ওয়াটার থেরাপির উপকারিতা

ওয়াটার থেরাপিঃ

সাধারণত রূপচর্চায় পানির ব্যাবহারকে সহজ ভাষায় ওয়াটার থেরাপি বলা হয় ।এটি দুইভাবে করা যায় – ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল ওয়াটার থেরাপি।

ইন্টারনাল থেরাপিঃ

ইন্টারনাল থেরাপি মানে সারাদিনে আপনি কতটা পানি খাচ্ছেন তার ওপর আপনার সুস্থ থাকা নির্ভর করে। দিনে অন্তত গ্লাস পানি খাওয়া দরকার। পানি খেলে শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়। গরমের সময় আরও বেশি পানি খাওয়া দরকার। কম পানি খেলে কনস্টিপেশনের সমস্যা দেখা যায়। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে যা ক্ষতিকারক। তাই প্রতিদিন নিয়মিত পানি খাওয়া দরকার।

এক্সটারনাল থেরাপিঃ

এক্সটারনাল থেরাপি মানে বাইরে থেকে পানির ব্যবহারে শরীর ও ত্বকের যত্ন নেয়া হয়। নানারকম পদ্ধতির মাধ্যমে এই থেরাপি করা হয়। নানারকম হার্বস, দুধ, পানি দিয়ে গোসলের ব্যবস্থা রয়েছে। বডি স্টিম, ফেশিয়াল ও বডি প্যাকের ব্যবহার করা হয়। সঙ্গে বডি ম্যাসাজও জরুরী।

হাইড্রোথেরাপিঃ

ক্লান্তি দূর করতে ও  পিঠ ও গলার অংশের বিশেষ যত্ন ওয়াটার থেরাপি দিয়ে করা সম্ভব। ঈষদুষ্ণ পানিতে সি সল্ট মিশিয়ে গোসল করুন। পিঠ, গলা ও ঘাড়ের অংশের ক্লান্তি দূর হবে। শাওয়ারের তলায় এমনভাবে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়ান, যাতে পিঠ ও ঘাড়ের অংশে জোরে শাওয়ারের পানি পড়ে। দারুণ আন্ডারওয়াটার ম্যাসাজ হবে। এই পদ্ধতিকে বলে হাইড্রোথেরাপি।

ওয়াটার থেরাপির উপকারিতাঃ

ত্বক মসৃণ করে তুলুন-

গোসলের আগে ভিজে ত্বকে এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব লাগান। বডি ক্রাব বা প্যাক হিসাবে বেসন, আটা ভালো কাজ করে। এক টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে অর্ধেক লেবুর রস, হলুদ, আধা চামচ বেকিং সোডা, দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে বডিস্ক্রাব তৈরি করুন। গোসলের আগে সারা গায়ে হালকাভাবে পাঁচ মিনিট ঘষুন। প্যাক শুকনো হয়ে এলে গোসল করার সময় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের জন্য বেসনের স্ক্রাব উপকারী। এতে ত্বকের মরাকোষ ঝরে পড়বে। তারপর হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। খুব বেশি গরম পানিতে গোসল করবেন না। ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়বে। তারপর ক্রিম বা দুধ দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। ক্রিম বা দুধের প্রোটিন ত্বক মসৃণ রাখবে। ২০ মিনিট রিল্যাক্স করুন। হালকা হাতে পানি দিয়ে সারা শরীর ম্যাসাজ করুন। শুকনো তোয়ালে দিয়ে গা মুছে ফেলুন। জোরে ঘষবেন না। একটু ভিজে থাকতে থাকতে ঘন বডি লোশন লাগান।

সজীবতা ফিরিয়ে আনুন- 

ঠাণ্ডা পানি এবং ঈষদুষ্ণ পানি মিশিয়ে গোসল করলে ত্বক সজীব-উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ফোলা চোখ, পায়ে ব্যথার সমস্যার থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। প্রথমে গোসল করার আগে ভিজে গায়ে ব্রাশ দিয়ে ভালো করে ঘষুন। রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। তারপর ঈষদুষ্ণ পানিতে লেমন, অরেঞ্জ, গ্রেপ ফ্রুট অয়েল, বাথফোম দিয়ে গোসল করুন। গোসলের পর পায়ের পাতায় ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। আরাম হবে। বাথটাব থাকলে এসেনশিয়াল অয়েল মেশানো পানিতে শুয়ে থেকে পায়ের পাতা দু’টো ঠাণ্ডা পানির তলায় রাখুন। পায়ের পাতায় ঠাণ্ডা পানি ঢাললে মেটাবলিজম বুস্ট আপ হবে। শেষে বডি লোশন লাগান।

বডি স্টিম এবং ডিটক্সিফিকেশন- 

ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি শরীরের ডিপ ক্লিঞ্জিং, ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে ওয়াটার থেরাপি। বালতিতে গরম পানি রেখে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিন। পুরো বাথরুম গরম পানির ধোঁয়া ভরে উঠলে গোসল করতে ঢুকুন। ভিজে সি সল্ট দিয়ে সার্কুলার মুভমেন্টে কপাল থেকে পা পর্যন্ত স্ক্রাব করুন। তারপর ভালো করে গোসল করে নিন। শুকনো তোয়ালে দিয়ে গা মুছে নিন।

