ডায়াবেটিস রোগীরাই সাধারণত নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হন। এটি এমন একটি সমস্যা যার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হাত ও পায়ের স্নায়ু মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় রোগীরা হাত ও পায়ে কম শক্তি অনুভব করেন। এছাড়া নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হলে হাত-পা ঝিম ঝিম করা, অবশ হওয়া, ডায়রিয়া, কোষ্ঠ্যকাঠিন্যসহ প্রভৃতি আরও নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় ডায়াবেটিস রোগীদের স্নায়ুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে মাছের তেল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক এমন তথ্যই জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের শতকরা ৫৯ ভাগেরই স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় তারা হাত, হাতের আঙ্গুল, পা এবং পায়ের পাতায় ব্যথা অনুভব করেন। এর ফলে আলসার হতে পারে কিংবা ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় ওমেগা ৩ ফ্যাটি আসিড সমৃদ্ধ মাছের তেলই কেবল এই অবস্থার উন্নতি ঘটায়।
মাউস মডেল ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেন, ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে মাছের তেলে সমৃদ্ধ ইনশেকজন দেওয়ার ফলে তাদের স্নায়ুগুলোর কিভাবে পরিবর্তন ঘটে। অন্যদিকে যারা ইনশেকজন নেননি তাদের স্নায়ুগুলোও পরীা করে দেখেন তারা। এতে করে গবেষকরা দেখতে পান, মাছের তেল শুধু শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সাহায্য করে না, একইসঙ্গে স্নায়ুগুলোর স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।
আইওয়া শহরের ভিএ মেডিকেল সেন্টার থেকে গবেষণাটির তদন্তকারী মার্ক ইউরেক বলেন, কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মাছের তেল ভিটামিনের মতোই গ্রহণ করা সহজ। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় তা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে শরীরের জয়েন্ট এবং চোখের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। পাশাপাশি লিভারের কার্যক্রম এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে এই তেল।
ইউরেক বলেন, ডায়াবেটিসের নানা ক্ষতিকর প্রভাব থেকে স্নায়ুগুলোকে রা করে মাছের তেল। এটি ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথির হার কমায়; সেইসঙ্গে প্রতিরক্ষামূলক এক ধরনের অনু তৈরি করে, যা স্নায়ুকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।
তিনি আরও বলেন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রোগের সম্পূর্ণ প্রতিকার করতে না পারলেও অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। এই রোগ সর্ম্পূণভাবে ভালো করে তেমন কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমলে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি ঘটে।
কাজেই ডায়াবেটিসে স্নায়ুর জটিলতা কমাতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছের তেল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ যেমন- টুনা, সারডিন্যাস, মাকেরেল ইত্যাদি মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। এছাড়া রূপচাঁদা, ইলিশ এবং পাঙ্গাশ মাছেও এই উপাদানটি সামান্য পরিমাণে রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি দ্য জার্নাল অন নিউরোসাইকোলজিতে প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: ইনফরমেশন অ্যাবাউট ডায়াবেটিস