নারীরা পুরুষের তুলনায় স্বাস্থ্যগত সমস্যায় বেশি ভোগেন, বলেনও। তবে পুরুষদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলেও তারা এসব ব্যাপারে অনেক সময়ই এড়িয়ে যান।
তবে পুরুষদের ৬টি স্বাস্থ্যগত সমস্যা অগ্রাহ্য করা একেবারেই উচিৎ নয়।
বুকের ব্যথা : বেশিরভাগ পুরুষই মনে করেন বুকের ব্যথা যেন শুধুমাত্র হৃদরোগের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট। কিন্তু হৃদরোগ ছাড়াও আরো অনেক রোগেরই লক্ষণ হতে পারে এই বুকের ব্যথা। হৃদরোগ ছাড়াও নিউমোনিয়া, ফুসফুসের পীড়া বা শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি রোগের লক্ষণও হতে পারে বুকের ব্যথা।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের কারণে পুরুষরা পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ যেমন- অতিরিক্ত এসিড নির্গমণ বা আলসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. হেমনাথ মিত্তাল বলেছেন, এসব কারণেও বুকে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সূতরাং বিষয়টি একদমই অগ্রাহ্য করা উচিৎ হবে না।
শ্বাসহীনতা : মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্ট হওয়াটা পুরুষদের একটি সচরাচর রোগ। এটা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ত্রুটি নির্দেশ করে। এছাড়া ক্যান্সার, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, এম্ফিসেমিয়া, অ্যাজমা এবং ধমনীর সঙ্কোচনজনিত উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগের লক্ষণও হতে পারে এটি। এমনকি হঠাৎ শ্বাসহীনতা রক্তশুন্যতার লক্ষণও হতে পারে, যা আজকাল পুরুষদের মাঝে সচরাচরই দেখা যায়।
শক্তিহীনতা : পুরুষরা প্রায় প্রতিদিনই চরম ক্লান্তি এবং ক্রমাগত শক্তিহীনতায় ভোগেন। এর ফলে প্রায়ই উদ্দামহীনতা, নেতিবাচক মনোভাব এবং নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়।
এছাড়াও মারাত্মক শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যারও লক্ষণ হতে পারে এটি। ক্যান্সার, রক্তের জমাটবদ্ধতার কারণে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, সংক্রমণজনিত দূষণ এবং কিডনি ও লিভার রোগেরও লক্ষণ হতে পারে এটি।
এমনকি এটি থাইরয়েড গ্রন্থির অকার্যকারিতার লক্ষণও হতে পারে বলে জানিয়েছেন ড. প্রভীন দেহানা।
অবসাদগ্রস্ততা : পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পুরুষরাই সাধারণত অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হন বেশি। কারণ পুরুষরা পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের অসংখ্য প্রত্যাশা পুরনের চাহিদার ফলে প্রচুর পরিমাণ মানসিক চাপে থাকেন। এর ফলে পুরুষরা সহজেই বিশ্রামহীনতা, মানসিক চাপ এবং ব্যাপক অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হন।
অতিরিক্ত মানসিক তৎপরতার ফলে অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেয়। কারণ এ জন্য পুরো শরীর থেকেই মস্তিষ্কে স্নায়বিক রাসায়নিক সরবরাহের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে অতিরিক্ত রাগ-ক্ষোভ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন ড. হেমনাথ মিত্তাল।
স্মৃতিভ্রংশ : আপনার চেকবুক বা জরুরি কাগজপত্রগুলো কোথায় রেখেছেন প্রায়ই তা ভুলে যাওয়াটা কিন্তু সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। নারীদের চেয়ে পুরুষরাই এ ধরণের স্মৃতিভ্রংশতায় আক্রান্ত হন বেশি। অনেকসময় বার্ধক্যজনিত কারণে এই ধরণের স্মৃতিভ্রংশতা দেখা দেয়। তবে আলঝেইমার, ব্রেন টিউমার, মস্তিষ্ক বিকল হয়ে পড়া বা মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত মারাত্মক সব রোগের লক্ষণও হতে পারে এটি। শরীরে ভিটামিনের ঘাটতির কারণেও স্মৃতিভ্রংশ দেখা দিতে পারে।
মুত্রাশয়ের সংক্রমণ : ঠিক নারীদের মতোই পুরুষরাও জননাঙ্গ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হন। যেসব তারা প্রায়ই অগ্রাহ্য করেন। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া বা প্রস্রাবের গতি বাধাগ্রস্ত হওয়া পুরুষদের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিৎ। কারণ এগুলো প্রস্টেট ক্যান্সার এবং কিডনিতে পাথর ও মূত্রাশয়ের প্রদাহজনিত রোগের লক্ষণ হতে পারে। এসব লক্ষণ অগ্রাহ্য করাটা পুরুষদের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।