সাধারনত পৃথিবীতে বসবাস রত প্রত্যেকটা মানুষেরই স্তন আছে। সেটা হোক পুরুষ কিংবা নারী। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি পুরুষের স্তন থাকার কোন প্রয়োজন আছে? আসুন জেনে নিই এ বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে!!
পুরুষেরও স্তন-গ্রন্থি আছে। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার সহ অন্য কোনো সমস্যা না হলে কোনো পুরুষই সাধারণত সে স্তন থেকে দুধ উৎপন্ন করতে পারে না। যদি সন্তান-সন্ততিদের দুধ খাইয়ে সাহায্য নাই করতে পারে, তাহলে কোন লাভের জন্য এই অপ্রয়োজনীয় জিনিষ সারাজীবন ধরে থেকে যায় প্রত্যেকটি পুরুষের মাঝে?
উত্তরটা লুকিয়ে আছে মানুষের ভ্রূণ দশার মাঝে। ভাল করে বললে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণে লাগা সময়কালের মাঝে। মানুষ স্তন্যপায়ী প্রাণী, আর প্রত্যেক স্তন্যপায়ী প্রাণীই হয়ে থাকে উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট, লোমশ, মেরুদণ্ডী, নিঃশ্বাস হিসেবে এরা বায়ু গ্রহণ করে এবং অবধারিতভাবে সকল শিশুই স্তন পান করে বড় হয়। যেমন মানুষ, কুকুর, গরু ইত্যাদি। মায়ের গর্ভে মানব ভ্রূণ তৈরি হবার সময় বাবার কাছ থেকে আসা Y ক্রোমোজোমের দ্বারা নির্ধারিত হয় নবজাতক ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। এই Y ক্রোমোজোমের কার্যকারিতা শুরু হতে কিছুদিন সময় লাগে। সময়ের পরিমাণটা প্রায় ৪ সপ্তাহ। এই সময়টায় মায়ের গর্ভে ভ্রূণের ছেলে ও মেয়ের বৈশিষ্ট্য একইসাথে অভিন্নরূপে বিকাশ পেতে থাকে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, তখন ভ্রূনের মাঝে পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের খোঁজ পাওয়া মুশকিল। ওই দশায় সব ভ্রুণই যেন মেয়ে ভ্রুণ, ক্রোমোজোম যাই হোক না কেন!
প্রত্যেকটা স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্তন-গ্রন্থি সম্বন্ধীয় অঙ্গগুলো ভ্রূণ বিকাশের প্রাথমিক দশায় খুব উচ্চ সতর্কতার সাথে সংরক্ষিত থাকে এবং প্রাথমিক দশাতেই তাদের বিকাশ ঘটে যায়। এই অবস্থাটা ঘটে ভ্রূণে লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হবার আগেই। এই সময়েই ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই স্তন-গ্রন্থি সৃষ্টি হয়ে যায়।
তুলনামূলকভাবে আগেভাগে স্তনগ্রন্থি ও তৎসংশ্লিষ্ট টিস্যু বিকাশের গুণ বিবর্তনের পথে স্তন্যপায়ী হয়ে ওঠার সময় থেকেই সকল স্তন্যপায়ীরা অর্জন করে এসেছে। হয়তোবা এটাই পরিবেশের মাঝে স্তন্যপায়ী হিসেবে টিকে থাকার ক্ষেত্রে সবচে বেশি সহায়ক ছিল। ভ্রূণের গোনাড দৃশ্যমান হয় ভ্রূণের বিকাশের ৪ সপ্তাহের মাথায়। ভ্রূণ বিকাশের সাথে সাথে লিঙ্গ যখন বিকশিত হয় তখন প্রথম দিকে লিঙ্গে ছেলে ও মেয়ে আলাদাভাবে না হয়ে উভয়ের বৈশিষ্ট্য একত্রে বিকশিত হতে থাকে। এই পার্থক্যহীন অবস্থাটাকে বলা হয় ‘অভিন্ন গোনাড’(ndifferentiated gonad)। এ অবস্থায় ছেলে ও মেয়ের যৌনতা-সংশ্লিষ্ট অঙ্গসমূহের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না। এই সমন্বিত অবস্থাটা চলতে থাকে কয়েক সপ্তাহ। অষ্টম সপ্তাহের মাথায় সংশ্লিষ্ট কোষ লিঙ্গ নির্ধারণের কাজ শুরু করে। এর পরে পুরুষ হবার জৈবিক সংকেত বা আদেশ মেয়েলী বৈশিষ্ট্য ও গঠনকে বিকশিত হতে বাধা প্রদান করে বা block করে দেয়। ছেলে ভ্রূণ যখন পরবর্তীতে সটোস্টেরন হরমোন নামে একধরণের রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করে, তখন এটি দেহের অন্যান্য পুরুষালী বৈশিষ্ট্য বিকাশে সাহায্য করে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছেলেদের স্তন ও মেয়েদের স্তন একইরকম থাকে। পরবর্তীতে বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের স্তনগ্রন্থিতে চর্বি জমা হয়ে এবং এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্রিয়া সম্পাদিত হয়ে তা আকারে বড় হয়ে ওঠে। ছেলেদের বেলায় অন্যান্য যৌন বৈশিষ্ট্য গুলো বিকশিত হলেও স্তনের কোনো পরিবর্তন হয় না।
চর্বি, নালিকা, লোবিউল ইত্যাদির সমন্বয়ে মেয়েদের স্তন ধিরে ধিরে আঁকারে বড় হয়ে ওঠে। কিন্তু বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে ছেলেদের স্তন কোনো সুবিধা দেয় না। এমনকি কোন প্রকারের সুফলও বয়ে আনে না। তবে এটা কোনো ক্ষতির কারণও না। পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ক্ষতির কারণ হলে, নিশ্চই বিবর্তনের লম্বা
সময়ের স্কেলে তা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যেত। অবিকশিত স্তন থাকলে তা উত্তর প্রজন্মের বিকাশে কোনো অন্তরায় হয় না। যার ফলশ্রুতিতে সেটি কখনো বাদ যাওয়ার তালিকার মাঝে পড়েনি।
খাদ্য হতে যে শক্তি পাওয়া যায় তার বড় একটা অংশ যদি অপ্রয়োজনীয় অঙ্গের মাঝে চলে যায়, তাহলেও সেটি বাদ যাওয়ার তালিকায় পড়তে পারে। কারণ তা শক্তির দিক থেকে খুব ব্যয়বহুল। কিন্তু ছেলেদের ছোট ছোট স্তন খাদ্যে পাওয়া শক্তির খুবই সামান্য পরিমাণ খরচ করে, শক্তি খরচের দিক থেকে ততটা ব্যয়বহুল নয়। এইসব কারণেই বিবর্তনের ছাঁকনিতে টিকে রয়েছে ছেলেদের স্তন।
সবশেষে স্তন ক্যান্সারের ব্যাপারে একটি কথা। ছোট হোক আর যাই হোক স্তন কিন্তু পুরুষদের ঠিকই আছে। আর তাই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও আছে। যদিও পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি খুবই বিরল ঘটনা এবং এর সম্ভাবনা 0.1% এরও কম, কিন্তু তবুও সম্ভাবনা আছে। সামান্য হলেও ঝুঁকি আছে, এবং এটা ঘটতে পারে। এটি ঘটার নিয়ামক হিসেবে আছে, এস্ট্রোজেন হরমোনের ওঠা-নামা, মেদ-স্থূলতা, অধিক এলকোহল গ্রহণ, পেটের পীড়া এবং জীনগত পরিবর্তন বা ত্রুটি।