বুদ্ধি কী – এ নিয়ে রয়েছে নানা জনের নানা মত! শরীরের কোনো অঙ্গের মতো নির্দিষ্ট সীমারেখায় বুদ্ধির অবস্থান নয় বলে বুদ্ধির সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে আজও এত মত পার্থক্য। সাধারণত ফ্রন্টাল লোব এবং টেম্পোরাল লোব মস্তিষ্কের এই দুটি অংশ মানুষের বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানী ওয়েশলারের মতে বুদ্ধি হলো মানুষের এমন এক মানসিক অবস্থা যেখানে সে পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে দক্ষভাবে মানিয়ে নিতে, বাস্তব চিন্তা করতে এবং পরিবেশ অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারে। তবে এ কথা সবসময় মনে রাখা দরকার যে বুদ্ধি কখনো বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হয় না। বুদ্ধির বিকাশ পুরোপুরি পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। তবে কিছু শারীরিক বিষয়ও বুদ্ধির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন অক্সিজেন সংবহন, পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ ইত্যাদি। আর বুদ্ধি কম বা বেশি হওয়াও এর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
ব্যায়ামে বাড়ে বুদ্ধি
অনেকের ধারণা যাঁরা খেলাধুলা বা ব্যায়াম করেন তাঁরা একটু মোটা বুদ্ধির মানুষ হন, আর যাঁরা দিনরাত বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকেন তাঁরাই উচ্চ মাত্রার বুদ্ধি রাখেন। কিন্তু কথাটি আদৌ সত্যি নয়। ব্যায়াম বা খেলাধুলায় শরীরের ক্ষিপ্রতা বাড়ে, আর সে নির্দেশ দেয় কিন্তু মস্তিষ্কই। গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্ককে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখতে প্রতি মিনিটে প্রতি একশো গ্রাম ব্রেন ট্যিসুতে পঞ্চান্ন মিলিলিটার রক্ত, পাঁচ দশমিক পাঁচ মিলিগ্রাম গ্লুকো এবং তিন দশমিক পাঁচ মিলিলিটার অক্সিজেন সংবহন প্রয়োজন। শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম মস্তিষ্কের এই চাহিদা পূরণ করতে পারে। সুতরাং শরীর ও মন ভালো রাখতে এবং পরোক্ষভাবে বুদ্ধির সঠিক বিকাশে ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিন ভোরবেলায় খোলা হাওয়ায় রাস্তা, পার্ক বা মাঠে আধঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করুন। এছাড়া যোগব্যায়াম বা মেডিটেশনও করতে পারেন।
বুদ্ধি বাড়াতে খাদ্য
মেধা বাড়ানোর জন্য বাজারে বিভিন্ন রকম টনিক কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সত্যিই কি টনিক খেলে স্মৃতিশক্তি বা বুদ্ধি বাড়ে? যদিও সমস্ত পৃথিবী জুড়ে এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে, কিন্তু এখনো তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু স্মৃতিবর্ধক ওষুধ বেরিয়েছে বটে কিন্তু মস্তিষ্কে পৌঁছোবার আগেই তাদের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেকটা টাকে চুল গজানোর ওষুধের মতো। তবে সুষম খাবার মস্তিষ্কের পুষ্টিতে একটা বড় ভূমিকা পালন করে।
স্নায়ুতন্ত্রের ৭০ শতাংশ গঠিত পানি দিয়ে আর বাকি ৩০ শতাংশ কঠিন পদার্থ দিয়ে। এই ৩০ শতাংশ তৈরি প্রোটিন, যেমন গ্লোবিউলিন, নিউক্লিও প্রোটিন ইত্যাদি ন্যাচারাল ফ্যাট (ফসফোলিপিড ইত্যাদি), কার্বোহাইড্রেট, সোডিয়াম, ক্যালসিয়ামযুক্ত অজৈব লবণ, ভিটামিন এবং মিনারেল দিয়ে। তাই সঠিক সময়ে সুষম খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে অল্প পরিমাণে ঘি বা মাখন, প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, ডিম, মাংস, পনির, ছানা ইত্যাদি সবই খাওয়া প্রয়োজন। সঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন। প্রসঙ্গত, গ্রে ম্যাটারের নিউরন গ্লুকোজের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। রক্তে সব সময় নির্দিষ্ট মাত্রার গ্লুকোজ থাকা জরুরি। এ কারণেই ডায়াবেটিস রোগীদের সাথে গ্লুকোজ নিয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই কারণে অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে মাথা ঘোরা শুরু হয়।