ফ্যাশনে শাড়ি

ফ্যাশনের প্রতিটি অংশের মত প্রতিনিয়ত শাড়ির ডিজাইন ও পরার ধরণ পরিবর্তিত হচ্ছে। কন্ট্রাস্ট কালারে প্যাচওয়ার্ক করে তৈরি হচ্ছে শাড়ি। কখনো ম্যাটেরিয়ালে বৈপরীত্য আনা হচ্ছে, কখনো কালারে।
বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ি। দেশী-বিদেশী অনেক পোশাক পরলেও বাঙালি নারী এক সময় ফিরে যায় শাড়ির কাছে। বাংলা সাহিত্য ও বাংলা গানে শাড়ি পরিহিত বঙ্গললনার কথা বা বর্ণনা উঠে এসেছে বারবার। আর উঠে আসবেই বা না কেনÑ শাড়ি তো শুধু একটি পোশাক নয়, শাড়ি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। অন্য দিকে শাড়ির প্রতি বাঙালি নারীর মমত্বও কম নয়। শাড়ির মধ্যেই যেন তারা খুঁজে পান সাজের পূর্ণতা। বিশেষ করে যেকোনো উৎসব বা পার্বণে বাঙালি নারী শাড়িকেই বেছে নেন পছন্দের পোশাক হিসেবে। তবে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, শাড়ির ফ্যাশনও প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। বাংলার মসলিন যেমন এককালে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিল, তেমনি এ অঞ্চলের নিজস্ব বস্ত্রশিল্প জামদানি, সুতি, তাঁত, গ্রামীণ চেক, সিল্ক, কাতান প্রভৃতি শাড়ির সুখ্যাতিও কম নয়। এসব শাড়ির সবই যেন একেকটি উচ্চমানের শিল্পকর্ম। বিশেষ করে জামদানি এখনো আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ফ্যাশনের প্রতিটি অংশের মত প্রতিনিয়ত শাড়ির ডিজাইন ও পরার ধরণ পরিবর্তিত হচ্ছে।
একসময় নির্দিষ্ট শাড়ির জন্য ছিল নির্দিষ্ট সুতা ও নির্দিষ্ট ডিজাইন। এখন আর কোনো কিছুতেই সেই সীমাবদ্ধতা নেই। নানাভাবে, নানা আঙ্গিকে ও ডিজাইনে বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের শাড়ি। যেমনÑ একসময় জামদানি শাড়ির নকশা ছিল নির্দিষ্ট। বুটিদার, তেরছা, ঝালরওয়ালা, পানাফুল, তারাফুল ইত্যাদি নামে ডিজাইন করা হতো জামদানি শাড়ির ওপর। এখন এসব নকশার সাথে যোগ হচ্ছে লেস, জরি, পাথর, পুঁতি আরো কত কী! এসবের ব্যবহার জামদানি শাড়িকে উপস্থাপন করেছে নতুন আঙ্গিকে। অন্য দিকে সুতি, তাঁত প্রভৃতি শাড়িতে করা হচ্ছে জামদানির নকশা। একইভাবে উন্নতমানের রেশম সুতার সাথে জরি ও তার মিশিয়ে ফুটিয়ে তোলা হতো বেনারসির শাড়িতে নকশা। এখন তো কাতানেরই রয়েছে অনেক ভ্যারাইটি। শিফন, ব্রোকেট, তসর, জর্জেট বিভিন্ন রকম কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে কাতান বা বেনারসির নকশা। সেই সাথে লেস, জারদৌসি, পুঁতি, পাথরÑ এসবও ব্যবহার করা হচ্ছে জমকালো ভাব আনার জন্য। ফ্যাশন হাউজ চরকার কর্ণধার ও ডিজাইনার জাভেদ কামাল বলেন এ সময়ের শাড়ির ফ্যাশন প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, কন্ট্রাস্ট কালারে প্যাচওয়ার্ক করে তৈরি হচ্ছে শাড়ি। কখনো ম্যাটেরিয়ালে বৈপরীত্য আনা হচ্ছে, কখনো কালারে। জর্জেটের সাথে নেটের কম্বিনেশন করে প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে চরকা কিছু শাড়ি করেছে। পাড় ও আঁচলে থাকছে একাধিক লেসের ব্যবহার। রঙের ক্ষেত্রে মাল্টিকালারকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। লেসের ক্ষেত্রে জারদৌসি কাজের লেসকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তবে এক রঙের রিবনের ব্যবহারও চলছে ব্যাপক ভাবে।
মসলিন শাড়িতেও প্যাচওয়ার্ক করে শাড়ি করা হয়েছে। এখানেও একাধিক রঙের ও প্রিন্টের মসলিন কাপড়ের ওপর লেসের পাড় বসিয়ে প্যাচওয়ার্ক করা হয়েছে। পার্টি ড্রেস হিসেবে এসব শাড়ির এখন ব্যাপক চাহিদা।
এন্ডি, হাফসিল্ক ও কিছু সুতির শাড়িতেও কুচিতে চেক বা স্ট্রাইপ রেখে প্লেন বডি ও আঁচলে মাল্টিমিডিয়ার কাজ করে একই আমেজ এনে কিছু শাড়ি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও সিল্কের সাথে জর্জেট সুতা মিক্স করে পুরো উইভিংয়ে করা হচ্ছে শাড়ি। পুরো শাড়িতে উইভিংয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ফুলেল বা জ্যামিতিক নকশা।
অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী নুসরাত। তার পছন্দের পোশাকের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘শাড়ি আমার সবচেয়ে পছন্দ। যেকোনো অনুষ্ঠান হলেই আমি শাড়ি পরতে পছন্দ করি। আমার কাছে শাড়িকেই সবচেয়ে ফ্যাশনেবল পোশাক বলে মনে হয়। এমনিতে আমার পছন্দের শাড়ি জামদানি, তবে চলতি ফ্যাশনের শাড়িকেই আমি  প্রায়োরিটি দেই।’
ফ্যাশন হাউজ রঙের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা এ সময়ের শাড়ির ফ্যাশন সম্পর্কে বলেন, দুই ধরনের শাড়ির ক্রেতা আছেন। একটা গ্রুপ ট্রেডিশনাল ডিজাইনের শাড়ি পছন্দ করেন। অন্য আরেকটি গ্রুপের পছন্দ একটু ডিজাইনেবল ফেন্সি শাড়ি। কন্ট্রাস্ট শাড়িতে লেস বা রিবনের সাহায্যে প্যাচওয়ার্ক করে উপস্থাপনা করা হয় শাড়িতে। এ রকম ডিজাইনারস শাড়ি কয়েক বছর ধরে চললেও এ বছর এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। মূলত পার্টি উপযোগী করে এই শাড়িগুলো করা হচ্ছে। প্যাটার্ন-বেজ এ ধরনের শাড়ি তাঁত ও মসলিনের ওপরও করা হয়ে থাকে। তাঁতের ওপর ভ্যালু অ্যাডিশন করে করা শাড়িও বেশ চলছে।

Leave a Reply