বন্ধ লোমকূপের কাহিনী ও প্রতিকার

হাত ও পায়ের তালু ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশে সবারই ত্বকের নিচে লোমকূপে এক ধরনের গ্রন্থি থাকে। গ্রন্থি থেকে ‘সেবাম’ নামে এক ধরনের রস নিঃসৃত হয়। ত্বকে ‘প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনি’ নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা গ্রন্থি হতে নিঃসৃত ‘সেবাম’কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। লোমকূপ গুলো আকারে অনেক ছোট থাকে সাধারণত যা খালি চোখে দেখা যায় না। প্রশ্ন জাগতে পারে পোরের কার্যকারিতা সম্বন্ধে। ত্বকের ন্যাচারাল তেল এই পোরের মাধ্যমে বের হয়ে ত্বককে ময়েশচারাইজ করে তোলে। তাই এই পোরগুলো কেমিকেল বা তেল দ্বারা অতিরিক্ত ময়লা করে রাখা যাবে না। বন্ধ লোমকূপ স্কিনের এক ধরনের অস্বাভাবিকতা। ফলে আমাদের মুখে ব্ল্যাকহেডস, ব্রণ আক্রমণ করে।

কী কী কারনে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারেঃ

প্রথমত – ত্বকের গ্রন্থির অস্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য এমনটি হতে পারে। সেবাসিস গ্ল্যান্ড অনেক সময় অতিরিক্ত সেবাম এবং অন্যান্য তেল উৎপন্ন করে। লোমকূপের লোমগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত তেল এবং তরল লোমকূপগুলো বন্ধ করে দেয়।

দ্বিতীয়ত – দিনের পর দিন পরিবেশ থেকে আসা ধূলো ময়লা আমাদের ত্বকে এক ময়লার আবরন তৈরি করে আর এই কারণেই অনেক সময় লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়।

তৃতীয়ত – ৩০ দিন দিন পর পর আমাদের দেহে নতুন কোষ জন্মায়। তখন যদি পুরানো মৃত কোষ গুলো পরিষ্কার করা না হয় তাহলে এগুলো ত্বকের ওপর জমে লোমগ্রন্থি বন্ধ করে দেয়।

বন্ধ লোমকূপের কারণে ত্বকের কিছু সমস্যাঃ

ব্ল্যাকহেডস্ বা হোয়েটহেডস হলো ব্রণের প্রাথমিক পর্যায়। ব্ল্যাকহেডসের মুখ ব্রণের মুখের চেয়ে বেশি প্রশস্ত থাকে। অধিক সময় ধরে মুখের লোমকূপ গুলো থেকে বের হওয়া অতিরিক্ত তেলের সাথে ধূলো-ময়লা যোগ হয়ে সেই লোমকূপ গুলোকে বন্ধ করে দেয়। এভাবেই তৈরি হয় ব্ল্যাক হেডস্। এন্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে লোমের গোড়াতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া সেবাম থেকে ফ্যাটি এসিড তৈরি করে। এসিডের কারণে লোমেকূপের গোড়ায় মানে সেবাসিস গ্লান্ডে আর স্কিনের হেয়ার ফলিকলে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং লোমের কেরাটিন জমা হতে থাকে। যা পরবর্তীতে রূপান্তরিত হয় ব্রণে।

ক্লগড পোরস পরিষ্কার করার উপায়ঃ

০১. স্টিম দিয়ে পোর পরিষ্কার করুনঃ

Steaming

প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন যেন কোন ধুলো বা ময়লা না থাকে। মুখে, চোখে যদি মেক-আপ থাকে সেটাও মেক-আপ রিমুভার দিয়ে তুলে ফেলুন। এবার মুখে কয়েকবার উষ্ণ পানির ছিটা দিন এতে করে মেক-আপ রিমুভার এর অংশ বিশেষ থাকলে সেটাও চলে যাবে। এরপর চাইলে হালকা কোন ক্লিনজার-ও ব্যবহার করতে পারেন। এখন স্টিম নেয়ার পালা। একটি বড় গামলাতে ধোঁয়া ওঠা গরম পানি নিন, ইচ্ছা করলে এই পানির মধ্যে গ্রিন টি বা অন্য কোন হার্ব মিশিয়ে নিতে পারেন যেটার এক্সট্রাক্ট আপনার ত্বককে করে তুলবে লাবণ্যময়ী। টি ট্রি অয়েল পেলে সেটাও পানিতে মিশাতে পারেন, কারণ এটা ব্রণ সারানোর জন্য উপকারী। এখন গামলা থেকে ১ হাত উঁচুতে আপনার মুখটা রাখুন তারপর তোয়ালে দিয়ে গামলা সহ মুখটা ঢেকে ১০ মিনিট এভাবে থাকুন। এতে করে আপনার মুখের পোর খুলে যাবে আর সহজেই পোরে থাকা ময়লা আপনি পরিষ্কার করে ফেলতে পারবেন। ময়লা পরিষ্কার করার পর বরফ দিয়ে মুখ ঘষে নিন তাহলে পরিস্কার খোলা পোর আবার বন্ধ হয়ে যাব

