ফেসবুক, গুগল বা ইয়াহু অাইডি খোলার অাগে শর্তগুলো অবশ্যই

ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া (ক্রেডিট কার্ডসহ) অার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, সার্চ ইঞ্জিন গুগল এবং ইয়াহুতে অাইডি খোলা প্রায় একই রকম কাজ। কোনও শর্ত ভালোভাবে না পড়ে শুধু ‘একসেপ্ট’ বাটনে ক্লিক করে চলে যাওয়া মানে সমস্যার শুরু। নগদ ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। পাতার পর পাতা শর্ত না পড়ে কেবল চোখ বুঁজে সই করে যাওয়া!

ফল, কোনও ঝামেলা হলে অপর প্রান্তের উত্তর রেডি, ‘অাপনি তো জেনে বুঝেই সাইন করেছেন (একসেপ্ট) করেছেন স্যার। অামাদের কিছুই করার নেই।’ তখন অনিবার্য পরিণতি, বসে বসে মাথার চুল ছেঁড়া।

হালে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে এবং দিন দিন তা বাড়ছে। ব্যাংক ঋণের বিষয়টি এখানে উল্লেখ করা হলো ‘সাদৃশ্য’ অর্থে। ফেসবুক, গুগলে কোনও অাইডি খোলার অাগে তার শর্তগুলো ভালোভাবে পড়ে নেওয়াটা জরুরি কাজগুলোর একটি। তা সে ফেসবুকের বেলায় হোক বা ইয়াহুর বেলায় হোক। শর্ত না পড়ে অাইডি খুললে নিজের নিবুর্দ্ধিতায় নিজেই ফেঁসে যেতে পারেন।

ফেসবুক-গুগল-বা-ইয়াহুইদানিং ফেসবুক, ইয়াহু এবং গুগল তার শর্তাবলীতে নতুন নতুন বিষয় যোগ করছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ফেসবুক নতুন শর্ত যুক্ত ক‌‌‌রেছে। যা ব্যবহারকারীদের ইনবক্সে নোটিফিশেন অাকারে পাঠিয়েছিল। পড়েছেন কী? না পড়লে পুরনো নোটিফিকেশনগুলো অাবার চেক করে নিন।

ফেসবুকের নতুন শর্তগুলো ধারণ করতে লেগেছে ১৫০ পৃষ্ঠা। অাগে ফেসবুকে নতুন ফিচার এবং কন্ট্রোল সিস্টেম আনা হয়েছিল। নতুন যুক্ত শর্তাবলীর ফলে বহারকারীর অভিজ্ঞতা আরও ভালো হবে এবং ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। নতুন শর্তের ‘প্রাইভেসি বেসিকস’ পাতায় কীভাবে ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে বিষয়ে বলা হয়েছে। নতুন শর্তে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করে স্থানীয় বিজ্ঞাপনগুলো ফেসবুক ওয়ালে প্রদর্শন করা হবে। এতে করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দাতার সংখ্যা বাড়বে।

এদিকে গুগল বলছে বিজ্ঞাপন ছাড়া ‘গুগল ওয়েবসাইট’ দেখতে হলে ভিজিটরদের টাকা দিয়ে দেখতে হবে। টাকা অায়ের নতুন ব্যবস্থা চালু করতেই গুগলের এ উদ্যোগ। নতুন এ ব্যবস্থার নাম ‘কন্ট্রিবিউটর পেমেন্ট সার্ভিস’। এ ব্যবস্থায় যদি কোনও নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গুগলের বিজ্ঞাপন দেখতে না চান কোনও ইন্টারেনট ব্যবহারকারী তাহলে তাকে মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। গুগলের বিজ্ঞাপন অায়ের পরিবর্তে মাসিক ‘গ্রাহক’ ফি হিসেবে এ ব্যবস্থা চালু হবে। ফি দেওয়ার ফলে ওয়েবসাইট ভিজিটররা সংশ্লিষ্ট সাইটে গুগলের কোনও বিজ্ঞাপন দেখবেন না। পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবা চালু হয়ছে। সুতরাং ভালোভাবে কোনও কিছু না পড়ে ‘একসেপ্ট’ করে নিলে পে-পল, মানিবুকারস বা অন্যকোনও অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসরে অাপনার টাকা থাকলে তা কেটে নেবে গুগল। অাবার দুষ্টু চক্রের ফাঁদে পড়াও বিচিত্র নয়।

এদিকে নতুন ই-মেইল অাইডি খুলতে ফোন নম্বর বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে জি-মেইল ও ইয়াহু। স্প্যাম ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। নতুন নিয়ম করা হলে ফোন বা মোবাইল নম্বর ছাড়া মেইল অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না। নম্বর যাচাই বাছাই করেই মেইল অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করবে কর্তৃপক্ষ। তবে তবে ইয়াহু কর্তৃপক্ষ শুধু মোবাইল ফোন নম্বরকেই বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে। অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক কোনও কিছু দেখলে মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করা হবে।

সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে নীতিমালায় নিত্য পরিবর্তন অানছে। ফলে না জানা এবং উদাসীন থাকার কোনও সুযোগ নেই। এসব সেবা ব্যবহারের পাশাপাশি তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাম্প্রতিক হালনাগাদ তথ্য (গাইডলাইন, নীতিমালা, শর্ত) সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। তা না হলে শর্তের বেড়াজালে পড়ে অনেক তথ্যই চলে যাবে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে।

কারণ অাপনি এসব (ফেসবুক, ইয়াহু এবং গুগল) প্রতিষ্ঠানের কাছে সব ধরনের তথ্য দিয়েই তবে তাদের সেবা নিচ্ছেন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে অাপনার কোনও তথ্যই অার গোপন থাকছে না। অাপনিও নিরাপদ থাকছেন না তথ্য দিয়ে। অাপনার হাতে কেবল যা থাকে তা হলো অাপানার অাইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) নম্বর। এই নম্বরটাই কেবল পায় না ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু, টুইটারসহ অার যা কিছু অাছে।

Leave a Reply