ওজন বাড়া বা নানা কারণে অতিরিক্ত মোটা হয়ে পড়াটা আজকের দিনে খুব বড় সমস্যা। প্রধানতঃ নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা না করা এবং ভুলভাল খাবারই এর প্রধান কারণ। তাই ওজন হঠাৎ করে বাড়লে, বাড়তে শুরু করলে বা বাড়ার আগেই কয়েকটি অত্যন্ত জরুরী জিনিষ মনে রাখুন এবং মানতে চেষ্টা করুন। ভাল ফল হতে বাধ্য।
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখা ভাল। বাড়তি তাড়াহুড়ো করবেন না। আপনার ওজন একদিনে বাড়ে নি; চটজলদি কমানোর চেষ্টা করলে স্থায়ীভাবে ওজন কমার বদলে ঠেলে দেবে আরও রোগভোগের দিকে।
বাড়তি ওজন কমানো বা মেদ ঝরানো মানে এটা না যে আপনাকে ‘সাইজ জিরো’ অথবা পেটা চেহারার হতে হবে। চাইলেই সবাই ছিপছিপে হতে পারবেন না। শারীরিক কারণেই আমাদের মধ্যে নানা চেহারা দেখা যায়। কেঊ রোগাটে, কেউ পেশিবহুল আর কেউ বা একটু গোলগাল নাদুসনুদুস ধরণের। এই শেষ ধরণের মানুষদের মধ্যেই বাড়তি চর্বি বা ওজন হওয়ার ঝোঁকটা বেশি দেখা যায়। এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির দুর্বলতা, ইত্যাদি রোগের কারণেও আপনি খুব তাড়াতাড়ি মোটা হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ওজন বা মেদ যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেটাই প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
সঙ্গে আর একটু বলি। ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করার আসল লক্ষ্য ফিট থাকা। স্লিম অথবা দারুণ ফিগার মানেই কিন্তু কেউ দারুণ ফিট- তা নাও হতে পারে। ফিটনেসের আসল কথা হল সুস্থ ও সবল থাকা, কর্মক্ষম থাকা। আপনার একেবারে আদর্শ সিক্স প্যাক নাও থাকতে পারে; আপনার শরীরের মাপ নিখুঁত না হয়েও যদি আপনি আগের চেয়ে বেশি কাজ করার ক্ষমতা রাখেন, একটু কাজ করেই ক্লান্ত না হয়ে পড়েন তাহলে আপনি বেশি ফিট।
তাই কোন মনগড়া ধারণা বা কে কি বলছে তাতে কান দেবেন না; আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন আপনি নিজে। সঙ্গে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কিন্তু ওমুকের ফিগার কি দারুণ- এই ভেবে মন খারাপ করবেন না। যাই হোক এবার এই বিষয়ে মনে রাখার মত আরও কয়েকটি কথা বলা যাক:
১) শারীরিক ব্যায়ামের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় বাধা সৃষ্টি করে না। যে কোন সময়েই ব্যায়াম করা যায়।। অনেক রকম পথ আছে শরীর ফিট রাখার।। গাড়িতে বা বাসে অফিস, কলেজ, স্কুল যাওয়া আসার পথে বেশ খানিক দূরে গাড়ি ছেড়ে বাকি রাস্তা হাঁটুন।। কাজের জায়গায় কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে হেঁটে বেড়ান ও কিছূ ফি-হ্যাণ্ড ব্যায়াম করুন।।
২) ডায়েটের সঙ্গে ব্যায়াম করতেই হবে।। ধীরে ধীরে ক্যালরি কমাতে থাকলেও পুষ্টির দিকে নজর রাখতে ভুলবেন না।। অবশ্যই সঙ্গেঁ নিয়মিত ব্যায়াম করেন ওজন কমতে বাধ্য।।
৩) সারাদিনে আপনার বরাদ্দ খাবারটা ২-৩ বারে না খেয়ে ৫-৬ বারে ভাগ করে খান। যদি ৬ বার খান তাহলে ৩ বার একটু বেশি ও ৩টি হালকা- এভাবে ভাগ করে নিন। অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না, এতে ওজন বাড়ে তাড়াতাড়ি ।। রাস্তার ফাষ্টফুড খাওয়া বন্ধ করুন।।
