ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন সহজেই

শরীরের অভ্যন্তরিন ক্রিয়াকলাপে অজানা ত্রুটির কারণে প্যানক্রিয়াসের বেটা সেল ধ্বংস হতে থাকে। এক সময় ইনসুলিন তৈরিতে প্যানক্রিয়াস সম্পূর্ণ অথবা আংশিক অক্ষম হয়ে পড়ে। ইনসুলিনের অভাবে রক্তের গ্লুকোজ আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না। ফল হিসেবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আমাদের হার্ট, কিডনি, চোখ, দাঁত, নার্ভ সিষ্টেমসহ গরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে। অপরদিকে নিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। এবিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন গ্রিন লাইফ হসপিটালের কনসালটেন্ট ডায়াবেটিক এন্ড এন্ডক্রিনোলজিস্ট ডাঃ তানজিনা হোসাইন।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিসকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করেছেন যথা টাইপ-১, টাইপ-২, এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।

টাইপ-১ : টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। কখনো শরীরের বিশেষ কোনো অঙ্গের ক্ষতি সাধন করে। এসময় রোগীর শরীরে খুব অল্প পরিমান ইনসুলিন উৎপাদিত হয়। রোগীকে ইনসুলিন নিয়ে বাঁচতে হয়। কেন এমনটি ঘটে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা তা এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি। তাদের ধারণা, শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা কোন বিশেষ পরিবেশগত কারণে বা কোন ভাইরাসের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সনাক্তকৃত মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৫% থেকে ১০% টাইপ-১ ভুক্ত। সাধারণত ৩০ বছরের কম লোকের টাইপ-১ ডায়াবেটিস বেশি হয়, তবে যে কোন বয়সের লোকের এ ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে।

 টাইপ-২ : ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় ৯০% টাইপ-২ ডায়াবেটিসভুক্ত। বার্ধ্যক্য, স্থুলতা, কর্মহীনতা, বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে। টাইপ-২ ভুক্ত ডায়াবেটিসের ৮০% ভাগ রোগীর ওজন কাম্য ওজনের চেয়ে বেশি। আজকাল ত্রিশ বছরের নীচে এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যাচ্ছে এবং দিন দিন বেড়ে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে টাইপ-২ ভুক্ত ডায়াবেটিক রোগীরা শারিরীক কোন অসুবিধা অনুভব করেন না। বিনা চিকিৎসায় বছরের পর বছর পার করে এবং নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: গর্ভধারণের শেষ দিকে কিছু নারী টাইপ-৩ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। বাচ্চার জন্মের পর পরই এ ডায়াবেটিস সেরে যায়। যেসব গর্ভবতী নারীদের এ ডায়াবেটিস হয় তাদের ২০% থেকে ৫০% সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই টাইপ-২ ধরণের ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়। এক তথ্য বিবরণীতে দেখা গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩% থেকে ৫% গর্ভবতী নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের রোগী। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রসুতি ভ্রুণ এবং সদ্য প্রসূত শিশু সবার জন্যই বিপদজনক হতে পারে। এজন্য ইনসুলিন নিয়ে এ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগী আক্রান্ত রোগী নানা সমস্যায় ভুগতে পারেন। যেমন-

* খুবই ঘনঘন প্রস্রাব করা এবং প্রস্রাবে গ্লুকোজের মাত্রা খুবই বেড়ে যাওয়া।

* খুব বেশী পিপাসা লাগা এবং খুবই ক্ষুধা লাগা।

* বমি বমি ভাব, দূবর্লতা বোধ, শ্বাস কষ্ট হওয়া, নিস্তেজ বোধ করা এবং চোখে কম দেখা।

* খুবই অসুস্থ বোধ করা।

* বেশী ঘাম হওয়া।

* শরীরের কোথাও কেটে গেলে শুকাতে অনেক দেরি হওয়া, এমন কি সেখানে পচন ধরা।

* অচেতন হয়ে যাওয়া।

* শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

শরীরের অস্বাভাবিক নেতিবাচক পরিবর্তন বা উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগের কোন ভাইরাস বা কোন এজেন্ট আছে কিনা তা এখনও আবিষ্কার হয়নি। তাই ডাক্তারের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করেই রোগীদের ভালো থাকতে হবে। এজন্য পরিপূর্ণ শৃংখলাবদ্ধ জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অবশ্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা প্রয়োজন। হঠাৎ রক্তে চিনির স্বল্পতার কারণে আসুস্থ হয়ে পড়লে রোগীকে অনতিবিলম্বে ১ গ্লাস পানিতে চার চামচ চিনি গুলিয়ে খাইয়ে দিতে হবে। রোগী অচেতন হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। বাড়ীতে ব্যবস্থা থাকলে গ্লুকোজ ইনজেকশন দিতে হবে।

খ্যাদ্যাভাস

* ডায়াবেটিক রোগীদের খাদ্যাভাস এমনভাবে গড়ে তোলা দরকার যাতে শরীরের ওজন কাম্য সীমার মধ্যে থাকে।

* খাদ্য তালিকায় ভাত, রুটি ইত্যাদির পরিমান কমিয়ে পরিবর্তে আঁশযুক্ত শাক-সবজী বাড়িয়ে দিতে হবে।

* মিষ্টি জাতীয় খাবার কেক, পেস্তি, জ্যাম, জেলি, মিষ্টি, ঘনীভূত দুধ, মিষ্টি বিস্কুট, সফট ড্রিংক, চায়ে চিনি ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা।

* নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। ঘি, মাখন, চর্বি, মাংস ইত্যাদি কম খেতে হবে।

* যথা সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সকল ধরণের দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত থাকতে হবে।

* ধূমপান, মদ পান এবং হোটেলের খাবার পরিপূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।

ব্যায়াম

শরীর সুস্থ রাখতে হলে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। শরীরের জড়তা দূর, ধমনী-শিরায় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি ও ইনসুলিন উৎপাদন ও ব্যবহারের বৃদ্ধি ঘটাতে ব্যায়াম অতি জরুরি। দৈনিক ৪৫ মিনিট হাঁটলে এবং খাদ্যাভাস সঠিক থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

Leave a Reply