মঙ্গলগ্রহে বসতি

মহাকাশ নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। এ ক্ষেত্রে এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস এক্স’ মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে অনেকদূর এগিয়েছেন। ফলে গুগল ও ফিডেলটি এই প্রতিষ্ঠানে একশ’ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এই প্রযুক্তিতে। অর্থাৎ এখন মহাকাশ থেকেই ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। স্পেস এক্স অবশ্য এত বড় বিনিয়োগ পাওয়ার পর তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক সম্প্রতি (১৬ জানুয়ারি ২০১৫) ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তারা আন্তর্জাতিক উপগ্রহ ইন্টারনেট প্রকল্পের জন্য পৃথিবীর কক্ষপথে চার হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করবে। তা ছাড়া আগামী ১২ বছরের মধ্যেই তারা মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপন করবে।

বসতিইতিমধ্যেই ‘স্পেস এক্স’ মঙ্গল গ্রহে একটি শহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। আর এরই পাশাপাশি এই অসাধারণ প্রতিষ্ঠানটি স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার লক্ষ্যেও কাজ করছে। অবশ্য চারদিকে প্রশ্ন উঠেছে, গুগল হঠাৎ কেন মহাকাশ প্রকল্পে এত বিনিয়োগ করছে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলেছেন, স্পেস এক্সে বিনিয়োগ ছাড়াও গুগল ‘প্রজেক্ট লুন’ নামে বেলুনের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার আলাদা একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার ল্যারি পেজ ও সের্গেই বিনথ এ দু’জনের মধ্যে মহাকাশ প্রকল্প নিয়ে বেশ উৎসাহ রয়েছে। অন্যদিকে এ প্রকল্পে গুগলের লাভের পরিমাণও বেশি হবে। আর এর মূল কারণ হলোথ দিন দিন মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা যত বেশি হবে, ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন ও ডিজিটাল অ্যাড নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে গুগলের মুনাফা করার সম্ভাবনাও তত বেশি বেড়ে যাবে।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে গুগল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘খুব শিগগিরই মানুষ মহাকাশভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যেমন ইমেজিং স্যাটেলাইটের মতো প্রযুক্তির কল্যাণে আরও সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুব সহজেই তাদের হাতের নাগালে আসবে। স্পেস এক্সে বিনিয়োগ করতে পেরে গুগল এজন্য বেশ স্বস্তিতে আছে। খুব শিগগিরই স্পেস এক্স মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে।’ গুগলের ডোনাল্ড হ্যারিসন স্পেস এক্সের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে স্পেস এক্সের পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গুগল স্পেস এক্সের মহাকাশযান ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রসদ সরবরাহ করছে।

স্পেস এক্স ছাড়াও ‘ওয়ান ওয়েব’ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর আরেকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে রিচার্ড র্যানসনের ‘ভার্জিন গ্রুপ’ এবং মার্কিন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘কোয়ালকম’ এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মহাকাশ থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ভার্জিন ও কোয়ালকম সারা বিশ্বে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা দিতে ৬৪৮টি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে এখনও বিশ্বে ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিতদের সংখ্যা প্রায় তিনশ’ কোটি। আর এরই কারণে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে যেন খুব দ্রুত এবং সাশ্রয়ী খরচে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া যায়, এ লক্ষ্যেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভার্জিন ইতিমধ্যেই মহাকাশে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর লক্ষ্যে বিশেষ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সেবা ‘লাঞ্চার ওয়ান’ তৈরি করছে। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি মহাকাশে পর্যটক পাঠানোর জন্য ‘স্পেস স্পেস টু’ নামে একটি যান তৈরি করছে।

বর্তমানে ‘ওয়ান ওয়েব’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ওয়ার্ল্ডভু স্যাটেলাইট নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। ওয়ান ওয়েবের প্রধান নির্বাহী গ্রেগ ওয়েলার জানিয়েছেন, ‘মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর বিষয়ে সম্ভাব্য নির্মাতা, সরবরাহকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেবা দেওয়াই হবে এর কাজ। মহাকাশে ওয়ান ওয়েবের তৈরি এই কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে মোট খরচ হবে ১৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর একেকটির ওজন হবে ১৩৬ কেজি এবং এটি পৃথিবী থেকে ৭৫০ মাইল দূরে অবস্থান করবে।’

ওয়ান ওয়েব কর্তপেক্ষের দাবি , ইন্টারনেট সেবার পাশাপাশি তারা বিশ্বজুড়ে মোবাইল অপারেটরদের জন্য নেটওয়ার্ক সেবা দিয়ে থাকবে। সেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও মোবাইল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। ভার্জিন গ্যালাক্টিকের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড র্যানসন বলেন, ‘স্পেস এক্সের এ প্রকল্পের ফলে বিশ্বজুড়ে যে তিনশ’ কোটি মানুষ যারা ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল, তাদের কাছেও ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।’ প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, খুব শিগগিরই স্বল্প খরচে দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার পর আমরা কতটুকু সুফল পাব? আশা করি, বিজ্ঞানের অন্যসব অগ্রগতি এবং সফলতার মতো এ ক্ষেত্রেও আমরা নিরাশ হবে না।

Leave a Reply