গ্যাস্ট্রিক নামের রোগটি

পেটের মধ্যে অবস্থিত পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অংশ হলো_ খাদ্যনালীর নিচের ভাগ, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র। পরিপাকতন্ত্রের মূল কাজ হলো_ আমরা যেসব খাবার খাই, তা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রসের মাধ্যমে ভেঙে ‘হজম’ করানো। ‘হজম’ এর অর্থ হলো জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবার ভেঙে ছোট ছোট অংশ হিসেবে পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করা।

এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের খাদ্যরস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্যরস পরিপাকতন্ত্র ছাড়াও অগ্নাশয় ও পিত্তথলি থেকেও আসে। খাদ্যরসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো পাকস্থলি থেকে নিসৃত রস, যার মধ্যে এসিড অন্তর্ভুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় খাবার খাদ্যরসের সঙ্গে মিশে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের নাড়াচাড়ার মাধ্যমে ঘটে থাকে।

খাবার ‘হজমের’ পর অপ্রয়োজনীয় অংশ মল হিসেবে বের হয়ে যায়, যার জন্য বৃহদান্ত্রের নাড়াচাড়া প্রয়োজন। পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাতাসও তৈরি হয়। পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে, যার মধ্যে ঘা বা আলসার ও ক্যান্সার উল্লেখযোগ্য। পরিপাকতন্ত্রে যেসব অংশে আলসার হয় তার মধ্যে ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম ভাগ (ডুয়োডেনাম), পাকস্থলি, বৃহদান্ত্র, খাদ্যনালী উল্লেখযোগ্য; ক্যান্সার হওয়ার অংশের মধ্যে পাকস্থলি, বৃহদান্ত্র ও খাদ্যনালী উল্লেখযোগ্য।

আলসার-ক্যান্সার ছাড়াও পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে, যেমন_ পরিপাকতন্ত্রের নাড়াচাড়ার সমস্যা, বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ (পাতলা পায়খানা)। পরিপাকতন্ত্র, অগ্নাশয়, পিত্তথলি ও লিভারের রোগে পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, খাবারে অরুচি, মলত্যাগে অসুবিধা প্রধান। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বা পরিপাকতন্ত্র বিষয়ে গ্যাস্ট্রিক নামে কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি, তবে দৈনন্দিন রোগী দেখার প্র্যাকটিসে রোগীরা, এমনকি চিকিৎসকরা পেটের পীড়া বর্ণনা দিতে ‘গ্যাস্ট্রিক’ শব্দের ব্যবহার করে থাকেন, যার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে_ পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, ঊর্ধ্বমুখী-নিম্নমুখী গ্যাস নিঃসরণ ইত্যাদি।

বিশেষ করে বৃহদান্ত্রের রোগ ইরিটেবেল বাওয়েল সিন্ড্রোমের লক্ষণগুলো রোগীরা ‘গ্যাস্ট্রিক’ হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্ণনা করে থাকেন। অনেকে আবার ‘এসিডিটিতে’ ভুগছেন বলে থাকেন। যা বলতে পেট ফাঁপা, ঊর্ধ্বমুখী বাতাস নিঃসরণকে বোঝান। যে কোনো রোগ নির্ণয়ের মতো পেটের কোনো অঙ্গের সঠিক রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসক উপসর্গের বর্ণনা বিশ্লেষণ, শরীর পরীক্ষা ও বিভিন্ন ল্যাবরেটরির সহায়তা নিয়ে থাকেন। পরিপাকতন্ত্রের আলসার ও ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য এন্ডোস্কপি গুরুত্বপূর্ণ।

খাদ্যনালী, পাকস্থলি ও ক্ষুদ্রান্ত্রের (ডুয়োডেনাম) রোগ নির্ণয়ে ‘উপরের এন্ডোস্কপি’ ও বৃহদান্ত্রের রোগ নির্ণয়ের জন্য ‘নিচের এন্ডোস্কপি’ করা হয়। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রের অসুস্থ অংশ সরাসরি দেখা যায় এবং প্রয়োজনে বায়োপ্সি করে প্যাথলজি পরীক্ষা করা যায়, যাকে হিস্টোপ্যাথলজি বলা হয়। শুধুমাত্র উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। পরিপাকতন্ত্রের রোগ ভেদে আলসারের ওষুধ কিংবা ক্যান্সার হলে অপারেশন, সঙ্গে ক্যান্সারের ওষুধ ও রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। আলসারের চিকিৎসার জন্য ওমিপ্রাজলসহ অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ ও স্টেরয়েডের সঙ্গেও ওমিপ্রাজল দেওয়া হয়। ওমিপ্রাজল বা সমগোত্রের ওষুধ আলসারের একমাত্র ওষুধ নয়। কারও কোনো বিশেষ রোগ না থাকলে ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তেমনি কারও আলসার না থাকলে ওমিপ্রাজল বা সমগোত্রের ওষুধের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে অনেকেই রোগ নির্ণয় করা ছাড়া ওষুধের দোকান থেকে নিজে বা অন্যের পরামর্শে ওমিপ্রাজল বা সমগোত্রের ওষুধ সেবন করে থাকেন, যা ঠিক নয়। ওমিপ্রাজল বা সমগোত্রের ওষুধ বিক্রি ও সেবনে ‘গ্যাস’, ‘গ্যাস্ট্রিক’ নামক চটকদার রোগের নাম বলা হয়ে থাকে। মেডিকেল বইয়ে কোথাও ‘গ্যাস’, ‘গ্যাস্ট্রিক’ নামক কোনো রোগের উল্লেখ নেই। জনসাধারণের স্বাস্থ্য জ্ঞানের স্বল্পতার সুযোগে এ ধরনের ওষুধের অপ্রয়োজনীয় যথেষ্ট ব্যবহার হয়ে থাকে। যে কোনো ওষুধ অহেতুক সেবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই অযথা ওষুধ সেবন না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ও তার পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।

Leave a Reply