লিনাক্স আর ইউনিক্স নিয়ে বহুল আলোচিত একটি প্রশ্ন!

রহস্যময় প্রশ্নটির উত্তর জানতে হলে আমাদের একেবারে রূট এ চলে যেতে হবে অর্থাৎ আমরা যাকে গোড়া বা মূল বলি। সাল ১৯৬৯, ইউনিক্স এর সৃষ্টি হলো ‘বেল লাবরেটরিতে’ যার উদ্ভাবক ডেনিস রিচি (‘সি’ প্রোগ্রামিং লাঙ্গুয়েজের উদ্ভাবক) আর কেন থমসন।

কেন থমসন ও ডেনিস রিচি

লিনাস বেনেডিক্ট টরভাল্ডস

লিনাস বেনেডিক্ট টরভাল্ডস

একই বছর ১৯৬৯ সালে ফিনলান্ডে জন্ম লিনাক্স এর উদ্ভাবক লিনাস বেনেডিক্ট টরভাল্ডসের। যে কিনা একসময় প্রযুক্তিবিশ্বে বিপ্লব ঘটাবে। নানা টরভাল্ডস (ফিনলান্ডের হেলসিংকি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর) একটি কম্পিউটার কিনে দিলেন লিনাসকে। কম্পিউটারটি ছিল ‘Commodore VIC-20’। কম্পিউটারের সাথে দেয়া কিছু প্রোগ্রাম ছাড়া কম্পিউটারে আর তেমন কিছু না থাকায় কয়েকদিনের মাথায় লিনাস বিষণ্ন হয়ে পরে। তখন আর কোন উপায় না দেখে লিনাস নিজেই প্রোগ্রাম লিখতে বসে গেলেন। শুরু করলেন বেসকি দিয়ে এবং পরে আরো জটিল ও শক্তিশালী লাঙ্গুয়েজ এ্যাসেম্বলি লিখা শুরু করে। একসময় প্রোগ্রামিং আর গণিতই হয়ে ওঠে তার জীবনের সঙ্গী।

Commodore VIC-20

লিনাস লাজুক ছিল, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তেমন মিশতোনা, খেলাধুলাতেও তেমন আগ্রহ ছিল না। বাবা অনেক চেষ্টা করেছেলেকে কিছুটা সামাজিক করতে কিন্তু তার সব চেষ্টায় বিফলে যায়।

সাল ১৯৯১ লিনাস তখন আইবিএমের ৩৮৬ প্রসেসরের একটা পার্সনাল কম্পিউটার কিনল, সে সময়ে লিনাস হেলসিংকি ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এই প্রসেসরটি ছিল ইন্টেলের আগের প্রসেসরগুলোর তুলনায় অত্যাধিক উন্নত। কম্পিউটারটির অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ছিল ‘MS-DOS’ যা তাকে হতাশ করে তুলেছিল, কারণ ইন্টেলের ৩৮৬ চিপ এর পুরোপুরি ব্যবহার করার ক্ষমতা সেটার ছিল না। এ কারণে লিনাস চাচ্ছিল আরো ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে, সে ইউনিভার্সিটিতে ইউনিক্স ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু তার কম্পিউটারের জন্য ইউনিক্স নেওয়া হলো না যখন দেখলো যে ইউনিক্সের দাম ৫০০০ মার্কিন ডলার!

মিনিক্স

মিনিক্স

নিলাস তথন মিনিক্সের দিকে ফিরল। মিনিক্স ছিল ইউনিক্সের এর ছোটখাটো একটা ক্লোন, তবে সম্পূর্ণ ক্লোন নয়  যা হেলসিংকি ইউনিভার্সিটির অপারেটিং সিস্টেম এক্সপার্ট এন্ড্রু টানেনবাম এর তৈরী। প্রফেসর শুধুমাত্র ছাত্রদের অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ক্লাস নেবার সময় মিনিক্স ব্যবহার করতেন। মিনিক্স ছিল MS-DOS এর তুলনায় অনেক শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম। তবে সমস্যা ছিল মিনিক্স ওপেনসোর্স না, তবে মিনিক্সের কিছুটা কোড উন্মুক্ত ছিল। প্রফেসর টানেনবমের লেখা ‘Operating Systems Design and Implementation’ বইটা কিনলেই সাথে মিনিক্সের ১২০০০ লাইনের কোডটা পাওয়া যেত। যদিও মিনিক্সের পুরো কোড উন্মুক্ত ছিল না। কিন্তুসবথেকে বড় সমস্যা ছিল যে মিনিক্সের কোডকে নিজের মত পাল্টানোর লাইসেন্স ছিলনা। তাছাড়া মিনিক্স ছিল শুধুমাত্র শিক্ষামূলক কাজের জন্য এবং একটি পুর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম বলতে যা বুঝানো হয় সেটা না। লিনাস বইটা কিনে ফেললো যার সাথে সে কোডটাও পেল। কোডটি নিয়ে কাজকরার সময় যে বুঝতে পারল এটাও তার চাহিদা পূরণের জন্য উপযুক্ত না।

জন্ম নিল একটি উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স

লিনাক্স

অবশেষে লিনাস সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো যে সে নিজেই একটা অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করবে যেটা মিনিক্স আর ইউনিক্স এর আদলে একটি নতুন উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম। এপ্রিল, ১৯৯১ শুরু করে লিনাসের নিজের অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করার কাজ। সে কি তখনবুঝতে পেরেছিল (?)! তার এই সিদ্ধান্ত একসময় তার জীবন এবং পৃথিবীকেও পাল্টে দেবে!

