ঘরেই বানান স্পন্জ রসগোল্লা।

ঘরেই বানান স্পন্জ রসগোল্লা

রেসিপিঃ- স্পন্জ রসগোল্লা

উপকরনঃ
-লিকুইড দুধ -১ লিটার ( আমি মিল্ক ভিটা দিয়েই বানাই)
-সিরকা/বড় লেবুর রস যেগুলোতে গন্ধ কম থাকে-২থেকে ৩ টেবিল চামচ( সমপরিমান পানি দিয়ে মিলানো)( লেবুর রস হলে পানি মিশাতে হবে না এবং রস বের করে ছেকে নিতে হবে এবং ২ টেবিল চামচ বা আরো বেশী লাগতে পারে, সবুজ পানি বের হওয়া পর্যন্ত রস অল্প অল্প করে দিবে।
-চিনি-১/২ চা চামচ( যদি সিরা ১ কাপ চিনি আর ৪ কাপ পানিতে বানাও
সিরার জন্যঃ
-১কাপ চিনি
-৩ কাপ পানি( অনেকে ৪ কাপ ও নেয় তাতে সিরা ঘন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না আমি মনে করি যারা নতুন তারা ৪ কাপ পরিমান নিলেই ভালো করবে তবে মিষ্টি কম মনে হবে)
-এলাচ- ২/৩টা
একটি ছড়ানো পাতিলে চিনি পানি আর এলাচ নিয়ে চুলায় অল্প আঁচে জ্বাল দিয়ে নেড়ে নেড়ে চিনি আর পানিটা মিশিয়ে দিতে হবে মিশে গেলেই চুলা বন্ধ করে রাখতে হবে।

প্রক্রিয়াঃ

১) দুধ জ্বাল দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে নাড়তে হবে যাতে পাতিলের নীচে না লাগে।
২) দুধে বলক আসলে ( ফুটে উঠলে) পাতিল নামিয়ে ৫থেকে ১০ সেকেন্ড পর একটু একটু করে সিরকার মিশ্রন ছড়িয়ে দিতে হবে, এবং হাল্কা করে নেড়ে দিতে হবে,
৩) যখন দুধ ছানা হয়ে যাবে এবং পানিটা সবুজাভ হবে তখন পাতিল টাকে প্রায় ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত রাখতে হবে।
৪) পাতিল যখন প্রায় ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন ছানার পানি ঝরিয়ে নিতে হবে একটা সুতির পাতলা কাপড়ে ছানার পানি ঝরাতে হবে।এবং কলের নিচে একটা ঝাঝরি এর উপর ছানার কাপড়টা রেখে পানি দিয়ে ছানা টাকে নেড়ে নেড়ে ধুয়ে নিতে হবে, ২ বারের মত ভালো করে ছানাটা ধুয়ে নিতে হবে।
৫) এবার পুটলিকে হাত দিয়ে চেপে চেপে পানি যতটুকু বের করা যায় করতে হবে তবে অতিরিক্ত চাপবে না তাহলে ছানা বের হয়ে আসতে পারে ,তারপর ঝুলিয়ে রাখতে হবে পানি ঝরার জন্য, বারান্দায় ঝুলালে ভালো হয়।
৬) ১/২ ঘন্টা পর ছানার পুটলি টাকে আবার চাপ দিয়ে দিয়ে পানি বের করে দিতে হবে, আবার ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
৭) আবার ১/২ ঘন্টা পর পুটলিটাকে আগের মত চেপে চেপে পানি যতটুকু সম্ভব বের করে, ছানাটা একটা ছড়ানো প্লেটে রাখতে হবে। ৫ থেকে ১০ মিনিট হাত দিয়ে একটু ছড়িয়ে দিয়ে বাড়তি পানি টা শুকিয়ে নিতে হবে।
৮) ছানাটা খুব নরম থাকবে,( হাত দিয়ে পুরোটাকে একটা বলের মত কর যাবে কিন্তু নরম হবে।)
৯) এবার ছানার হাতের তালু দিয়ে প্লেটের উপর ছানাটা ঘষে ঘষে ছেনে নিতে হবে , ১০ মিনিট লাগতে পারে। ছানার মধ্যে কোনো দলা দলা থাকবে না এবং বল করলে খুব মসৃন বল হবে।
১০) ছানাটা ১২ থেকে ১৩ ভাগ করে, প্রত্যেক ভাগ হাতের উপর নিয়ে প্রথমে হাতের মুঠোতে চেপে চেপে নিয়ে পরে বল করতে হবে, বলের কোথাও একটু হাল্কা ফাটা লাগলে ওই জায়গাটা আঙ্গুল দিয়ে হাল্কা করে মিশিয়ে দিতে হবে। যদি মনে হয় ফাটা বেশী তাহলে আবার ভালো করে ছানতে হবে।
১১) বল করা যখন শুরু করবে তখন চুলায় সিরা বসিয়ে অল্প জ্বালে রাখবে তবে ছানার বল দেয়ার সময় সিরাতে বলক উঠিয়ে রাখবে ,খেয়াল রাখবে সিরা যাতে ঘন না হয়ে যায় সিরাটা চিনি আর পানি মেশানোর পর যতটুকু পাতলা ছিল ওরকম পাতলা রাখতে হবে।
১২)বল হয়ে গেলে একটা করে মিষ্টি বানাবে ও বলক উঠা সিরাতে ছেড়ে দিবে চুলার জ্বাল এমন থাকবে যাতে সিরাতে বলক উঠতে থাকে , সব দেয়া হলে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল কমাবে তবে সিরাতে যেনো বলক উঠতে থাকে প্রায় ১০ মিনিটের মত জ্বাল দিয়ে ঢাকনা সহ পাতিল নামিয়ে রাখবে এবং পাতিল ও রসগোল্লা পুরো ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত ঢাকনা দিয়ে রাখবে , সিরা যেনো কখনোই ঘন না হয় জ্বাল দিয়ে,সিরা ঘন হলে মিষ্টি শক্ত হয়ে যায়।
১৩) রসগোল্লা ১২ ঘন্টা পর খেলে ভালো , সিরা ভালো করে মিষ্টির ভেতরে ঢুকে যায়, ১ দিন সিরাতে ডোবানো অবস্থায় বাইরেই রাখা যায়।
১৪) হয়ে গেলো রসের গোল্লা,

