নতুনদের জন্য DSLR ভিডিও প্রডাকশন সম্পর্কে একটু বিস্তারিত আলোচনা

images81

আলোকচিত্রী এবং উদীয়মান ভিডিও নির্মাতাগণ লক্ষ্য করতে শুরু করেছেন যে, তাদের ছবি এবং ভিডিওগুলো থেকে অর্থ আয়ের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। পেশাদার চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ যে DSLR ক্যামেরা তাদের শর্টফিল্ম এবং বিজ্ঞাপন তৈরিতে ব্যবহার করে থাকেন, শখের ভিডিওগ্রাফারাও সেই একই DSLR ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন। আপনি হয়ত ইতোমধ্যে একটি DSLR ক্যামেরা কিনে ফেলেছেন অথবা হয়ত তা কেনার পরিকল্পনা করছেন কিন্তু সেরা ভিডিও-র জন্য এটিকে কীভাবে কাজে লাগাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।

শুটিংয়ের আগে পরিকল্পনা করে নিন

আপনার বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ শুরু করার আগে আপনি কোন ধরনের ভিডিওগ্রহণ করতে চান তা ভেবে নিন। সময় নিয়ে একটি চিত্রনাট্য (storyboard) সাজিয়ে নিন এবং ভিডিওতে কী কী দৃশ্য থাকবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন। তার মানে এই নয় যে, আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভিডিও গ্রহণ করতে কিংবা চমৎকার সব দৃশ্য ধারণ করতে পারবেন না। এর অর্থ হলো, আপনি যখন পরিকল্পনা অনুসারে এগিয়ে যাবেন তখন আপনাকে উদ্দীপনার অভাবে বসে থাকতে হবে না। আপনি যদি কোনো পার্টি বা কনসার্টের দৃশ্য ধারণ করতে চান, তবে সেখানেও মূল ঘটনার কোন কোন দৃশ্য আপনি ধারণ করবেন তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিয়ে সেগুলো বি-রোলে (B-roll) সংরক্ষণ করা আপনার পক্ষে সম্ভব যেগুলোকে পরবর্তীতে ভিডিও সম্পাদনার কাজে ব্যবহার করা যাবে। 2 মিনিটের ছোট্ট একটি ভিডিওর জন্য 20 মিনিটের ফুটেজ গ্রহণের ব্যাপারটি নবীনদের মধ্যে একটি সাধারণ চর্চা হিসেবে প্রচলিত রয়েছে। আপনার ফিল্মটিতে বৈচিত্র্য আনতে ক্লোজ-আপ (close-up) এবং ডিসট্যান্ট শটের (distance shot) মত বিভিন্ন ধরনের শট নিতে ভুলবেন না যেন।

শাটার স্পিড

ফ্রেম শাটারের (frame shutter) গতি নির্ভর করে শুটিংয়ের সময় আপনার ক্যামেরার ফ্রেম রেট (frame rate) এর উপর। শাটার স্পিড হবে আপনার ফ্রেম রেটের দ্বিগুণ। অতএব, আপনি যদি প্রতি সেকেন্ডে 30 ফ্রেম হারে শুটিং করতে চান তবে আপনার শাটার স্পিড 1/60 হতে হবে। 24 fps হারে শুটিং করার অর্থ হলো শাটার স্পিড হতে হবে 1/50, কারণ তা 1/48 এর পরবর্তী পূর্ণ একক। সিনেমার ভিডিওর জন্য বেশিরভাগ ভিডিওগ্রাফার 24 fps হারে শুট করতে পছন্দ করেন, আর টেলিভিশনের ক্ষেত্রে তা সাধারণত 30 fps হয়ে থাকে। 60 fps হারে শুটিং করা হলে সফটওয়্যার প্রোগ্রামের কৌশল প্রয়োগে তা থেকে চমৎকার স্লো-মোশন ভিডিও তৈরি করা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ডেনসিটি ফিল্টার (density filter) ব্যবহার করে ছবির মানের ক্ষতিসাধন না করেও আলোর পরিবর্তন ঘটানো যায়। ফিল্টারটি যে খুব বেশি দামী হতে হবে তা-ও নয়।

ট্রাইপড (Tripod)

ছবি তোলার সময় আলোকচিত্রীরা শুরুতেই শিখে নেন কীভাবে তাদের শারীরিক ভঙ্গির দ্বারা ক্যামেরাকে স্থির রাখতে হয় কিংবা পারিপার্শ্বিক কোনো বস্তুর সাহায্যে কীভাবে তাদের বাহুকে স্থির রাখতে হয়। ভিডিও গ্রহণের সময় আপনার সর্বদাই একটি ট্রাইপডের (tripod) প্রয়োজন হবে। বেশিরভাগ DSLR ক্যামেরার বিল্ট ইন ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (built in image stabilization) যদিও ছবির কম্পন কমিয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে, তবুও তাতে কম্পন পুরোপুরি দূর হবে না। এমনকি সীমিত মূল্যের DSLR সরঞ্জামগুলোতেও ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন ব্যবস্থা থাকে। ভিডিও গ্রহণের জন্য ক্যামেরায় ব্যবহারের বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। তারপরও, দৃশ্য শুটিং করতে ট্রাইপডের (tripod) মত এমন কাজের জিনিস আর দ্বিতীয়টি নেই। ভিডিও ট্রাইপডের (video tripod) রোলার (rollers) রয়েছে যেটি মসৃণ গতির জন্য প্যান এবং টিল্ট (pan and tilt) করার সুবিধা প্রদান করে।

