আমাদের দেশে সন্তান নেয়ার আগে প্রস্তুতি গ্রহণের হার প্রায় শুন্য। আর কেবল এই কারণেই অনেক নারীরই সমস্যা হয়ে থাকে গর্ভধারণ করতে বা গর্ভ ধারণ করলেও অসুস্থ শিশুর জন্ম হয়। গর্ভধারণ করতে কি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন? বা সহজে ডেলিভারি ও একজন সুস্থ শিশুকে জন্ম দিতে চান? তাহলে সন্তান ধারণের পূর্বেই করুন এই ১০টি কাজ। এই কাজগুলো আপনার শরীরকে একটি সন্তানের জন্য প্রস্তুত করে তুলবে, সন্তানকে জন্ম দেয়ার ব্যাপারটিকে অনেক সহজ করে তুলবে এবং নিশ্চিত করবে আপনার শিশুটি যেন সুস্থ সবল ভাবেই পৃথিবীতে আসে।
১) ব্যায়াম করার অভ্যাস আমাদের দেশে খুব কম সংখ্যক নারীরই আছে। আপনার ওজন যেমনই হোক না কেন, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস করে তুলুন। এই অভ্যাস আপনার শরীরকে ঝরঝরে ও সুস্থ সবল রাখবে, আপনি থাকবেন নীরোগ, সন্তান ধারণ ও ডেলিভারিকে অনেকটাই সহজ করে দেবে।
২) খাদ্যাভ্যাসকে একেবারে শুধরে ফেলুন। ভাজা পোড়া ও অতিরিক্ত লবণ, রঙ, ফ্লেভার যুক্ত খাবার বাদ দিয়ে প্রচুর সবজি ও ফল খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এখন আপনার প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম , মিনারেল, ফলিক এসিড ইত্যাদি প্রয়োজন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনার উর্বরতা বাড়াতেও সহায়ক।
৩) ফলিক এসিড নিয়মিত গ্রহণ করুন। এই ভিটামিনটি শিশুর অনেকগুলো জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে থাকে। সবুজ শাক পাতা, টক জাতীয় ফলে প্রচুর ফলিক এসিড পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রেই ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ডাক্তারের পরামর্শে মাল্টি ভিটামিন গ্রন করতে পারেন। গর্ভধারণ করতে চাইলে আপনার দিনে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৪) ওজনের দিকে লক্ষ করুন। বেশী রোগা হলে বা বেশি মোটা হলে গর্ভধারণ করতে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। নিজেকে একটি আদর্শ ওজনে নিয়ে যাবার প্রাণপণ চেষ্টা করুন। ওজন সঠিক হলে গর্ভ ধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। সাথে বাড়বে সহজে ডেলিভারি হবার সুযোগ।
৫) খুব ভালো করে ডাক্তারি চেকাপ করান। আপনার কোন শারীরিক সমস্যা থাকলে সেটার চিকিৎসা করান, কারণ বাচ্চা পেটে আসার পর অনেক ধরণের ওষুধই আপনি আর গ্রহণ করতে পারবেন না। অন্যদিকে গর্ভধারণের পূর্বে আপনাকে কোন ভ্যাক্সিন নিতে হবে কিনা বা আরও কিছু করতে হবে কিনা সেটাও ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।
৬) দাঁতে কোন রকম সমস্যা থাকলে কনসিভ করার আগেই চিকিৎসা করিয়ে ফেলুন। কারণ গর্ভাবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা করানো যায় না।
৭) মাছ মাংস খাওয়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড সতর্ক থাকুন। খেয়াল রাখুন আপনার খাওয়া মাছ বা মাংস যেন খুব ভালো করে রান্না করা হয়। একই সাথে যেসব বড় মাছ অন্য ছোট মাছকে খায়, সেগুলো খাওয়া হতে বিরত থাকুন। কারণ এগুলোতে উচ্চ মাত্রায় মারকারি থাকতে পাড়ে, যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। তৃণভোজী ছোট মাছ খাবেন। আর ইয়া, টুনা ফিস জাতীয় মাচ খাবেন না একেবারেই!
৮) যদি সন্তান গ্রহণ করতে চান, তাহলে কনসিভ করার আগে ও পরে চা-কফি ও কোমল পানীয় পান করা ছেড়ে দিন বা একেবারেই কমিয়ে ফেলুন। গর্ভধারণের চেস্তায় রত থাকলে দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশী ক্যাফেইন গ্রহন করা একেবারেই উচিত হবে না। আপনি ১২ আউন্সের এক কাপ কফি বা ৮ আউন্সের এক কাপ চা গ্রহণ করতে পারবেন দৈনিক, এর বেশি নয়। সম্ভব ওলে ক্যাফেইন বিহীন চা কফি পান করুন বা দুধ সহযোগে পান করুন। লাল চা বা কালো কফি এই অবস্থায় ভালো নয়।
৯) ধূমপান ত্যাগ করুন অতি অবশ্যই।
১০) কোন প্রকার মাদক ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন।
এছাড়াও নিজের মনে মনে সন্তানের জন্য প্রস্তুতি নিন। সন্তানের জন্য সঞ্চয় শুরু করুন, মনে মনে সন্তানের কল্পনা করুন। এগুলো আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখবে। সন্তান গ্রহনের চেষ্টার সময় একটা মিনি হানিমুনও সেরে আসতে পারেন দুজনে। এটাও আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে।