিসারিন এবং গোলাপ-পানি মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ওই পানিতে পা ভিজিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঝামা বা ‘ফুট স্ক্রাবার’ দিয়ে পায়ের আশপাশে ও ফাটা স্থান ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিতে হবে।

স্ক্রাবিং শেষে ১ টেবিল-চামচ গ্লিসারিন, ১ টেবিল-চামচ গোলাপ-পানি ও ১ টেবিল-চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে গোড়ালি ফাটা জায়গায় লাগিয়ে রাখতে হবে সারারাত। এই উপকরণ আঠালো তাই চাইলে ঘুমানোর আগে মোজা পরে ঘুমানো যেতে পারে।

সবশেষে সকাল বেলা হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেললেই পা দেখাবে মসৃণ ও ফাটলমুক্ত। কিছুদিন পর পর এই পদ্ধতিতে পা পরিষ্কার করলে উপকার পাওয়া যাবে।

ভেজিটেবল অয়েল

সাধারণত পায়ের গোড়ালি শুষ্ক হয়ে গেলে গোড়ালি ফেটে যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিচের পদ্ধতি খুবই কার্যকরী।

প্রথমে পা পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর গোড়ালির ফেটে যাওয়া জায়গায় ভেজিটেবল অয়েল লাগিয়ে একজোড়া মোটা মোজা পরে সারারাত রেখে দিতে হবে। সকালবেলা কুসুম গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে নিলেই গোড়ালির ফাটল কমে আসবে।

কলা দিয়ে তৈরি মাস্ক

একটি পাকাকলা চটকে নিয়ে পুরো পায়ে এবং গোড়ালিতে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

এছাড়া কলার সঙ্গে অ্যাভোকাডো মিশিয়েও মাস্ক তৈরি করা যায়।

একটি পাকাকলার সঙ্গে অর্ধেক অ্যাভোকাডো ফল বা খানিকটা নারিকেলের শাঁস ব্লেন্ড করে ঘন পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর সেটা গোড়ালির ফেটে যাওয়া জায়গায় লাগিয়ে নিতে হবে।

অ্যাভোকাডো ফল ও নারিকেলে আছে প্রয়োজনীয় তেল, ভিটামিন ও চর্বি। তাই এসব উপাদানের তৈরি পেস্ট পায়ে লাগালে গোড়ালি থাকবে মসৃণ ও কোমল।

ভ্যাসলিন ও লেবুর রস

গোড়ালি পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে হালকা গরম পানিতে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর ১ টেবিল-চামচ ভ্যাসলিন ও ১ টেবিল-চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে এই মিশ্রণ শুকনা পা ও গোড়ালির ফেটে যাওয়া স্থানে ত্বক শুষে না নেওয়া পর্যন্ত ঘষতে হবে।

এই মিশ্রণ রাতে ঘুমানোর আগে লাগিয়ে একজোড়া পশমের মোজা পরে নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। পশমের মোজা শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখবে এবং এতে মিশ্রণটির কার্যকারীতে বাড়াবে। সকালে উঠে ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে।

মধু

মধুতে আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করার উপাদান। এছাড়াও মধু ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

কুসুম গরম পানিতে ১ কাপ মধু মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ফাটা গোড়ালির চামড়া নরম হয়ে এলে হালকা ভাবে পা ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে পায়ের রুক্ষ ত্বক কোমল ও নমনীয় হবে। আর নিয়মিত ব্যবহারে পা ফাটাও কমে আসবে।

চালের গুঁড়া

ত্বকের মরা চামড়া দূর করতে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য চালের গুঁড়ার জুড়ি নেই। ২ বা ৩ টেবিল-চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু ও আপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। পায়ের গোড়া বেশি শুষ্ক হলে এই মিশ্রণের সঙ্গে অলিভ অয়েল বা কাজুবাদামের তেল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

হালকা গরম পানিতে ১০ মিনিট পা ভিজিয়ে রেখে মিশ্রণটি দিয়ে পা স্ক্রাব করে নিলেই ত্বকের মৃতকোষ দূর হয়ে যাবে।

অলিভ অয়েল

প্রাকৃতিক উপায়ে গোড়ালি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে অলিভ অয়েল বেশ কার্যকারী।

একটি তুলার বলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অলিভ অয়েল নিয়ে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর একজোড়া মোজা পরে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে পা ধুয়ে ফেলতে হবে।

এছাড়া অন্য আরেকটি পদ্ধতিতেও অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়।

১টি ছোট বোতলে ১ টেবিল-চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা লেমন অয়েল ও সমপরিমাণ পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

এই মিশ্রণ ফুট ক্রিম হিসেবে রাতে বা দিনে কয়েকবার করে পায়ে ব্যবহার করা যাবে।

ওটমিল

ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে চালের গুঁড়ার মতোই কাজ করে ওটমিল। ১ টেবিল-চামচ ওটমিলের সঙ্গে খানিকটা জুজুবা তেল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে।

এই মিশ্রণ পুরো পায়ে লাগিয়ে ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে। বিশেষ করে ফাটা অংশে। এরপর আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। মিশ্রণ শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

শীতে আদ্রতা কমে যাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হওয়া ও ফেটে যাওয়াসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।

তাছাড়া খারযুক্ত সাবান ব্যবহার থেকেও বিরত থাকা ভালো। বরং মাইল্ড ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।

Leave a Reply