চুল পড়া রোধে কিছু ঘরোয়া সমাধান

শুরু নারীরা নন, চুল পড়া সমস্যা নিয়ে জর্জরিত নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই। একটা সময় আমরা দেখেছি যে আমাদের নানি দাদীরা তাদের শেষ বয়সে এসেও মাথা ভর্তি চুল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, আর এখন এইসব অনেকটা গাল গল্পের মতো শোনায়। বর্তমান সময়ে দেখা যায় অনেক কম বয়সী ছেলে মেয়েরাই এই চুল পড়া সমস্যা নিয়ে বিব্রত। অল্প বয়সে মাথায় টাক পড়ে যাওয়ার মতো লজ্জাজনক আর কিচ্ছু হয়না। চুল পড়ে যাওয়ার জন্য একক কোন কারণকে দায়ী করা যায়না। বিভিন্ন কারণে চুল পড়ে যেতে পারে, যেমন- পরিবেশ দূষণ, পানি সমস্যা, খাবারের সমস্যা, অতিরিক্ত কেমিক্যাল হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, শারীরিক অসুস্থতা ও চুলের সঠিক যত্ন না করা। কথা হল সমস্যা যেমন থাকে তেমন তার সমাধানও থাকে, আমাদের কেবল জানতে হয় সঠিক সমাধান প্রক্রিয়া ও প্রয়োগ।

আসুন আজ দেখি কোন কেমিক্যাল বা বাজারজাত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার না করেই ঘরোয়া ভাবে আপনি আপনার চুল পড়া সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

নারিকেলের দুধ-

নারিকেলের দুধ চুলের জন্য একটি উচ্চমানের পুষ্টি উপাদান যা মাথার ত্বক নারিশ করে চুলের গ্রোথ বাড়িয়ে তোলে। চুল পড়া রোধে আপনি নারিকেল থেকে দুধ বের করে সেটা চুলের গোঁড়ায় ম্যাসাজ করলে চুল পড়া রোধ হয়। এটি চুল পড়া বন্ধ করার একটি অন্যতম সহজ ও কার্যকরী উপাদান।

অ্যালোভেরা-

অ্যালোভেরা জেল সরাসরি নিয়ে বা অ্যালোভেরা জুস বানিয়ে আপনি আপনার মাথার ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। এক থেকে দুই ঘণ্টা রেখে দিন পরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান মাথার ত্বক সুস্থ রাখে এবং ড্রাই মাথার ত্বক স্বাভাবিক করে যার ফলে চুল পড়া প্রায় অনেকটাই কমে আসে।

অয়েল ম্যাসাজ-

আজকাল অনেকেই চুলে তেল দেওয়া একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল ও চুল পড়া বন্ধ করতে তেলের বিকল্প হয়না। আপনি যদি প্রতিদিন না সম্ভব হলেও সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ টা দিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম তেল আপনার মাথার ত্বকে ম্যসাজ করেন তাতে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে চুল পড়া রোধ করে চুলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলবে। এক্ষেত্রে নারিকেল তেল সবচেয়ে ভালো কাজ করে, তবে আপনি চাইলে অলিভ অয়েল, জোজোবা, মাস্টারড, কাস্টার ও অ্যালমন্ড অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন।

নিমপাতা-

নিম গাছ হল বিধাতা প্রদত্ত প্রকৃতির এক অনন্য উপকারী এমন এক আশীর্বাদ যাতে প্রয়োজনীয় সব উপাদান স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে। এটিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ও সেডাটিভ প্রাকৃতিকভাবেই বিদ্যমান। চুল পড়া কমাতে এই নিম পাতার কোন তুলনা হয়না। আপনি নিমপাতা পরিমাণ মতো নিয়ে তাতে পানি মিশিয়ে জ্বালাতে থাকুন যতক্ষণ পানি কমে অর্ধেক আকার ধারণ নয়া করে। এবার এই পানি ঠাণ্ডা করে আপনার মাথা ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করলেই আপার চুল পড়া কমে আসবে।

আমলা-

কিছু শুকনা আমলা নিয়ে নারিকেল তেলের মধ্যে দিয়ে জ্বালাতে থাকুন যতক্ষণ নয়া তেল কালো হয়ে যায়। এবার এই তেল আপনার মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন দেখবেন চুল পড়া বন্ধ হবে। আবার আপনি চাইলে আমলা বেটে এর সাথে শিকাকাই মিশিয়ে পেস্ট করে তা মাথায় লাগাতে পারেন, এটাও চুল পড়া কমাতে খুব কাজে দেয়।

বিঃদ্রঃ যাদের চুল ড্রাই তারা শিকাকাই ব্যবহার করবেন না।

গ্রিনটি-

চুল পড়া রোধে আপনি নিশ্চিন্তে গ্রিনটি ব্যবহার করতে পারেন। দুইটি গ্রিনটি ব্যাগ নিয়ে এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি ঠাণ্ডা করে মাথায় ও চুলে লাগান। এটি এক ঘণ্টা আপনার চুলে রেখে পরে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে মেহেদির ব্যবহার সেই প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে। আপনি চুল পড়ে যাওয়া কমাতে মেহেদিও ব্যবহার করতে পারেন। অনেকের ধারণা বেশি বেশি শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে যায় আর এই ধারণা থেকে তারা ঠিকঠাক চুল পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকেন। যার ফলাফল নোংরা ও অপরিষ্কার চুল থাকার ফলে এমনিতেই চুল পড়তে শুরু করে। তাই সব সময় চুল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।

Leave a Reply