একটা ফর্সা মেয়ে সহজেই সবার চোখে পরে, যদি তার সাজগোজ সাধারণও হয় তারপরও। গায়ের রংটাই যেন তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করে সর্বদা। অথচ একটি কালো মেয়ের যতই মায়াকারা চেহারা হোক না কেন সাজসজ্জা যেন তার চেহারায় বেমানান… এমনটা আমরা বলছি না, এটাই আমাদের মাঝে প্রচলিত ধারনা যা কিনা শতভাগ ভুল!
এই কালো ত্বক হোক কিংবা ফর্সা, যদি সাজটা মানানসই হয় তাহলে তা নজরে পড়বেই। এবং প্রশংসাও পাবে। গায়ের রং কালো বলে অনেকেই নিজেকে ছোট করে দেখেন। মজার বিষয় হচ্ছে, ফর্সা ত্বকের চেয়ে কালো ত্বক অনেক বেশি সুস্থ থাকে, যা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। কেননা, কালো ত্বকে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি খুব একটা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু ত্বক ফর্সা বা কালো বড় কথা নয়, বরং সুস্থ-স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও লাবণ্যতাই আসল সৌন্দর্য।
কালো ত্বকের সাজগোজ :
কালো ত্বকের মেয়েদের মেকআপ করার আগে প্রথমেই ত্বকের ধরন বুঝে রং এবং শেড ঠিক করতে হবে। রংয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ত্বকের সুস্থতা। আর সুস্থ ত্বকে মেকআপ করলে তা হয়ে ওঠে আরও সুন্দর। যাদের গায়ের রং কালো তারা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ত্বকের ধরন সম্পর্কে। এ ক্ষেত্রে ত্বকের সঙ্গে মানানসই এবং ন্যাচারাল শেড ব্যবহার করে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন পরিপাটি করে। এ ব্যাপারে জেনে নেই সাধারণ কিছু টিপস।
ফাউন্ডেশন :
ফর্সা বা কালো যে কোনো ত্বকেই মেকআপের প্রথম ধাপ হচ্ছে ফাউন্ডেশন। যাকে অন্যভাবে বলা যায় মেকআপের ভিত্তি। প্রথমে মুখ ভালো করে ধুয়ে ক্লিনজিং, টোনিং বা ময়েশ্চারাইজার লাগান। তারপর ভালো ব্র্যান্ডের ফাউন্ডেশন দিয়ে বেইজ তৈরি করে নিন। এক্ষেত্রে ত্বকের ধরন ও রং অনুযায়ী তৈলাক্ত নয় এমন, পানি সমৃদ্ধ তরল ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। তবে ব্যবহারের আগে সামান্য পানি দিয়ে তা ভালোভাবে মিশিয়ে তারপর ত্বকে লাগান। যদি ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে শেড ব্যবহার করতে হয় তবে অবশ্যই স্কিনের চেয়ে হালকা এবং ন্যাচারাল শেড ব্যবহার করুন। পরে মেকআপ পাউডার ব্যবহার করুন। পাউডার ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর করে উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তোলে।
চোখ সাজান সুন্দর করে :
সুন্দর করে চোখ সাজানো এক ধরনের শিল্প। সুন্দর করে চোখ সাজালে মেকআপ অনেক বেশি পরিপাটি মনে হয়। চোখ সাজানোর সময় অবশ্যই তৈলাক্ত ও উজ্জ্বল রংয়ের শেডও দেখতে ভালো লাগে। সান্ধ্য সাজের ক্ষেত্রে চোখ সাজানোর সময় চোখের পাতায় হালকা করে পাউডার পাফ বুলিয়ে নিন। এতে আইশেডো ব্যবহারে চোখ অনেক বেশি উজ্জ্বল লাগবে। দিনের জন্য ধূসর বা বাদামি আই লাইনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে চিকন করে। এছাড়া চোখের নিচে লাইনার না দেয়াই ভালো। ভালো হয় যদি একেবারেই লাইনার ব্যবহার না করেন। সবশেষে আইলেশ (আলাদা চোখের পাপড়ি) অথবা মাশকারা ব্যবহার করে চোখের সাজ পূর্ণ করুন। মাশকারা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল এবং স্বচ্ছ রং ব্যবহার করুন। যদি আপনার আইলেশ বড় হয় তবে কালো মাশকারা এড়িয়ে চলুন।
ব্লাসন :
ব্লাসন ছাড়া যেন সাজের পরিপূর্ণতা আসে না। তাই মেকআপে ব্লাসন ব্যবহারের সময় শেড নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে আপনি বাদামি শেড ব্যবহার না করে গোলাপি, গাঢ় কমলা ব্যবহার করতে পারেন। কৃষ্ণবর্ণের যারা তারা দিনের সাজে গাঢ় গোলাপি এবং রাতের জন্য তামাটে রং ব্যবহার করুন। এর সঙ্গে গোল্ডেন কালারও ব্যবহার করতে পারেন। তবে কপাল এবং আইব্রোর কোনায় হালকা করে গোল্ডেন রং ব্যবহার করুন। এতে সাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগবে।
লিপস্টিক :
সাজের সবশেষ ধাপ হচ্ছে লিপস্টিক ব্যবহার। লিপস্টিক ব্যবহারের সময় লিকুইড লিপস্টিক না ব্যবহার করে বরং ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করুন। বাদামি, বেগুনি, হালকা গোলাপি, গোল্ডেন, কফি, চকোলেট শেড বা অন্য যে কোনো হালকা রং ব্যবহার করুন। তবে গাঢ় গোলাপি, মেজেনটা, লাল, কমলা রং এড়িয়ে চলুন। মোট কথা, আপনার ব্যক্তিত্ব ও সাজের ধরন বুঝে লিপস্টিক ব্যবহার করলে তা অনেক বেশি কার্যকর হবে।
আপনার গায়ের রং যেমনই হোক না কেন সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজলে যে কেউ হয়ে উঠবেন আকর্ষণীয়। তবে যাই করুন না কেন, আপনি যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন এবং আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। ত্বকের রং কালো হলেও সুন্দর এবং সঠিক নিয়মে সাজসজ্জা করলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন সুন্দর।