সেই প্রাচীনকাল থেকেই নারীরা সৌন্দর্যের জন্য করে আসছেন নানা রকম অনুশীলন। আজকের নারীরাও বিভিন্ন ভাবে রূপ চর্চা করে থাকে। নারীর সৌন্দর্য বিকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে কত কত বিউটি পার্লার। এসব বিউটি পার্লারে সৌন্দর্য চর্চার জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ফেসিয়াল, থেরাপি, ট্রিটমেন্ট। হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে আমরা এসব রূপচর্চা সেবা নিচ্ছি পার্লার গুলো থেকে। অথচ আমরা অবহেলা করে যাচ্ছি রূপচর্চার প্রকৃত উপাদান গুলোকে! খুব সহজে এবং অল্প খরচে, আমাদের রান্নাঘরেই পাওয়া সম্ভব এমন উপাদান গুলোর সাহায্যে আমরা তৈরি করতে পারি এমন কিছু রূপ সামগ্রী যা আমাদের দেবে কোমল, মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক যা আমাদের সকলেরই কাম্য। উপটান এমনই একটি রূপ সামগ্রী- যা আপনাকে দিতে পারে অসাধারণ সুন্দর ত্বক, ঠিক যেমনটি আপনি সব সময় চেয়েছিলেন।
উপটান একটি আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ যা তৈরি হয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন হলুদ, চন্দন, নিম, বেসন, তুলসী, মেথি ইত্যাদির গুঁড়ো থেকে। এটি বিয়ের কনেদের বিবাহপূর্ব রূপচর্চার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অতি প্রাচীনকাল থেকে। সেই থেকে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী রূপ সামগ্রী। ধারণা করা হয়, উপটান পৃথিবীর সব চেয়ে প্রাচীন রূপ সামগ্রী যা প্রাচীন বৈদ্যরা ব্যবহার করার পরামর্শ দিতেন। আজকের পৃথিবীতে, যেখানে দূষণ আর ভেজালের হাত থেকে কারোই রেহাই নেই, তখন আমাদের ত্বকের উপটানের মত একটি প্রাকৃতিক সমাধানেরই প্রয়োজন! উপটানে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যা আমরা আমাদের রান্নাঘরেই পেয়ে যাব; এর জন্য বাজারে গিয়ে দামি কোন কেমিক্যালযুক্ত বিউটি প্রোডাক্ট কিনতে হবে না যা কিনা শুধু ত্বকের ক্ষতিই করবে।
বাড়িতে বানানোর জন্য উপটানের কয়েকটি প্রস্তুত প্রণালীঃ
(১) সাধারণ উপটানঃ
উপকরণ-
২ টেবিল চামচ বেসন
১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো
১/২ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো
২ টেবিল চামচ দুধ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ
সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি দিয়ে ফেস ওয়াশের মত করে প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার করুন। ব্যবহারের ২-৩ দিনের মধ্যেই দেখবেন আপনার ত্বক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। এটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।
(২) ফর্সা, উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় ত্বকের জন্য উপটানঃ
উপকরণ-
৪ টেবিল চামচ বেসন
২ টেবিল চামচ দুধের গুঁড়ো
১ টেবিল চামচ তরল দুধ
২ টেবিল চামচ লেবুর রস
১ ১/২ টেবিল চামচ আমণ্ড গুঁড়ো
১/২ চায়ের চামচ হলুদ গুঁড়ো
কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল
কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ
সবগুলো উপকরণ একসাথে ভালো করে মেশান ও ফেস প্যাক হিসেবে মুখে ও গলায় লাগান।লাগানোর সময় হালকা ভাবে মাসাজ করে নিন এবং প্যাকটি পরিষ্কার করার সময়ও আলতো করে মাসাজ করে তুলুন। এই উপটানটির নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বককে করবে উজ্জ্বল, মসৃণ ও লাবণ্যময়।
(৩) শুষ্ক ত্বকের জন্য উপটানঃ
উপকরণ-
২ টেবিল চামচ বেসন
১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো
১/২ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো
২ টেবিল চামচ মধু
১ টি পাকা কলা
প্রয়োজনমত তরল দুধ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করুন। এই উপটানটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করার পাশাপাশি এর আর্দ্রতা ও কোমলতা বজায় রাখবে।
(৪) তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপটানঃ
উপকরণ-
২ টেবিল চামচ বেসন
১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো
১/২ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো
১ টি কমলার রস অথবা লেবুর রস
১/২ কাপ দই
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ
সব কয়টি উপকরণ এক সঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই উপটানের নিয়মত ব্যবহারে আপনার ত্বক হবে সুন্দর, মসৃণ, উজ্জ্বল আর এটি ত্বককে তেলতেলেও করবে না।
(৫) সমস্ত শরীরে ব্যবহারের জন্য উপটানঃ
উপকরণ-
৩ ১/২ টেবিল চামচ বেসন
১ চায়ের চামচ হলুদ গুঁড়ো
২ টেবিল চামচ লেবুর রস
আধা কাপ তরল দুধ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার-
সব উপকরণ এক সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই উপটানটি সাবানের পরিবর্তে প্রতিদিন সারা শরীরে ব্যবহার করুন। ত্বক পরিষ্কারের সাথে সাথে এই উপটানটি আপনার ত্বককে করবে উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়।
এগুলোর মধ্যে থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন যে কোনও একটি উপটান এবং ব্যবহার করুন নিয়মিত। আপনার ত্বক উজ্জ্বল তো হবেই, চলে যাবে ত্বকের রোদে পোড়া ভাব ও নির্জীবতা। আপনি বাড়িতে উপটান না বানাতে চাইলে বাজার থেকেও কিনে ব্যবহার করতে পারেন; তবে এ ক্ষেত্রে এর গুনগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। উপটান একটি আয়ুর্বেদিক সৌন্দর্য সমাধান বলে এতে নেই কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া- বিশেষ করে ঘরে তৈরি উপটান সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই আজই ভালো মানের উপটান বাজার থেকে কিনে আনুন অথবা ঘরে বসেই তৈরি করে ফেলুন রূপচর্চার প্রাচীন এই রূপ সামগ্রীটি।