বিবি ক্রিম এখন নিউ ট্রেন্ড। ফাউন্ডেশন প্রতিদিন ব্যবহার করা যায় না। ফাউন্ডেশনের বদলে প্রতিদিন আমরা বিবি ক্রিম ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া বিবি ক্রিম হল মাল্টি পারপজ ক্রিম। খুব বেশিদিন হয়নি বিবি ক্রিম জন্মের। মাত্র কয়েক বছর। এর মধ্যেই বিবি ক্রিম বিশাল সারা ফেলেছে মেক-আপ জগতে। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া তে বিবি ক্রিম এসেছে ২০১২ তে। প্রধানত ইন্ডিয়া থাইল্যান্ড, চায়না তে তৈরি বিবি ক্রিম আমাদের দেশে পাওয়া যায়। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি চলে Garnier, Lakme, Ponds, Maybelline ইত্যাদি।
বিবি ক্রিম কি ?
১৯৫০ সালে জার্মানির ডারমাটলজিস্ট ক্রিস্টিন বিবি ক্রিমের কথা চিন্তা করেছিলেন। এমন কিছু যা ত্বকের সকল প্রয়োজন পূরণ করবে। বিবি ক্রিমের অর্থ হলো বিউটি বাম যেটা মুখের দাগ, রেডনেস, সানস্ক্রিনের প্রয়োজন মেটাবে। কোরিয়াতে বিবি ক্রিম চলছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। মোটামুটি কোরিয়ান বিবি ক্রিম সব চাইতে ভালো। কোরিয়ান মার্কেটে এতো বেশি জনপ্রিয়-ও হয়েছে যে এটা পরে আমেরিকা থেকে এশিয়াতে এসেছে।
বিবি ক্রিম এর কাজ ?
০১. বিবি ক্রিমে ময়েশ্চারাইজার থাকবে।
০২. মুখের সব ইম্পারফেক্সন দূর করবে।
০৩. মুখের বেস অথবা প্রাইমারের কাজ করবে।
০৪. কম হলেও SPF ২০ মানের সানস্ক্রিন থাকবে।
০৫. মুখের কন্সিলারের কাজ করবে।
০৬. মুখের বলিরেখা দূর করবে।
০৭. ফাউন্ডেশনের কাজ করবে।
Garnier BB cream miracle skin perfector :
এই বিবি ক্রিম কেনার আগে, আমি একেক জনের কাছ থেকে একেক রকম মন্তব্য শুনেছি। কেউ বলে শুষ্ক ত্বকের জন্য ভালো, আবার কেউ বলে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো। কিন্তু আমার মতে এটা তৈলাক্ত অথবা কম্বিনেশন ত্বকের জন্য ভালো। এই বিবি ক্রিম সিয়ার থেকে লাইট কভারেজ দিবে। মুখের বেস তৈরি করার জন্য এই ক্রিম ভালো, কিন্তু যাদের রঙ কালো, তাদের জন্য হয়তো বা এই ক্রিম ম্যাচ করবে না। Garnier BB cream এর একটাই শেড আছে। এই বিবি ক্রিমটি দিলে প্রথমে একটু ফর্সা লাগলেও পরে অক্সিডাইজ করে। তাছাড়া আমাদের দেশে প্রচুর গরম পড়ে, এই বিবি ক্রিম গরমের জন্য একদম ই “না”। কারণ বাইরে ৩/৪ ঘণ্টা থাকার পর মুখ অক্সিডাইজ করে কালো লাগে। সম্ভবতও এটি শীতের জন্য ভালো হবে। কিন্তু যেকোনো ময়েশ্চারাইজার দেয়ার পর এটি দিতে হবে।
প্রতিদিনের হালকা মেক-আপের জন্য এই বিবি ক্রিম ভালো। কিন্তু এটির নাম Garnier BB cream miracle skin perfector এর সাথে সার্থকতা বজায় রাখতে পারেনি। কোনই “miracle” ঘটায় না। তাছাড়া বিবি ক্রিমে সানস্ক্রিন থাকতে হয়, এটায় এস পি এফ ২৪ আছে, যারা কলেজ অথবা অফিসে যান , তারা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ৩/৪ ঘণ্টা পর একটু টাচ আপ দিতে হবে। কন্সিলার এবং ফাউন্ডেশন কোন গুনাগুণ এর মধ্যে নেই। দাম পড়বে ২৩৫-৪৫০ ( সাইজ অনুযায়ী দাম হবে )।
Ponds white beauty cream ++ :
এই বিবি ক্রিম লেটেস্ট বাজারে ছাড়ল পন্ডস কোম্পানি। আমার কাছে গারনিয়ার এর থেকে পন্ডস অনেক গুণ বেশি ভালো লেগেছে। এটার শেড একটা হলেও সব স্কিন কালারের সাথে ভালো মানায়। এটি অনেক লাইট, ভালো ভাবে ব্লেন্ড হয়। লাইট থেকে মধ্যম মানের কভারেজ দেয়। মুখের ছোট দাগ, রেডনেস কভার করলেও, বড় দাগ গুলোর জন্য আলাদা ভাবে ক্রিম নিয়ে কন্সিল করতে হয়। একদম-ই ন্যাচারাল ফিনিশিং দেয় এবং সব চেয়ে ভালো ব্যাপার হল এটা মুখ কে অক্সিডাইজ করে না। তাছাড়া এটি তে SPF 30 PA ++ আছে। মোটামুটি বিবি ক্রিমের সব গুনাগুণ এর মধ্যে আছে। এটি মোটামুটি সব ত্বকেই সুট করবে। তবে নরমাল, কম্বিনেশন ত্বকের জন্য বেশি ভালো। তৈলাক্ত ত্বক হলে ৩/৪ ঘণ্টা পর টাচ আপ দিতে হবে। আর শুষ্ক ত্বক হলে আগে যেকোনো ময়েশ্চারাইজার দিয়ে নিবেন। দাম পড়বে ২৮০ টাকা।
Maybelline Clear glow BB cream :
এই বিবি ক্রিমের সব চাইতে ভালো দিক হলো এর তিনটা শেড আছে। তাই যে কেউ তার গায়ের রঙ অনুযায়ী শেড ম্যাচ করতে পারবে। কিন্তু এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো না। শুষ্ক অথবা কম্বিনেশন ত্বকের জন্য ভালো। তাছাড়া এটি তে SPF 21 PA ++ আছে। এটি অন্যান্য বিবি ক্রিমের থেকে ঘন, তাই ব্লেন্ড করতে একটু কষ্ট হবে। মোটামুটি ৮ ঘণ্টা মুখে থাকবে। যারা বাইরে অনেকক্ষণ থাকেন, তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে এটি দেয়ার পর মুখ একদম সাদা হয়ে গেলেও , পরে এটি ন্যাচারাল হয়ে যায়। মুখ অনেক উজ্জ্বল লাগে। মুখের কালো দাগ, রেডনেস দূর করে। এটির কভারেজ ভালো কিন্তু ফাউন্ডেশনের মত কভারেজ দিবে না। প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
বি বি ক্রিম কিভাবে দিবেনঃ
আমি মনে করি বিবি ক্রিম ব্রাশের চেয়ে হাত দিয়ে দেয়াই ভালো। পুরো মুখে ডট ডট করে ক্রিম লাগিয়ে, হাত দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করবেন। ফিনিশিং আসার পর যদি মুখে রেডনেস, কালো দাগ, চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায় তাহলে শুধু মাত্র ওই জায়গায় এবার বিবি ক্রিম দিয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে ডেব করে ব্লেন্ড করবেন।