আগষ্ট ২৫, ১৯৯১ লিনুস তার অপারেটিং সিস্টেমের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ মিনিক্স নিউজগ্রুপকে জানাতে চেয়েছিল। সে মিনিক্স নিউজগ্রুপে তার এই ঐতিহাসিক মেইলটি পাঠালেন:

Message-ID: 1991Aug25.205708.9541@klaava.helsinki.fi

From: torvalds@klaava.helsinki.fi (Linus Benedict Torvalds)

To: Newsgroups: comp.os.minix

Subject: What would you like to see most in minix?

Summary: small poll for my new operating system

Hello everybody out there using minix-

I’m doing a (free) operating system (just a hobby, won’t be big and professional like gnu) for 386 (486) AT clones. This has been brewing since april, and is starting to get ready. I’d like any feedback on things people like/dislike in minix, as my OS resembles it somewhat (same physical layout of the file-sytem due to practical reasons)among other things.

I’ve currently ported bash (1.08) an gcc (1.40), and things seem to work. This implies that i’ll get something practical within a few months, and I’d like to know what features most people want.

Any suggestions are welcome, but I won’t promise I’ll implement them 🙂

Linus Torvalds torvalds@kruuna.helsinki.fi

একই বছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর লিনুস তার নতুন অপারেটিং সিস্টেমের ০.০১ ভার্সন প্রকাশ করে। আবার তার কিছুদিন পরেই ৫ই অক্টোবর প্রকাশ হয় ০.০২ ভার্সন যেটাতে টেক্সটবেজড ইউজার ইন্টারফেসের জন্য গ্নু ব্যাশ শেল আর কম্পাইলিং এর জন্য রিচার্ড স্টলম্যানের GCC (GNU C Compiler) যুক্ত ছিল। লিনুস কি জানত (?)!তার এই বিখ্যাত ঘোষণা পুরো পৃথিবী একদিন পরিবর্তন করে ফেলবে:

Do you pine for the nice days of minix-1.1, when men were men and wrote their own device drivers? Are you without a nice project and just dying to cut your teeth on a OS you can try to modify for your needs? Are you finding it frustrating when everything works on minix? No more all-nighters to get a nifty program working? Then this post might be just for you 🙂

As I mentioned a month(?) ago, I’m working on a free version of a minix-lookalike for AT-386 computers. It has finally reached the stage where it’s even usable (though may not be depending on what you want), and I am willing to put out the sources for wider distribution. It is just version 0.02 (+1 (very small) patch already), but I’ve successfully run bash/gcc/gnu-make/gnu-sed/compress etc under it.

Sources for this pet project of mine can be found at nic.funet.fi (128.214.6.100) in the directory /pub/OS/Linux. The directory also contains some README-file and a couple of binaries to work under linux (bash, update and gcc, what more can you ask for :-). Full kernel source is provided, as no minix code has been used. Library sources are only partially free, so that cannot be distributed currently. The system is able to compile “as-is” and has been known to work. Heh. . . .

লিনাক্স নামটি!

লিনাস কিন্তু তার অপারেটিং সিস্টেমের নাম লিনাক্স দিতে চেয়েছিল না! সে চেয়েছিল তার অপারেটিং সিস্টেমের নাম হবে ফ্রিক্স ‘Freax’ যা Free, Freak ও MINIX এর মিলিত একটা নাম। কিন্তু লিনাস এর বন্ধু এ্যারি লেম্কের নামটা পছন্দ হলো না। এ্যারি ছিল ftp.funet.fi এর আডমিনিস্ট্রেটর যা ফিনলান্ডের একটি FTP (File Transfer Protocol) সার্ভিস সরবরাহকারী। সে লিনাসকে বলেছিল যেন তার অপারেটিং সিস্টেমের সোর্সকোড সেখানে আপলোড করে, যাতে করে যে কেউ সোর্সকোড সংগ্রহ করতে পারে।

এ্যারি তার FTP সার্ভারে Linux নামের ফোল্ডারে লিনাসের অপারেটিং সিস্টেমের সোর্সকোড আপলোড করে। আর তারপর থেকেই লিনাসের অপারেটিং সিস্টেমের নাম হয়ে গেল Linux!

লিনাক্স আর ইউনিক্স কি একই? কি না? এ নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেক কিছুই বলে ফেলা হল। সকলের কাছে যেন বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় সে কারণেই এ ভাবে লেখা। মূল কথা বলতে গেলে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমটি ইউনিক্স আর মিনিক্স এর আদলে তৈরী করা যাকে ‘Unix-Like Operating System’ ও বলা হয়। তবে এটি ইউনিক্স বা মিনিক্স নয়! লিনাক্স নতুন আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম যা ইউনিক্স বা মিনিক্স থেকে অনেক উন্নত।

Leave a Reply