গরুর সুস্বাদু নেহারি হবে এবার ঘরেই

নেহারি হয়তো মাঝে মধ্যে দোকান থেকে কিনে খান। কিন্তু মন ভরে খাওয়া যায় না। কোরবানির ঈদের এই উপলক্ষ্যে তাই নেহারি বানিয়ে ইচ্ছামতো খেতে থাকুন

উপকরণ

গরুর রানের নিচের অংশের মাংস আর সঙ্গে ২টা নলি, ১ কেজি। তেল ১ কাপ। আদা-রসুনবাটা দেড় টেবিল-চামচ, উঁচু উঁচু করে নিতে হবে। লালমরিচের গুঁড়া দেড় টেবিল-চামচ (কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়া বা হাট হাজারী মরিচ গুঁড়া ব্যবহার করলে ভালো হয়। তাহলে ঝাল কম হবে এবং নেহারির রংও সুন্দর হবে)। লবণ ২ চা-চামচ বা স্বাদ মতো। নেহারি মসলা ৪ টেবিল-চামচ। গরম পানি আধা কাপ। আটা ২ টেবিল-চামচ। ময়দা ২ টেবিল-চামচ।

নেহারির মসলা তৈরি: সবুজছোট এলাচ ২০টি। কালো বড় এলাচ ১০ টি। দারুচিনি ১ ইঞ্চি টুকরা ১/৪ কাপ। লবঙ্গ ২ টেবিল-চামচ। কালো গোলমরিচ ১/৪ কাপ। মৌরি/মিষ্টি জিরা ১/৪ কাপ। জয়ত্রী ১ টেবিল-চামচ। জায়ফল একটার চার ভাগের এক ভাগ। শাহীজিরা ১ চা-চামচ। মিট টেন্ডা রাইজার ২ টেবিল-চামচ (না দিলেও হবে )। পোস্তদানা ২ টেবিল-চামচ। লাল মরিচগুঁড়া উঁচু করে ২ টেবিল-চামচ। হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ। আদাগুঁড়া উঁচু করে ২ টেবিল-চামচ (প্যাকেটে কিনতে পাওয়া যায়)।

এই সবমসলা গুঁড়া করে একটি বাতাস নিরোধক বয়ামে রাখুন। এই মসলা থেকেই ৪ টেবিল-চামচ মসলা নেহারিতে দিতে হবে।

বাগাড় দেওয়ার জন্য লাগবে: ঘি বা তেল ৪ টেবিল-চামচ। পেঁয়াজকুচি ৪ টেবিল-চামচ।

পরিবেশনের জন্য লাগবে: কাঁচামরিচ-কুচি। ধনেপাতা-কুচি। আদাকুচি ও লেবু।

নেহারি রান্নার পদ্ধতি

প্রথমে একটা শুকনা তাওয়াতে ময়দা ও আটা একসঙ্গে চার, পাঁচ মিনিট টেলে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ময়দা ও আটা পুড়ে না যায় এবং রং যেন ঠিক থাকে।

ময়দা ও আটা টালা হলে এক কাপ পানিতে গুলে ফেলুন। তারপর মাংস একটু বড় টুকরা করে কেটে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে।

এখন একটা হাঁড়িতে তেল দিন। গরম তেলে আদা-রসুনবাটা দিয়ে কয়েক মিনিট ভেজে এর মধ্যে মাংস ও নলি বা গরুর পায়ের হাড় দিয়ে তিন থেকে চার মিনিট ভালো করে ভাজতে হবে।

মাংস একটু ভেজে এর মধ্যে লবণ, মরিচগুঁড়া, নেহারির মসলা ও আধা কাপ গরম পানি দিয়ে নেড়ে ভালো করে মাংস কষাতে হবে সাত থেকে আট মিনিট।

মাংস কষে তেল উপরে আসলে আট থেকে দশ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে এক থেকে দুই ঘণ্টা রান্না করতে হবে। অথবা মাংস খুব ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে নরম হয়ে যাওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।

যখন মাংস খুব ভালো ভাবে সিদ্ধ হয়ে যাবে এবং ঝোল কিছুটা কমে আসবে তখন এর মধ্যে অল্প অল্প করে পানিতে গুলে রাখা ময়দার মিশ্রণ ঢালতে হবে এবং অন্য হাতে নেহারি নাড়তে হবে। তা না হলে ময়দার মিশ্রণ ভালো করে ঝোলের সঙ্গে মিশবে না আর দানা দানা হয়ে যাবে।

এই ময়দার মিশ্রণ নেহারিকে ঘন করবে। তাই একবারে সবটুকু ঢেলে দেওয়া যাবে না। নেহারি যতটুকু ঘন চান সেই অনুযায়ী দিতে হবে।

গুলানো ময়দা দেওয়ার পর নেহারি একদুবার ফুটে উঠলে চুলার আঁচ একদম কমিয়ে, মৃদু আঁচে আরও ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রান্না করতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর নাড়তে হবে যেন হাঁড়ির তলায় লেগে না যায়।

তারপর নেহারির উপরে তেল উঠে আসলে চুলা বন্ধ করতে হবে।

একটা প্যানে ৪ টেবিল-চামচ ঘি বা তেল গরম করে তার মধ্যে পেঁয়াজকুচি দিয়ে ভাজতে হবে। পেঁয়াজ সোনালি হয়ে এলে তেলসহ পেঁয়াজভাজা নেহারিরর উপরে ঢেলে দিতে হবে।

এখন পরিবেশন পাত্রে নেহারি ঢেলে এর উপরে কাঁচামরিচ-কুচি, আদাকুচি ও ধনেপাতার কুচি ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। সঙ্গে দিতে পারেন নানরুটি, রুমালি রুটি অথবা সেঁকারুটি।

কিছু টিপস: যদি মাংস সিদ্ধ হতে হতে ঝোল বেশি কমে যায় তাহলে পরিমাণ মতো গরম পানি দেওয়া যাবে। কারণ নেহারিতে ঝোলের পরিমাণ একটু বেশি থাকে এবং ঝোল একটু ঘন হয়। নেহারি যত বেশি সময় ধরে জ্বাল দেওয়া হবে, স্বাদও তত বেশি হবে।

চাইলে প্রেসার কুকারেও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মসলা দিয়ে মাংস কষানোর পর আট থেকে দশ কাপ পানি দেওয়ার পরিবর্তে দুতিন কাপ পানি দিয়ে কুকারের ঢাকনা লাগিয়ে রান্না করুন।

মাংস যখন সিদ্ধ হয়ে যাবে তখন আবার পরিমাণ মতো গরম পানি দিয়ে রান্না করতে হবে। ঝোল ফুটে উঠলে গুলিয়ে রাখা ময়দা দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট মৃদু আঁচে রান্না করতে হবে।

Leave a Reply