‘নো মেকআপ লুক’ কথাটা সাজের বেলায় এখন বেশ প্রচলিত। তবে নো মেকআপ মানে কিন্তু মেকআপ ব্যবহার হবে না, তা নয়। বরং মেকআপ দিয়েই ফুটিয়ে তেলা হবে একদম সাদামাটা ভাব। কীভাবে—জানিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞরা।
মেকআপ মানেই কেবল জমকালো সাজ নয়। মেকআপ করেও চেহারায় ন্যাচারাল লুক ধরে রাখা যায়। তবে এ জন্য অনেক বেশি যত্নশীল ও দক্ষতার সঙ্গে মেকআপ করা চাই, জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান।
মেকআপের মাধ্যমে ন্যাচারাল লুক ফুটিয়ে তুলতে চাইলে ত্বকের রঙের কাছাকাছি রংগুলো বেছে নিতে হবে। এক ধাপ গাঢ় কনসিলার ও কমপ্যাক্ট পাউডার ব্যবহার করলে এ ধরনের সাজ সবচেয়ে ভালো হয়। তবে শুধু ঠিক রংটা বাছাই করলেই হবে না, পুরো মুখে খুব ভালোভাবে তা ব্লেন্ড করতে হবে। কনসিলার বা পাউডার যেন মুখে ছোপছোপ না লেগে থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। কড়া রঙের ব্লাশন না দিয়ে বাদামি, ব্রোঞ্জ, হালকা গোলাপি রং দেওয়া যেতে পারে। সেটাও খুব সুন্দরভাবে মিশিয়ে দিতে হবে, তা না হলে সাজ অতিরঞ্জিত মনে হবে। বললেন কানিজ আলমাস খান।
এখন আইব্রো মোটা করে আঁকার চল থাকলেও এ ধরনের ছিমছাম সাজে অন্যভাবে আইব্রো আঁকতে হবে। গাঢ় বাদামি রঙের আইব্রো পেনসিল দিয়ে হালকা করে এঁকে নেওয়া যেতে পারে, বেশি গাঢ় করা যাবে না। চিকন করে চোখের পাতায় আইলাইনার ও কাজল লাগালে ভালো লাগবে। ঠোঁট রাঙাতে হবে একদম হালকা কোনো রঙে। চড়া রংগুলো এ ক্ষেত্রে একেবারেই মানানসই হবে না। সব মিলিয়ে এমনভাবে সাজটা শেষ করতে হবে, যেন মুখে একটি সাধারণ ও পরিপাটি লুক আসে।
কথা হলো রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন মেকআপের মাধ্যমে ন্যাচারাল লুক ফুটিয়ে তোলার পুরো কৌশল। প্রথমে ত্বকের রং থেকে এক ধাপ গাঢ় কনসিলার দিয়ে চোখের নিচের অংশ, ঠোঁটের পাশে ও মুখের যে যে অংশে রঙের অসামঞ্জস্যতা আছে, তা ঢেকে দিতে হবে। এরপর একই রঙের কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে পুরো মুখে ভালোমতো পাফ করতে হবে। মুখে একটু পানি স্প্রে করে স্পঞ্জের সাহায্যে চেপে চেপে মেকআপ ভালোমতো বসাতে হবে। বেস হয়ে গেলে হালকা গোলাপি রঙের ব্লাশন দিয়ে গালে ব্রাশ করে নিতে হবে। গায়ের রং চাপা হলে হালকা বাদামি রঙের ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন। গাঢ় বাদামি রং দিয়ে নাকের ধার ও থুতনির নিচের অংশ ঠিকঠাক (কনট্যুর) করে নেওয়া যেতে পারে। তবে এ কাজটি করতে হবে খুব নিখুঁতভাবে। শিমার বা শাইনি পাউডার এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। চোখে পাউডার বেসড ও শাইনি শেড ব্যবহার করলে আইলাইনার না দিলেও চলবে। শেডগুলো হতে পারে বাদামি, কপার ইত্যাদি রঙের। শুধু মাশকারা ব্যবহার করেও চোখের আকার সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। বলেন আফরোজা। তিনি বলেন, লিপস্টিকের রংটা একটু বুঝে-শুনে বাছাই করতে হবে। যেকোনো রঙের সবচেয়ে হালকা শেডের ম্যাট বা গ্লস লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কাকে কোনটা মানাবে, তা বুঝে ব্যবহার করা চাই। গায়ের রং হালকা হলে গোলাপি আভার লিপস্টিক আর চাপা রং হলে বাদামি লিপস্টিক মানায়। এ রকম সাজের সঙ্গে চুলটা একটু আলগা বা অগোছালোভাবে সাজানো যেতে পারে।
কানিজ আলমাস খান বলেন, সব ধরনের অনুষ্ঠানেই এ রকম সাজ মানিয়ে যায়। পোশাক, গয়না জমকালো হলে সাজটা খুব চড়া না করে এ রকম সাদাসিধে রাখা যেতে পারে। মেকআপ যেহেতু গাঢ় হচ্ছে না, তাই সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার জন্য পার্টিতে এ রকম সাজের সঙ্গে চুলটা জমকালো করে বাঁধলেও ভালো দেখাবে।
কথা হলো সংগীতশিল্পী নওমীর সঙ্গে। ফটোশুট বা যেকোনো শুটিং ছাড়া তিনি হালকা মেকআপেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে জানালেন। কনসিলার, ফাউন্ডেশন, কম্প্যাক্ট পাউডার—সবই ব্যবহার করেন, কিন্তু সাজটা থাকে মার্জিত। তাই দেখলে মনেই হয় না যে অনেক সেজেছেন। চড়া মেকআপের চেয়ে ন্যাচারাল লুকেই থাকতে বেশি পছন্দ করেন তিনি। আইব্রো কালো পেনসিল দিয়ে আঁকলে সাজে কৃত্রিম ভাব চলে আসে বলে ব্যবহার করেন গাঢ় বাদামি, আর চোখে সাদা কাজল। গোলাপি ও কমলার হালকা শেড এবং ত্বকের রঙের সঙ্গে ম
েলানো লিপস্টিক ব্যবহার করেন এ ধরনের সাজের ক্ষেত্রে।