৪) ব্রেকফাষ্ট বা সকালের জলখাবার অবশ্যই খাবেন।। প্রতিবার খাবারের সাথে ফল, সবজি খান, হালকা প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখুন।।
৫) এক ঘন্টা শরীরচর্চা এমন ভাবে করুন যা আপনি উপভোগ করেন।। বন্ধুদের সঙ্গেঁ গল্প করতে করতে হাঁটতে পাড়েন, সাঁতার কাটতে পাড়েন। লাইফ স্টাইল পরিবর্তন আনলে ফল ভালো পেতে পারেন। এক জায়গায় বসে টিভির রিমোট না ঘুরিয়ে উঠে গিয়ে চ্যানেল পাল্টান বা উপরের তলায় থাকলে লিফটে না উঠে অন্ততঃ কয়েকটা তলা সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
৬) প্রতিদিন এক ধরনের ব্যায়াম করতে একঘেয়েমি লাগে তাই মাঝেমাঝে ব্যায়ামের ধরণ পাল্টান কিন্তু বাদ দেবেন না কোন ভাবেই।
৭) বাজার করার সময় চকোলেট, চিপস, কোল্ডড্রিস ইত্যাদি কেনা কমিয়ে দিন। ঘুরতে ফিরতে এটা ওটা কেনা ও খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করুন।
৮) স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত প্রাণায়াম করুন। ঘরে হালকা আলোয় পছন্দসই মিউজিক চালিয়ে শুনুন।। এতে মন ভালো হবে, কমবে মনের চাপও।
৯) সপ্তাহে একদিন করে ওজন মাপুন।। একটুও কমছে কিনা। কমলে ভালো,না কমলে আরো মনোযোগ দিন।। ওজন কমছে না বলে হতাশ হবেন না বা টেনশন করবেন না। এতে ওজন বাড়বে বই কমবে না।
১০) বাড়িতে থাকলেও লাঞ্চ খেয়েই শুয়ে পড়বেন না। অল্প বিশ্রাম নিয়ে কিছুক্ষণ হাল্কা হাঁটা চলা করুন এতে হজম ভালো হবে। বিকেলে ক্লান্ত হয়ে পরবেন না। রাতেও ডিনারের পর ঘুমিয়ে না পড়ে ১ঘন্টা কাজ করুন যে কোন। ছাদে বা রাস্তায় হাঁটতে পারেন।
১১) অনেকে লাঞ্চে বা ডিনারে কম খান। কিন্তু আগে পরে মুখ চলতেই থাকে। যেমন লাঞ্চের আগে চকোলেট, চানাচুর খেলেন আবার লাঞ্চের পরে ফল, মিষ্টি ইত্যাদি খেলেন। এতে ওজন কমা সম্ভব নয়। তাই হিসাব করে খাবার খান। রোজ মোট কতটা খাবার খাচ্ছেন হিসাব রাখুন।
১২) সারাদিন রাতে প্রচুর জল খান। মাঝেমাঝে ডাবের জল, ফলের রস, বাতাসার জল ইত্যাদি খান। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং স্কিন ও শরীর দুটোই ভালো হবে।।
১৩) টিভি দেখতে দেখতে অনেকেরই পপকর্ন, চিপস ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস আছে।। যাই খান না কেন একটা বাটিতে ঢেলে খান।। তাহলে বুঝবেন কতটা খেলেন।। আর প্যাকেট থেকে খেলে এটা আন্দাজ করা সম্ভব নয়।
১৪) বাড়িতে বাগান থাকলে গাছে জল দিন, কুকুর থাকলে নিয়ে হাঁটতে বেরোন, গাড়ি থাকলে নিজেই পরিষ্কার করুন।। এতে ক্যালরি ঝরবে আর টাকাও বাঁচবে।
১৫) খরচ বাঁচাতে ও স্বাস্থ্যকর খাবার -এর জন্য রেস্তোঁরায় যাওয়া কমান। বাড়িতে খেলে বেশি খাওয়াটা এড়ানো যায়।
১৬) একা নয়, পরিবারের সকলে মিলে খেতে বসুন।। একসঙ্গেঁ গল্প করতে করতে খেলে খাওয়ার পরিমান কম থাকবে। একা খেলেই খাওয়ার পরিমান বেড়ে যায় অনেকটাই।
১৭) নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন যে আপনি পারবেন। আর হিসেব করে ছোট ছোট লক্ষ্য ধরে এগোন। দেখবেন আপনার অজান্তেই আপনি সকলের নজর কাড়তে শুরু করেছেন।
১৮) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হল, আপনার ফিটনেস রুটিন তৈরী করুন অবশ্যই একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে। শারীরিক বা অন্যান্য কোন সমস্যা থাকলে মন খুলে তাকে জানান। তাহলে ফল পাবেন আরো তাড়াতাড়ি।