চুল বাদে বাকি অংশে মুলতানি মাটির প্যাক লাগান। তারপর তোয়ালে জড়িয়ে নিন। ২০ মিনিট রিল্যাক্স করার পর ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করে নিন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হবে। ওটমিল, মধু, দই, কমলালেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক বানিয়ে রাখুন। মাস্কটা সারা শরীরে মেখে শুয়ে থাকুন। মাস্ক শক্ত হয়ে গেলে ভিজে তোয়ালে দিয়ে তুলে ফেলুন।

হাত ও পায়ের যত্ন- 

সারাদিনের শেষে বাড়ি ফিরে এসে অল্প গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে তাতে পা ডুবিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। পা নরম, মসৃণ হবে। ফাটা গোড়ালির মরা কোষগুলো নরম হয়ে যাওয়ায় পেডিকিওরে সুবিধে হবে। সঙ্গে সারাদিনের ক্লান্তি কেটে যাবে, পায়ে ব্যথা কমবে। গরম পানির বালতিতে পা ডুবিয়ে, তারপর ঠাণ্ডা পানির বালতিতে পা ২ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এইভাবে ১৫ মিনিট পা ঠান্ডা-গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। অল্প গরম পানিতে লিক্যুইড সোপ দিয়ে হাত ভিজিয়ে রাখুন। নখ নরম হওয়ায় ম্যানিকিওরে সুবিধে হবে।

চুলের যত্নে ওয়াটার থেরাপি-

শ্যাম্পুর সঙ্গে ডিম মিশিয়ে নিন অথবা ডিমের কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে চুল ধুলে ফেলুন। পুদিনা পাতা পানিতে ফোটান ২০ মিনিট। এই মিক্সচারের সঙ্গে মাইল্ড শ্যাম্পু মিশিয়ে রোজ ব্যবহার করতে পারেন। হালকা গরম পানিতে চুল পুরো ভিজিয়ে নিন। মাথা খুব ভালো ভাবে ধোবেন যাতে স্ক্যাল্পে জমে থাকা ধুলো-ময়লা ধুয়ে যায়। হাতের তালুতে পরিমাণ মতো শ্যাম্পু নিয়ে সামান্য পানি মেশান। তারপর চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগান। দ্বিতীয়বার শ্যাম্পু করুন। শাওয়ারে ধুতে পারলে ভালো হয়। একমিনিট ধরে ঈষদুষ্ণ পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। সবসময় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধোওয়া উচিত, এটা ভুল। সবশেষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুলে চুলের নিস্তেজ ভাব কমে যায়, স্কাল্প ভালো থাকে। চুল ধোওয়ার জন্য সফট ওয়াটার ব্যবহার করুন।

ঘরোয়া উপায়ে পানির ব্যবহারঃ

– মধু ও পানি মেশানো টোনার শুষ্ক ত্বকের জন্য। মধু ত্বকের পানি ধরে রাখে। চার টেবিল চামচ মধু, আট টেবিল চামচ মিনারেল ওয়াটার মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। বেশ ঠাণ্ডা হলে তুলোয় ভিজিয়ে লাগান। রিফ্রেশিং টোনার।

-ত্বকের জেল্লাভাব ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং জরুরী। তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজিং জরুরী। স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার ভালো। গ্লিসারিন, গোলাপ পানি, লেবুর রস সমপরিমাণে নিয়ে মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। গরমে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো ময়েশ্চারাইজার। মাইল্ড ব্লিচ হিসাবেও এটা কাজ করে।

– শুষ্ক ত্বকের জন্য গ্লিসারিন, গোলাপ পানি সমপরিমাণে লাগান। ফ্রিজে অনেকদিন এই মিশ্রণটি রাখতে পারেন। এক চা-চামচ মধু, দুই চা-চামচ দই মিশিয়ে ভিজে মুখে পাঁচমিনিট লাগিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য খুব উপকারী।

– ঘরোয়া উপায়ে গোসলের পদ্ধতিতে অন্যরকম কিছু করতে চাইলে দুধের সঙ্গে ওটস মিশিয়ে সপ্তাহে তিনদিন সারাগায়ে মাখুন।

– শুষ্ক ত্বকের জন্য মধুর সঙ্গে পানি মিশিয়ে লাগান। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। মনে রাখবেন ৫-১০ মিনিটে অল্প সময়ে গোসল করলে ত্বক পরিষ্কার হয়, কিন্তু ত্বকে ভিজে ভাব থাকে না।

২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে গোসল করলে ত্বকে রিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা যায়। মানে ত্বক কুঁচকে যায়। শুষ্ক আবহাওয়ায় ভিজে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

Leave a Reply