অডিও

ভিডিও গ্রহণে হাত পাকাতে হলে অনেক কিছু বিবেচনা করার রয়েছে। জীবনে সকলেই কমবেশি ছবি তুলেছেন, কিন্তু ভিডিও গ্রহণের কাজে হাত লাগানো কিছুটা কঠিন বলে মনে হতে পারে। ভিডিও শুটিংয়ের সময় আপনাকে অডিওর মত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। ভিডিও গ্রহণের সময় মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া এয়ারপ্লেনের শব্দ, পোষাকের খচমচ শব্দ কিংবা অন্য ঘরের লোকজনের কথাবার্তার মত যেসব শব্দকে আপনি গুরুত্বহীন বলে ভেবেছিলেন পরে দেখা গেল ক্যামেরার মাইক্রোফোনে ধরা সেই শব্দগুলোই বিচিত্র আওয়াজ হয়ে বের হয়ে আসছে। তাই পেশাদারি মানের ভিডিও পেতে চাইলে আপনার পক্ষে একটি মাইক্রোফোন ক্রয় করতে কিছু অর্থব্যয় করা জরুরি।

ফাইনাল প্রডাক্ট (The Final Product)

আগের দিনের টেলিভিশন ও ভিডিও ক্যামেরাগুলো 4:3 অনুপাতে ভিডিওধারণ করত। আজকাল ওয়াইড ফ্লাট স্ক্রীন টেলিভিশন (wide flat screen television) ও মনিটর সুলভ হওয়ায় আগের দিনের চিত্রধারণ অনুপাতটি (aspect ratio) পুরোনো হয়ে গেছে। এটি এখন ভিডিওর উপর লেটারবক্সিং (letterboxing) তৈরি করবে। অর্থাৎ, ছবি স্ক্রীনের প্রশস্ততার পূর্ণমাপে প্রসারিত হতে না পারায় ভিডিওর চারপাশে কালো রেখা দেখা যায়। লেটারবক্সিং এড়াতে ওয়াইড স্ক্রীন মনিটরগুলোর (wide screen monitors) জন্য 16:9 মাপের চিত্রধারণ অনুপাত প্রয়োজন হয়। ক্যামেরার উপর নির্ভর করে হাই ডেফিনেশনের (high definition) জন্য 1280 x 720 অথবা 1920 x 1080 অনুপাত প্রয়োজন হতে পারে।

অতিরিক্ত সরঞ্জাম

যখন ভিডিও ধারণ করতে যাবেন তখন অতিরিক্ত ব্যাটারি ও মেমোরি স্টিক (memory sticks) সঙ্গে নেয়াটা নিশ্চিত করুন। আপনার ভিডিওটি ক্যামেরার নিজস্ব মেমোরির চাইতে বেশি জায়গা নিতে পারে এবং যেহেতু তা অনেকক্ষণ ধরে একটানা চলবে তাই ব্যাটারিও খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবে। দিনের সেরা দৃশ্যটি শুট করতে গিয়ে আপনি দেখলেন যে আপনার ব্যাটারির চার্জ প্রায় শেষ- এমনটি ঘটুক তা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না। ক্যামেরা যখন একটানা চলে তখন তা খুব বেশি গরম হয়ে উঠতে পারে তাই মাঝে মাঝে একে বিশ্রাম দেয়ার কথা মনে রাখুন।

মজা করুন

চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রধারণ করতে যাওয়ার সময় যদিও পরিকল্পনা করে যাওয়াটা জরুরি তারপরও মজা করা এবং আপনার সৃজনশীলতাকে উস্কে দেয়াটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সবচাইতে সেরা দৃশ্যটি হয়ত পরিকল্পনা থেকে নয় বরং ক্যামেরা নিয়ে বিস্ময়কর সব দৃশ্যধারণের জন্য প্রস্তুত থাকার কারণেই ঘটে। ক্যামেরার নাড়ীনক্ষত্র জানতে এটির সেটিংস নিয়ে খেলতে লেগে যান এবং এভাবেই আপনি এটির কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। ফোকাসিং (focusing) এবং প্যানিং (panning) ঠিকভাবে করতে না পারলে তা বেশ দুরুহ হয়ে উঠতে পারে। তবে শিখবার একমাত্র উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে ভিডিওধারণ করতে থাকা। আপনার ক্যামেরাটি দিয়ে কোন পদ্ধতিতে কাজ হয় আর কোনটিতে হয় না সেসবের একটি নোট রাখুন। প্রত্যেক ডিজিটাল ক্যামেরা আলাদা আলাদা। আপনাকে আপনারটি সম্পর্কে জানতে হবে।

Leave a Reply