মগজের খাটুনি কিন্তু কম নয়। সারা দিন ধরে শরীরটাকে চালানো বলে কথা। ছোট্ট ছোট্ট সব সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর হিসেবনিকাশ, লেখাজোখার কাজকর্ম, সব সময় বুদ্ধি খাটানো। এসব কাজে নিজেকে সক্রিয় রাখতে বিপুল জ্বালানিরই প্রয়োজন হয় আমাদের মস্তিষ্ক বা মগজের। তাই মগজকে নিয়মিত ঠিকঠাক খাবার দেওয়া চাই। মগজের জন্য উপকারী সহজলভ্য পাঁচ খাবারের গুণাগুণ এখানে তুলে ধরা হলো।
আখরোট
আখরোট মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ আখরোট স্মৃতিশক্তি আর বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা বাড়ায়। আর আখরোটের ভিটামিন-ই মগজের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে।
সুস্বাদু আখরোট সরাসরি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এ ছাড়া ভোজ্য অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল, রসুন ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে খেতে পারেন। বানিয়ে নিতে পারেন আখরোটের ডেজার্টও। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের জন্য বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন তিসির তেল।
ডিম
সকালের নাশতায় একটা ডিমের ওমলেট আপনার মগজ খোলার জন্য বেশ ভালো কাজে আসতে পারে। ডিম ভিটামিন-বি এর খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান চোলিনের খুব ভালো উৎস। এটা অ্যাসিটোচোলিন উৎপন্ন করে মানসিক স্পষ্টতা, স্মৃতি সংরক্ষণ ও যুক্তি তৈরিতে মস্তিষ্ককে সহায়তা করে।
তিরিশ বছর বয়স পর্যন্ত অনায়াসে প্রতিদিন একটা ডিম খেতে পারেন। এর চেয়ে বেশি বয়সীরা নিজেদের স্বাস্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত ডিম খাওয়ার ব্যাপারে একটু সাবধানী হওয়াই ভালো। চোলিনের বিকল্প উৎসের জন্য চিংড়ি খেতে পারেন। আর নিরামিশাষীরা ফুলকপি ও ব্রকোলি থেকে এই পুষ্টি পেতে পারেন।
দই বা ইয়োগার্ট
দই জাতীয় খাবার মগজের জন্য ভালো। বিকল্প হিসেবে মানসম্মত প্যাকেটজাত ইয়োগার্টও খেতে পারেন। মস্তিষ্কের বিশেষ নিউরোট্রান্সমিটার সচল রাখার প্রয়োজনীয় উপাদান টাইরোসিন নামের অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে এ জাতীয় খাদ্যে। ফলে মানসিক চাপের সময়ে আমাদের মস্তিষ্ক চাঙা করে নিজেকে ফিরে পেতে সহায়ক হতে পারে এই খাবার।
প্রতিদিন অন্তত একবেলা এক কাপ দই বা ইয়োগার্ট খেতে পারেন। আর টাইরোসিনের ঘাটতি মেটাতে বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন কলা।
দারুচিনি
দারুচিনির গন্ধ আর স্বাদ স্মৃতিশক্তি চাঙা করে তোলে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে নানা গবেষণায়। দারুচিনিতে থাকা বিশেষ দুটি উপাদান মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে মস্তিষ্ক চাঙা হয়ে ওঠে এবং তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে মগজের নানা কাজে গতি বাড়ে।
নানা খাবারদাবারে তো এই সুগন্ধি ও সুস্বাদু মসলা আমরা প্রায় নিয়মিতই খাই। সকালের চায়ের কাপেও এক টুকরো দারুচিনি ছেড়ে দিতে পারেন। অনেক সময় খালি মুখে এক টুকরো দারুচিনি চিবিয়ে নিলে মুখ যেমন তরতাজা হয় তেমনি তা মনকেও ফুরফুরে করে তুলতে পারে। দারুচিনি ছাড়া জামেও আছে মস্তিষ্ক চাঙা করার ওই দুই বিশেষ উপাদান।
হলুদ
অত্যন্ত জনপ্রিয় মসলা হলুদে দুই ডজনেরও বেশি প্রদাহ-নিরোধী নানা উপাদান আছে। হলুদ মস্তিষ্ক চাঙা করে আর স্মৃতিভ্রষ্টতা ঠেকাতে সাহায্য করে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। পরিচিত কারকিউমিন ছাড়াও হলুদে আছে অ্যারোমেটিক টারমেরোন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে মস্তিষ্কের নিজেই নিজের ক্ষত সারিয়ে তোলার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে হলুদের এই বিশেষ উপাদান।
নানা তরকারিতে তো হলুদ মসলা খাওয়ার প্রচলন আমাদের দেশজুড়েই আছে। এ ছাড়া কাঁচা হলুদের রসও কিন্তু দারুণ উপকারী। হলুদের বিকল্প হিসেবে কারকিউমিন পেতে খেতে পারেন ম্যাংগো-জিনজার। বিশেষত আচার বানাতে ব্যবহার করা হয় এই মসলা।