কথায় বলে, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। তাই আমাদের জানা উচিত কীভাবে নিজেকে সুন্দর রাখা যায়। মানুষ সুন্দর হয়ে জন্মালেও যত্নবান না হলে সৌন্দর্য বেশি দিন টেকে না। আমরা অনেকেই মনে করি, গায়ের রং ফর্সা হলেই বুঝি সে সুন্দর। আসলে তা নয়। রং আপনার যাই হোক না কেন, যদি তাতে গ্ল্যামার বা লাবণ্য থাকে তাকেই সুন্দর বলে। নির্জীব, দাগযুক্ত ত্বক যেমন নিজের কাছে খারাপ লাগবে, তেমনি অন্যের কাছেও খারাপ লাগবে। আপনি যেমনই হোন না কেন, একটু চেষ্টা করলেই আপনি অনেকখানি আকর্ষণীয় হতে পারেন সবার কাছে। তার জন্য শুধু দরকার ধৈর্য্য ও নিয়ম মাফিক পরিচর্যা। মেয়েদের ২৩-২৪ বছর বয়স থেকেই বিশেষভাবে ত্বকের যত্ন, খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়াম ইত্যাদির দিকে নজর দেওয়া উচিত। তাহলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ও নিজের রূপ এবং সৌন্দর্য ধরে রাখা সম্ভব। সঠিক পদ্ধতি জেনে নিয়ে ধৈর্য্য ধরে নিজের পরিচর্যা করতে হবে।
১৭-২০ বছর বয়সের ফেসিয়ালঃ
এ বয়সে ত্বকে তৈলাক্ত ভাব থাকে, ব্রণ উঠার প্রবণতাও দেখা দেয়। তাই এই বয়সটিতে ত্বক পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। হারবাল কোনো ফেসিয়াল করা যেতে পারে যেন ত্বকে ময়েশ্চার ব্যালেন্স হয়। হলুদ, পুদিনা পাতা, শশা, মধু এই উপাদান সমৃদ্ধ ফেসিয়াল করতে হবে তাই আপনি বেছে নিতে পারেন হানি ফেসিয়াল, কিউকাম্বার ফেসিয়াল, অরেঞ্জ ফেসিয়াল।
২১-৩০ বছর বয়সের ফেসিয়ালঃ
২০ বছরের পর যে কেউই ফেসিয়াল করতে পারবেন। শুষ্ক, সাধারণ ও তৈলাক্ত ত্বকে সমস্যা না হলে হারবাল ফেসিয়াল করা যেতে পারে। পার্ল ফেসিয়াল সব ধরনের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য, তবে স্পর্শকাতর ত্বকে এই ফেসিয়াল করা যাবে না। পার্ল ফেসিয়াল করার পর ত্বকে একটা হোয়াইটিশ আভা আসে এবং অনেক দিন পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটা সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী শুধু সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর ত্বকে এই ফেসিয়াল করা যাবে না। এটা সব বয়সী ত্বকের জন্য নেওয়া যাবে। বিয়ের কনের জন্য গোল্ড ফেসিয়াল খুব ভালো ফলাফল দেবে। কারণ এটা ত্বকে সুন্দর একটা সোনালী আভা এনে দেয়।
৩১-৪০ বছর বয়সের ফেসিয়ালঃ
এই বয়সটি থেকে ত্বক পরিবর্তন হতে থাকে। এই বয়সে এমন ফেসিয়াল দরকার যেটি ত্বকের কমপ্লেক্সশন পরিবর্তন করার লক্ষ্যে ত্বককে হাইড্রেট, ময়েশ্চারাইজ করে। তাই হালকা ম্যাসেজের মাধ্যমে সকল প্রকার ধকল থেকে পরিত্রান, স্ক্রাবিং এর মাধ্যমে মরা কোষ দূর করে সবশেষে হাইড্রেটিং মাস্ক লাগিয়ে ফেসিয়াল সম্পন্ন করতে হবে। তাই আপনার জন্য উপকারী ফেসিয়াল হবে স্টিম ফেসিয়াল, অ্যান্টি-রিঙ্কেল ফেসিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেনট ফেসিয়াল। এছাড়াও করতে পারেন ফ্রুট ফেসিয়াল। এই ফেসিয়ালে যে ফ্রুট ক্রিম ব্যবহার করা হয় যা সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো। বিশেষ করে ফ্রুট ফেসিয়াল ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে। ত্বক টান টান রাখে। একমাত্র ফ্রুট ফেসিয়ালই স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য উপযোগী।
৪১-৫০ বছর বয়সের ফেসিয়ালঃ
চেহারায় বয়সের ছাপ, রূপসচেতনদের কাছে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৪৫ বছরের পর থেকেই সাধারণত এ সমস্যা দেখা দেয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আগেই দেখা দেয়। বয়সের চাপের পাশাপাশি চেহারায় কালো কালো ছোপও পড়ে। এগুলো দূর করতে ভেজিটেবল পিলিং এবং থার্মোহার্বের ফেসিয়ালটি করা উচিত। এতে চেহারার কালো দাগ চলে যাবে, ত্বকে উজ্জ্বলতা আসবে। আরও করতে পারেন অ্যান্টি-রিঙ্কেল ফেসিয়াল, চকলেট ফেসিয়াল।
ট্রিটমেন্ট ফেসিয়ালঃ
ট্রিটমেন্ট ফেসিয়াল হলো ত্বকের বিশেষ কোনো সমস্যা, যেমন—ব্রণ, রোদে পোড়া ইত্যাদি দূর করার জন্য বিশেষ ফেসিয়াল। ত্বকে কোনো ব্রণ থাকলে ট্রিটমেন্ট ফেসিয়াল করতে হবে। ব্রণের জন্য পিম্পল ফেসিয়াল, পিগমেন্টের জন্য পিগমেন্টেশন ফেসিয়াল, ভেজ পিল ফেসিয়াল আছে। অ্যালোভেরা আর থার্মোহার্ব ফেসিয়াল করালে কালো ছোপ দূর হবে। মেছতা দূর করার জন্য আছে ভেজ পিল ফেসিয়াল ও অ্যালোভেরা ফেসিয়াল, যা ত্বককে পরিষ্কার করবে। যাদের ত্বকে বিভিন্ন প্রকার দাগ আছে তারা এই ফেসিয়াল নিতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য এই ফেসিয়াল খুবই উপকারী। তবে স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা ফেসিয়াল করা যাবে না। রোদে পোড়া ভাব দূর করতেও এটি সাহায্য করে।
ত্বকে খুব বেশি সমস্যা না থাকলে মাসে একবার ফেসিয়ালই যথেষ্ট। ত্বকে সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই সচেতন হওয়া উচিত। ত্বক এবং সমস্যা বুঝে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তবেই সঠিক ফেসিয়াল করা উচিত।