চেক করার জন্য একটা রসগোল্লা বাটিতে নরমাল ডুবো পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। যদি ডুবে যায় তবে বুঝবে হয়ে গেছে।

টিপসঃ

১) অনেকেই প্রথম দিকে ভালো করে বানাতে না পারলে হাল ছেড়ে দেয়, হাল ছাড়া যাবে না বিশ্বাস রাখতে হবে আমি পারবো এটা তো মঙ্গল গ্রহ জয় করা নয় শুধু কিছু টেকনিক, যেটা ধৈর্য ধরে করতে পারলে আয়ত্তে চলে আসবে ইনশা আল্লাহ।
সুতরাং আপুরা চেষ্টা করো, প্রথম প্রথম সমস্যা হতে পারে আমারও হয়েছে বেশ কয়েকবার আমি হাল ছাড়িনি, তোমরাও হাল ছেড়োনা।

****আজকে আমি তোমাদের সাথে রসগোল্লা বানানোর কিছু ভুল গুলো আলোচনা করি, কারন আমি নিজেও এই ভুলগুলো করেছি আগেঃ

>রসগোল্লার প্রথম ধাপ হলো ভলো ছানা তৈরী করা, এটা সঠিক না হলে রসগোল্লা ভালো হয় না, আমার অভিজ্ঞতা থেকে ছানা ভালো হওয়ার ধাপ বলি-
১) দুধ ফুটে উঠার পর চুলা থেকে পাতিল নামিয়ে ১০/১২ সেকেন্ড পর লেবুর রস অথবা সিরকা অল্প অল্প করে ছড়িয়ে এবং নাড়া দিয়ে দিয়ে ছানা তৈরী করতে হবে।ছানা হয়ে গেলে পাতিলটা একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে।তারপর পানি ছাকতে হবে।
২)ছানা অনেকক্ষণ ঝুলিয়ে রাখা বা বাতাসে অনেকক্ষণ ছড়িয়ে রাখলে ছানাটা শক্ত হয়ে যেতে পারে। ১ঘন্টাই যথেষ্ট তবে আবহাওয়া বেশী আর্দ্র হলে সময় আরো বেশী লাগবে
৩) ছানাটা অবশ্যই তুলতুলে নরম থাকতে হবে কিন্তু পানি পানি থাকবে না, এটা কিছুটা অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। তবে বোঝার উপায় হলো, ছানাটা যে কাপড়ে ঝুলানো ছিলো বের করার সময় ছানাটা রাবারের মত কাপড়ের গা থেকে ছেড়ে আসবে। আর মাখার সময় হাতে বা যে পাত্রে মাখাবে সেটাতে লেগে যাবে না উঠে আসবে হাত দিয়ে টান দিলেই। হাতের তালু দিয়ে মাখালে নরম মসৃন হবে ।
৪) সিরাটা অবশ্যই পাতলা থাকতে হবে জ্বাল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। প্রয়োজনে শেষে অল্প পানি মিশিয়ে নিতে পারো।

Leave a Reply