হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নিয়মিত রূপচর্চা করার সময় হয়ে ওঠে না প্রায় সকল মহিলাদেরই। ত্বকের ভেতর ধুলাবালি জমে বিশেষ করে রোমকূপের গোড়ায় যেসব ময়লা আটকে থাকে, সেসব ময়লা সহজে পরিষ্কার করা সম্ভব নয় । ময়লা অতিরিক্ত তেল একত্রিত হয়ে হোয়াইট হেড, ব্ল্যাক হেড সহ ত্বকের না ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া একটি বয়সের পর ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে প্রয়োজন পড়ে বাড়তি পুষ্টিটির। এসব কিছুর সহজ সমাধান পাওয়া যায় ফেসিয়ালের মাধ্যমে। মাসে দু’বার ফেসিয়াল করতে পারলে ত্বকের জন্য উত্তম। তবে সম্ভব না হলে কমপক্ষে মাসে একবার ফেসিয়াল করতে হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন ফেসিয়ালটি আপনার জন্য প্রয়োজন।
ডায়মন্ড ফেসিয়ালঃ
এই ফেসিয়াল আনইভেন স্কিন টোনের উন্নতি করে বয়সের ছাপ লুকাতে সাহায্য করে। রোদে পোড়া কালো ছোপ, ব্রণের দাগ, রুক্ষ শুষ্ক ত্বক এগুলোর চিকিৎসায় ডায়মন্ড ফেসিয়ালের সমকক্ষ আর কিছুই নেই।ডায়মন্ড ফেসিয়াল ত্বকের অতিরিক্ত টক্সিন ধুয়ে-মুছে ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক অতি দ্রুত লাবণ্যতা ফিরে পায় । এতে ত্বকের মরা চামড়া ঝরে পড়ে আর ত্বক হয়ে ওঠে টানটান। এই ফেসিয়াল ত্বকের ব্লাড ফ্লো বাড়িয়ে দেয়, ত্বকের ডিপ ক্লিন করে, রিঙ্কেল কমিয়ে আনে, ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।
গ্লোল্ড ফেসিয়ালঃ
সেনসেটিভ ত্বক ছাড়া যে কোন ত্বকের জন্যই এই ফেসিয়াল উপকারী। এটা সব বয়সী ত্বকের জন্য নেওয়া যাবে। ত্বকের পুরনো লাবণ্য, উজ্জ্ব্বলতা ফিরিয়ে আনতে গোল্ড ফেসিয়ালের জুড়ি নেই। ত্বকে লুকিয়ে থাকা ধূলো ময়লা, বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনার ক্ষমতা সোনার অসীম। নতুন কোষ জন্মানোর জন্য সোনার অবদান অনেক। বিশেষ করে বিয়ের কনের জন্য গোল্ড ফেসিয়াল খুব ভালো ফলাফল দেবে। কারণ এটা ত্বকে সুন্দর একটা সোনালি আভা এনে দেয়।
পার্ল ফেসিয়ালঃ
পার্ল ফেসিয়াল সব ধরনের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য, তবে স্পর্শকাতর ত্বকে এই ফেসিয়াল করা যাবে না। পার্ল ফেসিয়াল করার পর ত্বকে একটা হোয়াইটিশ আভা আসে এবং অনেক দিন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সিলভার ফেসিয়ালঃ
চেহারায় তাৎক্ষণিক জৌলুস আনতে সিলভার ফেসিয়ালের সমকক্ষ আর কোন ফেসিয়াল নেই। এই ফেসিয়াল শুধু পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে না সেই সঙ্গে ব্ল্যাকহেডস দূর করে।
এলোভেরা ফেসিয়ালঃ
এলোভেরা জেলে অক্সিন আর গিবেরেলিন্স মের ২ টি হরমোন আছে। এই ২টি হরমোন ব্রণের সমস্যা দূর করে, সানবার্ন সারিয়ে দেয়, সেই সঙ্গে বয়সের ছাপও চটপট লুকিয়ে ফেলে। শুষ্ক, তৈলাক্ত বা মিশ্র ত্বকের অধিকারীরা অনায়াসে এই ফেসিয়াল করাতে পারেন।
যাদের ত্বকে বিভিন্ন প্রকার দাগ আছে তারা এই ফেসিয়াল নিতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য এই ফেসিয়াল খুবই উপকারী। তবে স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা ফেসিয়াল করা যাবে না । রোদে পোড়া ভাব দূর করতেও এটি সাহায্য করে।
হার্বাল ফেসিয়ালঃ
হারবাল ফেসিয়ালে প্রাকৃতিক উপাদান আছে তাই এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ত্বকে লুকিয়ে থাকা ধূলো ময়লা, বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনার ক্ষমতা রাখে। এই ফেসিয়ালের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, যদিনা কোন নির্দিষ্ট উপাদানের প্রতি আপনি সংবেদনশীল হয়ে থাকেন।
অ্যান্টি-রিংকেল ফেসিয়ালঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকের কানেকক্টিভ টিস্যুতে থাকা কোলাজেন এবং ইলাস্টিন দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে ত্বকের টানটান ভাব কমতে থাকে। ফলশ্রুতিতে চামড়া কুঁচকে যাওয়া, ভাঁজ পড়া বা ঝুলে যাওয়া ইত্যাদি নানা সমস্যা তৈরী হয়। অ্যান্টি-রিংকেল ফেসিয়াল নিয়মিত অ্যাপ্লিকেশন আপনার ত্বকে মসৃণতা ফিরিয়ে আনবে।