০২. এক্সফলিয়েট করুন আপনার ত্বকঃ

মুখে শুকনো ব্রাশ ব্যবহার করে এক্সফলিয়েট করাটা বেশ পুরোন পদ্ধতি কিন্তু বর্তমান যুগে এটা অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এমন একটা ফেসিয়াল ব্রাশ কিনুন যেটার ব্রিসেল নরম এবং ন্যাচারাল ফাইবার দিয়ে তৈরি। এই পধতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মুখ এবং ব্রাশ ২টাই যেন শুকনো থাকে। তানাহলে এই পদ্ধতি কাজ করবে না। হালকা হাতে মুখে ব্রাশ দিয়ে সার্কেল করে ব্রাশ করুন। চোখের এরিয়াতে যেন না লাগে। ব্রাশিং শেষ হলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন, ময়েশ্চারাইজার লাগান। যদি ব্রাশিং পধতি আপনার পছন্দ না হয় তাহলে আপনি ঘরোয়া ফেসিয়াল স্ক্রাবও লাগাতে পারেন। গরম পানিতে কয়েক চামচ গ্রিন টি দিয়ে অপেক্ষা করুন পানিটা রঙ্গিন হওয়ার আর ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য। এবার এতে এক টেবিল চামচ চিনি আর এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। পরিষ্কার মুখে এটা অ্যাপ্লাই করুন আর হালকা ভাবে ম্যাসাজ করুন। সব শেষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

০৩. ডিপ ক্লিন করুন আপনার পোরঃ

২ টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল ভালো ভাবে মেশান। পুরো মুখে এই মিশ্রণটি দিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই সিম্পল মাস্ক পোরের গভীরে পৌঁছে সব দূষিত পদার্থ বের করে আনবে, একই সাথে ত্বকে পুষ্টি যুগিয়ে নরম কোমল করে তোলে।

০৪. ফেসিয়াল মাস্ক লাগানঃ

মুলতানি মাটির নাম তো রূপ সচেতন সব নারীই শুনেছেন।এই মুলতানি মাটি পোরে আটকে থাকা সব ময়লা টেনে বের করে আনে। এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক টেবিল চামচ পানি, এক টেবিল চামচ ওটমিল মিশান। তারপর মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০মিনিট। যখন দেখবেন মুখটা টান টান হয়ে আসছে তখন বুঝবেন মুলতানি মাটি তার কাজ শুরু করে দিয়েছে মানে পোর থেকে সব ময়লা বের করা শুরু করেছে। পুরো মুখ শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

যদি আপনার ক্লগড পোরস থেকে থাকে তাহলে শুধু পানি দিয়ে মুখ পরিস্কার করলে চলবে না। আপনার ব্ল্যাকহেডস্ থাকুক আর না থাকুক ওপেন পোর পরিস্কার করার জন্য সঠিক যত্ন দরকার। তবে একটা কথা মনে রাখবেন যখন আপনার ত্বকে ব্ল্যাকহেডস্ দেখা দেবে বুঝবেন যে আপনার পোরগুলো আংশিকভাবে ব্লক হয়েছে আর হোয়েটহেডস দেখলে বুঝবেন পুরোটায় ক্লগ হয়ে গেছে। আমি পরামর্শ করবো যাদের এখনও ব্ল্যাকহেডস্ বা হোয়েটহেডস হয়নি তারাও আগে থেকে ত্বকের যত্ন নিন। আর যাদের ব্ল্যাকহেডস্ হয়ে গেছে তারা আর অপেক্ষা না করে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করুন। এখানে আমি সব ঘরোয়া উপায় বলেছি আশা করছি এগুলোতেই আপনার বন্ধ লোমকূপের সমস্যার সমাধান হবে।

Leave a Reply