পানি বিশুদ্ধ করার সঠিক পদ্ধতি

মানবদেহের ৭৫ শতাংশই পানি। পরিপাক, সংবহন, পুষ্টিকণা পরিবহন, খাদ্য শোষণ ও বিপাক, তাপমাত্রা ও ভারসাম্য রক্ষাসহ শরীরের প্রতিটি কাজে পানির প্রয়োজন হয়। অথচ এই পানিই কখনো কখনো নানা রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ আসলে পানিবাহিত।
জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি নয়জনের একজন বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানির আওতায় নেই। প্রতি তিনজনে একজন সঠিক পয়োনিষ্কাশনের আওতার বাইরে। ফলে দেখা দিচ্ছে নানা রোগবালাই। কেবল বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন পানি ব্যবহারের মাধ্যমে দুনিয়াজুড়ে পানিবাহিত রোগ এবং এ কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ২১ শতাংশ কমানো যেতে পারে।

পানি বিশুদ্ধ করার সঠিক পদ্ধতি কোনটি, এ নিয়ে অনেকেরই আছে বিভ্রান্তি। পানি ফুটিয়ে পান করা ভালো, নাকি ফিল্টার করে, নাকি দুটোই?

* পানি ফুটিয়ে নেওয়া সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি। এতে জীবাণু, পরজীবী এমনকি তার ডিম ও লার্ভাসহ সবই ধ্বংস হয়। পানি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কমপক্ষে ১০ মিনিট ধরে ফোটাতে হবে। তারপর তা ঠান্ডা করে কলসি, কাচের জগ বা পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। রেখে দেওয়া ফোটানো পানিতে আবার জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে—বিশেষ করে, যদি তা বেশি দিন রেখে দেওয়া হয়। তাই রোজকার পানি রোজই ফুটিয়ে নেওয়া ভালো।

* পানি ফোটালে জীবাণু ও পরজীবী ধ্বংস হয় বটে, তবে সব রাসায়নিক উপাদান নষ্ট হয় না। ফোটানো পানিতে কখনো কখনো ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় তলানি পড়ে। এর সবগুলো যে খারাপ, তা নয়। তবে খনিজ উপাদানের কারণে পানি ঘোলাটে বা অপরিচ্ছন্ন দেখালে ছেঁকে নেওয়া যেতে পারে।

* ফোটানো পানি আবার ফিল্টার করা প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আসে। পানি ফোটানোর মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণু দূর করা সম্ভব, তবে সন্দেহ হলে ফিল্টার করা যায়। বেশির ভাগ ফিল্টার আসলে পানির স্বাদ ও গন্ধকেই উন্নত করে।

* ভ্রমণে, বনজঙ্গলে, ক্যাম্পে বা দুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা হয়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, তবে জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ চালানো যেতে পারে।

* বাইরে বা ভ্রমণের সময় কেনা পানির চেয়ে বাড়ি থেকে বোতলে পানি নেওয়ার চেষ্টা করুন। কাচ ও স্টিলের পাত্রে পানি সংরক্ষণ করাই সবচেয়ে ভালো।

Leave a Reply