স্কিন টাইটেনিং ফেসিয়ালঃ
ওজন হারানো, গর্ভাবস্থা বা বয়সজনিত কারণে আমাদের মুখের চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে তা ঝুলে পড়তে পারে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দেখা যায় বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণেই ত্বক ঝুলে পড়ছে। ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বকের ভাঁজ পড়ার প্রক্রিয়াকে একটু দেরি করানো যায়। বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে ত্বকের টানটান ভাব হারিয়ে ফেলে তা ধরে রাখতে স্কিন টাইটেনিং ফেসিয়াল খুবই উপকারী।
আইস কিউব ফেসিয়ালঃ
বরফ ত্বকের ব্লাড ফ্লো বাড়িয়ে দেয় কয়েকশো গুণ আর মলিন ত্বকে ছড়িয়ে দেয় গোলাপি আভা। আইস ত্বকের রন্ধ্রের সাইজ ছোট করে, ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনে, ত্বকের চুলকানি ও ফোলা ভাব কমায়, চোখের নীচের কালো দাগও দূর করে। আইস কিউব ফেসিয়াল করার জন্য বয়সের কোন ভেদাভেদ নেই। তবে যদি আপনার আ্যাজমার সমস্যা থেকে থাকে বা ঠান্ডাতে এলার্জি থেকে থাকে অবশ্যই এই ফেসিয়াল পরিহার করবেন।
এ্যারোমা ফেসিয়ালঃ
এ্যারোমা ফেসিয়াল বেশী উপযোগী বিয়ের কনেদের জন্য। অর্থাৎ যারা কিছু দিন পর বিয়ের কনে সাজতে যাচ্ছেন তাদের জন্য এই ফেসিয়াল উপযোগী এবং এই ফেসিয়াল সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফেসিয়ালঃ
যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের জন্য এই ফেসিয়াল খুবই উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক ধরনের কেমিক্যাল যা সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব আর পলিউশানের কারণে চেহারার মলিন ভাব, মুখের দাগ ও বয়সের ছাপ দূর করে ত্বকের চাকচিক্য বাড়িয়ে দেয় । এটি আন ইভেন টোন দূর করে গায়ের রঙ কে উজ্জ্বল করে। এটা লোমকূপ থেকে সব ময়লা বের করে আনে।
পিম্পল ফেসিয়ালঃ
এই ফেসিয়াল তৈলাক্ত ত্বকের এবং ব্রণে আক্রান্তদের জন্য। বড় ছোট সবাই এটা করতে পারেন। এছাড়া ব্রণের প্রকোপ কমানোর জন্য বিভিন্ন মাস্ক ব্যববার করা হয়। যাদের ত্বকে পিম্পল আছে তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। নিয়মিত মাসে ২ বার এই ফেসিয়াল করলে পিম্পল আস্তে আস্তে কমে আসবে।
হোয়াইটেনিং ফেসিয়ালঃ
হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল মুখের দাগ পরিস্কার করার পাশাপাশি মুখে সতেজ ভাব ফুকিয়ে তোলে। এমন আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে ফেসিয়ালে। হোয়াইটেনিং ফেসিয়ালের ফলে ত্বকে আসে এক অদ্ভুত সুন্দর আভা ও দ্যুতি আর মেক-আপের ভরিক্কি ভাব কমে যায়।
ফ্রুট ফেসিয়ালঃ
ফল আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিভিন্ন ফল বিভিন্ন ভিটামিনে ভরপুর। ফলের ফেসিয়াল-ও তেমনি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী যাকে আমরা সাধারণত ফ্রুট ফেসিয়াল বলে থাকি। এই ফেসিয়ালে যে মিক্সড ফ্রুট ব্যাবহার করা হয় যা সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো। বিশেষ করে ফ্রুট ফেসিয়াল ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে। ত্বক টান টান রাখে। একমাত্র ফ্রুট ফেসিয়ালই স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য উপযোগী।
কোলাজেন ফেসিয়ালঃ
কোলাজেন ফেসিয়ালে কোলাজেন প্রোটিন ব্যবহার করা হয় ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন কোলাজেন ভাঙতে শুরু করে ত্বকে বলিরেখা আর বয়সের ছাপ দেখা দিতে শুরু করে। কোলাজেন ফেসিয়ালের মাধ্যমে এই বয়সের ছাপ লুকিয়ে ত্বকে তার উজ্জ্বলতা দেখা দেয়।
এরোমাথেরাপি ফেসিয়ালঃ
ত্বকের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল রাখা এবং ক্লান্তি দূর করতে এই ফেসিয়াল অত্যন্ত কার্যকর। এ ফেসিয়ালে এসেনসিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়। এ এসেনসিয়াল অয়েল খুব দ্রুত আপনার ক্লান্তি দূর করবে এবং নার্ভকে শান্ত করবে। এই ফেসিয়ালে ম্যাসেজ করতে হবে ত্বকের কিছু নির্দিষ্ট প্রেশার পয়েন্টে।