তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে লেবুর কিছু ফেইসপ্যাক

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ ও দুশ্চিন্তাহীন। তার মধ্যে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লেবু। সৌন্দর্যচর্চায় লেবুর ব্যবহার আজ থেকে হয়নি। প্রাচীনকাল থেকেই এটি তাই সমাদৃত। রূপচর্চার জন্য লেবু একটি শ্রেষ্ঠতম উপাদান। লেবুর কার্যকরী ও এন্টিটক্সিন গুণাবলী ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে, ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।

লেবুর কিছু গুণাগুনঃ

* লেবুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়ায়। রোদে পোড়া ত্বক মেরামতের জন্যও লেবু অত্যন্ত কার্যকরী।

* লেবুতে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কুঞ্চন এবং দাগ দূর করে। স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বকের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব দরকারী। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ব্রণ বা অ্যাকনি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে আর ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেও এটি কার্যকরী।

* লেবুর খোসার ভেতরের অংশে ‘রুটিন’ নামের বিশেষ ফ্ল্যাভানয়েড উপাদান আছে যা শিরা এবং রক্তজালিকার প্রাচীরকে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সুরক্ষা দেয়। ফলে স্বভাবতই হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।

* অ্যারোমথেরাপির ক্ষেত্রেও লেবু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বয়সজনিত মুখের স্পট বা দাগ সারাতে লেবুর রস যথেষ্ট কার্যকরী। লেবুর রস ব্যবহারে মুখের ব্রণও দ্রুত দূর হয়।

* হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের গোড়ালির ময়লা দূর করতে লেবু অত্যন্ত কার্যকর। হাত ও পায়ের রুক্ষভাব দূর করতে প্রাচীন কাল থেকে লেবুর রস বা লেবুর খোসার ব্যবহার হয়ে আসছে।

এবার লেবুর কিছু ফেইসপ্যাক দেওয়া হলোঃ

০১. লেবুর রস ও শশার রসের ফেইসপ্যাকঃ

– সাধারণভাবে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে একটি পাত্রে সমপরিমাণ শশার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে নিন।

– এবার একটি কটন বলের সাহায্যে পুরো মুখে লাগাতে থাকুন।

– মিশ্রণটি মুখে লাগানোর সাথে সাথে যদি জ্বালা করে, তবে দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। লেবু ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে, সেক্ষেত্রে ত্বকের উপযোগী একটি ময়েশ্চারাইজার মুখে লাগিয়ে নিন।

– লেবুর রসে থাকে সাইট্রিক এসিড, যা ত্বকের তেল সম্পূর্ণ রুপে দূর করে এবং ত্বককে শুষ্ক ও উজ্জ্বল করে।

০২. লেবুর রস ও দুধের ফেইসপ্যাকঃ

ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করার ক্ষেত্রে লেবুর রস ও দুধের মিশ্রণও বেশ কার্যকরী।

– একটি বড় লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে নিন। এবার তার সাথে ১০ টেবিল চামচ তরল দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন।

– ধীরে ধীরে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন,যতক্ষন না পর্যন্ত পুরো মিশ্রণটা ত্বক না শোষণ করে। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

এই ফেইসপ্যাকের উপকারিতা হলো, লেবু ত্বকের তেল দূর করে আর দুধ ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখে। শুধু একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, আর তা হলো – এই মিশ্রণটি চোখের চারপাশে সাবধানে লাগাতে হবে।

০৩. ডিম ও লেবুর রসের ফেইসপ্যাকঃ

– একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ কমলালেবুর রস, কুসুম গরম পানি দিয়ে পেস্টের মতো করে মিশিয়ে নিন।

– এই প্রলেপটি আস্তে আস্তে ত্বকে মাখুন। ২০ মিনিট মতো রাখুন।

– শুকিয়ে যাবার পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

এই প্যাকটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

০৪. লেবুর রস ও মধুর ফেইসপ্যাকঃ

-একটি বড় লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে নিন।

– তাতে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করুন।

– মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।

– ত্বক টেনে ধরলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

মধু যখন আপনার ত্বক উজ্জ্বল করবে, লেবুর প্রাকৃতিক ব্লিচিং গুন ত্বককে করবে আরও ফর্সা।

পরিশেষে নিজেকে সুন্দর ও সুস্থ রাখুন। ত্বক পরিচর্যার সাথে সাথে সুষ্ঠ খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন। বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানসিক উৎকর্ষতা বিকাশেও সচেষ্ট হন। তাহলে পূর্নাঙ্গ সৌন্দর্য বিকশিত হবে।

Leave a Reply